জুন-জুলাই পেরিয়ে গেলেও দেখা মিলছে না কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি। চারা রোপণের ভরা মৌসুমে ধীরগতিতে চলছে আমন ধানের চারা রোপণ। কৃষি অধিদপ্তর বলছে, পানির অভাবে চারা রোপণে ব্যাঘাত ঘটছে। বৃষ্টি হলেই পুরোদমে চারা রোপণ শুরু হবে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩৮ হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য জেলার চেয়ে চট্টগ্রামে কিছুটা দেরিতে চাষ করা হয়। আমনের বীজতলা প্রস্তুত রয়েছে। বৃষ্টি হলেও চারা রোপণ পুরোদমে শুরু হবে। না হলে চাষের পানিতে আবাদ করা হবে।
দক্ষিণ কড়লডেঙ্গা সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. ওসমান গণি বলেন, কৃষকেরা বীজতলা প্রস্তুত করেছে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় চারা রোপণ শুরু করতে পারছে না।
তিনি বলেন, বোরো আবাদে খরা ও লবণ পানির কারণে বড় মার খেয়েছে কৃষকেরা। আমনেও বীজতলা প্রস্তুত এখনো রোপণ শুরু করতে পারেনি। এভাবে প্রতি মৌসুমে মার খেলে কৃষক চাষাবাদে নিরুৎসাহিত হবে। কড়লডেঙ্গা পাহাড়ি এলাকায় সরকারিভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করলে চাষাবাদের সুযোগ পাবে কৃষকেরা।
সরেজমিন দেখা যায়, বোয়ালখালীর আমুচিয়া ইউনিয়নে কয়েক শত কানি চাষযোগ্য জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় জমিতে চাষ দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। কৃষকেরা জানান, জমি প্রস্তুত করে রেখে দেওয়া হয়েছে। পানির অভাবে চাষ করা যাচ্ছে না। কারণ আমন আবাদ হচ্ছে পুরোটায় প্রকৃতির পানিনির্ভর। বৃষ্টি হলেই প্রস্তুত করা জমিতে আবাদ শুরু করা হবে। চলতি বছর আমুচিয়া এলাকায় পতিত ও অনাবাদি জমি চাষাবাদের জন্য গভীর নলকূল স্থাপন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান কাজল দে। এই নলকূপের পানিতে বোরো মৌসুমে প্রায় ২৫ কানি পতিত জমিতে আবাদ হয়। কিন্তু বিপত্তিতে পড়ে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে। বড় অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল গুনতে হয় চেয়ারম্যান ও চাষিদের।
ইউপি চেয়ারম্যান কাজল দে বলেন, বোরো মৌসুমে এই গভীর নলকূপের পানি দিয়ে পতিত ও অনাবাদি প্রায় ২৫ কানি জমিতে চাষ করা হয়। প্রথমবার বড় সাফল্যের পর আরও অন্তত ২০ কানি চাষাবাদে আওতায় আনা যাবে। কিন্তু বড় সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিল। সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকি দিলেও আমরা এই সুবিধা পাইনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে অনাবাদি ও পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে গিয়ে বড় অঙ্কের মাশুল গুনতে হয়েছে। চেয়ারম্যান কাজল দে বলেন, এখন আমন মৌসুমেও খরার কারণে অন্তত ৫০ কানি চাষযোগ্য জমি এখনো পড়ে রয়েছে। মনে হচ্ছে, এবারও গভীর নলকূপ চালু করতে হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল কে দেবে।
পটিয়ার ধলঘাট এলাকার চাষি রতন দে বলেন, বীজতলা ও চারা রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়েছে। পানির অভাবে চারা রোপণ করা যাচ্ছে না। আমন আবাদ হচ্ছে বৃষ্টিনির্ভর। বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপণ ও থোর বের হওয়া পর্যন্ত বৃষ্টির পানিতে চাষাবাদ করা হয়। চলতি মৌসুমে চারা রোপণের ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষাবাদ এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। বৃষ্টি অপেক্ষায় প্রহর গুনচ্ছে কৃষকেরা।
বোরো মৌসুমে অতিরিক্ত তাপমাত্রা, সেচের পানিতে লবণাক্ততা ও ব্রাস্ট রোগে ধানের ক্ষতি করেছে। পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, বাঁশখালী, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনীয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা খরা আর লবণক্ততার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
পূর্বকোণ/পিআর