চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিস্পত্তির শালিসি বৈঠকে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত ব্যক্তির নাম নুরুল আবচার (৫৫)। তিনি সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড নতুন পাড়া গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের নতুন পাড়া গ্রামের মো. শহীদুল ইসলাম গংয়ের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। গত ২৫ আগস্ট এই বিবাদ মীমাংসার লক্ষ্যে বাড়িতে একটি শালিসি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে ঐ এলাকার ইউপি সদস্য মো. সোহেল, সার্ভেয়ার জসীম, কামালসহ ব্যক্তিবর্গ ও বিবাদমান দু’পক্ষ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের একপর্যায়ে ইউপি সদস্যসহ অন্যান্যরা শহীদুল ইসলামের প্রতিপক্ষ নুর উদ্দিন গংয়ের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলে কাগজপত্র নিয়ে উভয়পক্ষ বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। একপর্যায়ে কাগজপত্র আনার নামে নুর উদ্দিন ঘরে গিয়ে সেখানে পূর্ব থেকে প্রস্তুত থাকা আরও ১০-১১ জন হাতে ধারালো ছোরা, কুড়ালসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে ছুটে এসেই শহীদুলের উপর আক্রমণ করে তাকে কুপিয়ে দেন।
এ সময় তাকে বাঁচাতে এলে সন্ত্রাসীরা একে একে তার চাচাত ভাই শাহারাজ শাওন (২২), ভাবী নুর বানু (২৯), চাচাতো ভাই বেলাল উদ্দিন (৩৬), নুরুল আবচার (৫৫), ভাতিজা নুরুল হুদাকে (২৬) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। আহতদের মধ্যে নুরুল আবচারের একটি হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নুরুল হুদার তিনটি আঙ্গুল চামড়ার সাথে ঝুলছে। ফলে তাদের দুইজনকে চমেকে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুরে নুরুল আবচার মারা যান।
ইউপি সদস্য মো. সোহেল বলেন, বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সেদিন শালিসি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম শহীদুল ইসলামের প্রতিপক্ষ নুর উদ্দিন, সালাউদ্দিন ও হারুনুর রশিদ গং পূর্ব থেকেই প্রতিপক্ষকে হত্যার জন্য দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ছিল।
তিনি বলেন, বৈঠকের একপর্যায়ে আমরা কাগজপত্র দেখতে চাইলে নুর উদ্দিন কাগজ আনার নাম করে ঘরে যান। অন্য একজন বাদীদের সাথে তর্কাতর্কি শুরু করে। এ সময় নুর উদ্দিন, সালাউদ্দিন, হারুনুর রশিদসহ অন্যান্যরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে নুরুল আবচারসহ বেশ কয়েকজনকে। এ ঘটনার পরদিন শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে সুনির্দিষ্ট ৮ জন ও অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
অন্যদিকে আহতদের চমেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার নুরুল আবচার মারা যান। এদিকে ঘটনাটি তদন্ত করছেন সীতাকুণ্ড থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ফারুক। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনার পর মামলা হলে আমি মামলার এক নম্বর আসামি হারুনুর রশিদ (৩৮), ৫ নম্বর আসামি ইয়াছিন (৪৩) ও ৭ নম্বর আসামি রুহুল আমিনকে (৫৭) গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করি। আদালত প্রধান আসামি ছাড়া অন্য দুই আসামিকে জামিনও দিয়েছেন। কিন্তু এখন যেহেতু একজন নিহত হয়েছেন। আমরা মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আদালতে আবেদন করব।
পূর্বকোণ/সৌমিত্র/জেইউ/পারভেজ