কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের দ্বিতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে পড়েছে। অর্থছাড় স্থগিত থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। বারবার মেয়াদ বাড়ালেও অর্থছাড়ে ধীরগতির কারণে কাজ হয়েছে মাত্র ৫১ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কক্সবাজারের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ (দ্বিতীয় পযার্য়ের) প্রকল্পের মধ্যে ১৯২টি আইটেম নির্মাণ করতে ১২৬ কোটি ৫১ লাখ ৭১ হাজার ৭১০ টাকা বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয় একনেকে। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে। অর্থছাড় ধীরগতির কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ক্ষমতায় আরো ১ বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু এ সময়েও শেষ হয়নি কাজ। আইটেম ও অর্থবছর ভিত্তিক ধীরলয়ে অর্থছাড় দেয়ায় বৃদ্ধি করা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাজ হয়েছে মাত্র ৫১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই পর্যন্ত আর অর্থছাড় করা হয়নি। এরইমধ্যে বেড়ে গেছে নির্মাণ সামগ্রীর কাঁচামালের বাজার দাম। ফলে পার্ক কতৃপক্ষ অবশিষ্ট আইটেম সম্পন্ন করতে প্রকল্প খরচ ১০.৭৯ শতাংশ বৃদ্ধি করে আরো ২ বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। এ আবেদন গৃহীত হলে প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে ১৬০ কোটি টাকা হবে।
এডিবির (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) বরাদ্দ থেকে ইতিমধ্যে ছাড় দেয়া প্রায় ৭০ কোটি টাকা নিয়ে প্রকল্পের প্রতিটি আইটেমের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজ শুরু করা হয়। মাত্র কয়েকটি আইটেম নির্মাণ শেষ হলেও সিংহভাগই অংশবিশেষে রয়ে গেছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পার্কটিকে যুগোপযোগী ও পর্যটকদের আরো বেশি আকৃষ্ট করতে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়। বাঘ-সিংহের এনক্লোজার, তৃণভোজীদের বেষ্টনী, যোগাযোগ, ফুটপাত, গাড়ি রাখার পার্কিংসহ ১৯২ টি আইটেমের সমন্বয়ে উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পটি তৈরি করা হয়। এই প্রকল্পের মধ্যে ইতিপূর্বে শিশুদের এমিউজমেন্ট পার্ক, স্টাফদের নিরাপত্তা টাওয়ার ৯টি, ৫ কিলোমিটার সড়ক মেরামত, জেব্রার ফিডিং স্পট, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য চত্বরের চতুর্পাশে দৃষ্টিনন্দন নিরাপত্তা দেয়াল, টিকিট কাউন্টার, মাইক্রোবাস, কার, মোটরসাইকেল ও বাসের পৃথক দুটি পার্কিং চত্বর, পিকনিক এলাকায় লেক নির্মাণসহ ১৯২টি আইটেমের মধ্যে অন্তত ২০ টি আইটেম পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট আইটেম মাঝপথে থমকে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্ধিতসহ তিন অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর বাজারদর বেড়ে যাওয়ায় পূর্বেকার চাহিদা ও বাজেটে কাজ করা সম্ভব নয়। তাই প্রকল্প খরচ ও সময় বাড়াতে নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। এতে পূর্বের বরাদ্দের চেয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়ে যাবে। নতুন চাহিদাপত্র অনুমোদন ও অর্থছাড় দিলেই প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ পুনরায় শুরু করা হবে।’
এসব উন্নয়ন কাজের সার্বক্ষণিক তদারকি করেন পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী। রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘অর্থছাড় পেলেই প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দর্শনার্থী ও পর্যটকরা আরো বেশি আকৃষ্ট হবে।’
পূর্বকোণ/পিআর