চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে উদ্ধার হওয়া হাত বাঁধা সেই অজ্ঞাতনামা লাশটি ছিলো এক অটোরিকশা চালকের। অটোরিকশাটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে একদল দুষ্কৃতিকারী কৌশলে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে পুলিশ গভীর অনুসন্ধান চালিয়ে সেই হত্যা রহস্য উৎঘাটন শেষে ৫ হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) ৪ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হল- নোয়াখালী সেনবাগ থানার কানকিরহাট কেশারপাড়ার মো. কামাল হোসেনের ছেলে মো. শাহাদাৎ হোসেন (২০), মিরসরাই নিজামপুর কলেজ এলাকার রবিউল হোসেনের ছেলে মো. শেখ ফরিদ (২০), চট্টগ্রাম আকবরশাহ থানার কর্নেলহাট মধ্যম জানারখিল এলাকার মৃত আব্দুল হকের ছেলে মো. তানভীর হাসান (২১), একই থানার বিশ্বকলোনী এলাকার আসাদুল ইসলামের ছেলে মো. জাহিদুল ইসলাম (২০) এবং চাঁদপুর কচুয়া থানার উজানিয়া হাজী বাড়ির মো. শরীফুল আলমের ছেলে মো. শাহীন আলম (১৭)।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ জানান, গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার বর্ণনা দিলে মঙ্গলবার তাদেরকে আদালতে তোলা হয়। সেখানে শিশু আসামি শাহীন ছাড়া অন্য সকলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে খুনের বর্ণনা দেয়। তারা আদালতে জানায়, আসামি শাহাদাতের এক চাচাতো ভাই ফরিদ তাকে একটি অটোরিকশা লাগবে বলে জানায়। এই অটোরিকশার জন্য শাহাদাত ও সাঙ্গপাঙ্গরা সোলাইমানের অটোরিকশা ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নগরীর কর্নেলহাট থেকে ভাটিয়ারী যাবে বলে সেটি ভাড়া করে তারা। এছাড়া পূর্বপরিকল্পনা মতো আরো কয়েকজন একটি কাভার্ডভ্যান নিয়ে সেটির আগে আগে আসতে থাকে। কিন্তু মহাসড়কে কোন সুবিধা করতে না পেরে তারা অটোরিকশাটিকে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া নিয়ে আসে। এখানে মধ্যরাতে সোলাইমানকে জিম্মি করে সেটি কাভার্ডভ্যানে তোলার চেষ্টা করলে বাজারের নৈশপ্রহরি কিছু সন্দেহ করে এগিয়ে আসে। এতে অটোরিকশা ফেলে দুষ্কৃতিকারীরা ঘুরিয়ে চলে যেতে থাকলে গাড়িতে থাকা আসামি ফরিদকে চিনে ফেলে সোলাইমান। সে ফরিদকে উদ্দেশ্য করে ‘আমরা একই গ্যারেজে গাড়ি রাখি’ এমনটা বললে- ফরিদসহ অন্যরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে প্রমাণ লোপের চেষ্টা করে।
ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় অন্য আসামি গ্রেপ্তার ও কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বার আউলিয়া এলাকা থেকে এক অজ্ঞাতনামা পরিচয় যুবকের হাত বাঁধা ও ঘাড় ভেঙে দেয়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু সেদিন যুবকটির পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ফলে সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র মিসিং ডায়েরিগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে চট্টগ্রামের আকবরশাহ থানায় একজন অটোরিকশা চালকের মা সাহেদা বেগম নিখোঁজ ডায়েরি করতে এসেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে সীতাকুণ্ড ওসি সেই বাদি সাহেদা বেগমকে সীতাকুণ্ডে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদকালে জানতে পারেন তার অটোরিকশা চালক ছেলে সোলাইমান নিখোঁজ রয়েছে। এতে উদ্ধারকৃত লাশটির ছবি দেখালে তিনি ও পরিবারের সদস্যরা সেই লাশটি তার ছেলে মো. সোলাইমানের (২২) বলে শনাক্ত করেন। সোলাইমান গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ থানার শোভাগঞ্জ গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। এরপর তাদের কাছ থেকে সোলাইমানের বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে পুলিশ।
এছাড়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিভিন্ন মোবাইল নম্বরের তথ্যসংগ্রহের পর পুলিশ বুঝতে পারে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। শেষে আরো গভীর অনুসন্ধানে নেমে সোমবার রাতভর গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে মোট ৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পূর্বকোণ/সৌমিত্র/জেইউ/পারভেজ