চট্টগ্রাম বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাহাড়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিদেশি ফল

মো. নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড়

১৮ জুলাই, ২০২৩ | ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে এখন অনেকে অধিক উৎসাহী হয়ে দেশি ফলের চেয়ে বিভিন্ন ধরনের বিদেশি ফলের চাষাবাদ করছেন। উপযোগী মাটি ও আবহাওয়ায় অধিক ফলন এবং বেশি চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় পাহাড়ে বিদেশি ফল চাষাবাদে  ঝুঁকছেন চাষিরা। বিভিন্ন দেশ ও জাতের আমই দখল করে নিয়েছে পাহাড়। ড্রাগন চাষও সম্প্রসারিত হচ্ছে। রাম্বুটান, ভিয়েতনামের বারোমাসি কাঁঠাল সুপার আর্লি জেকফ্রুট চাষও হচ্ছে।

 

তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ৪০ হাজার ছোট-বড় উদ্যোক্তা ফল চাষে যুক্ত হয়েছেন। তাদের হাত ধরে পাহাড়ি এলাকায় আম, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, আনারস, কমলাসহ ৪৪ জাতের ফল উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে সারাদেশে উৎপাদিত ফলের প্রায় ১৫ শতাংশ এখন আসে তিন পার্বত্য জেলা থেকে।

 

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত মোট ফলের প্রায় ৮১ শতাংশ ছয়টি ফল- আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, আনারস ও কমলা। এই ছয়টি ফল ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯৪ টন উৎপাদিত হয়ে থাকে। এসব ফল ছাড়াও এখন ড্রাগন, কাজুবাদাম, জলপাই, আপেল কুলসহ ৩৮টি ফল উৎপাদিত হয়।

 

২০০৪ সাল থেকে মূলত বাণিজ্যিকভাবে ফলের বাগান করা শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ফলবাগানের সংখ্যা। পাহাড়ি জমিও ফল চাষের আওতায় আসতে থাকে। ২০১৭ সালে প্রায় ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টন ফল উৎপাদিত হয়। ছয় বছরের মাথায় উৎপাদন ১৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায়  ২০ লাখ টনে। ফল চাষে জমির পরিমাণ ১ লাখ হেক্টর।

 

তিন পার্বত্য জেলায় সবচেয়ে বেশি ফল উৎপাদিত হয় বান্দরবান জেলায়। গত বছর প্রায় ৯ লাখ টন ফল উৎপাদিত হয়েছে এই জেলায়। ফল উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থান রাঙামাটির, প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টন। আর খাগড়াছড়িতে উৎপাদিত হয় প্রায় চার লাখ টন। এবছর উৎপাদনের পরিমাণ আরও বেড়েছে।

 

২০০৩-০৪ সালের দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে কালিকাপপুর মডেল প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলায় বিদেশি জাতের আম আম্রপালির চারা বিতরণ করা হয় বিনামূল্যে। বাসিন্দারা অনাবাদি টিলাভূমিতে এ আম্রপালি আমের চারা রোপণ করে দুই বছর পরই ফল পেতে শুরু করে। পরবর্তীতে পুরো পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ে আম্রপালির চাষাবাদ। পরবতীতে আম্রপালির সাথে যোগ হয় মিয়ানমারের রাঙ্গুই আম। গত ২-৩ বছরে পাহাড়ের মাটিতে ঠাঁই নেয় জাপানের বিশ্বখ্যাত মিয়াজাকিসহ বিভিন্ন জাতের বিদেশি আম।

 

খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার ভূয়াছড়ি এলাকার আমচাষি মংশিতু চৌধুরীর ছোট-বড় টিলায় প্রায় ৪২ প্রজাতির আমের চাষ করছেন। চলতি মৌসুমে তিনি অন্তত ১৫ লাখ টাকার আম বিক্রির প্রত্যাশা করছেন। প্রচলিত দেশি আমের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হয় এসব আম। চলতি মৌসুমে অন্তত ১৫ লাখ টাকার বিদেশি আম বিক্রির আশা করছেন তিনি।

 

খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ কিশোর কুমার মজুমদার জানান, খাগড়াছড়ি জেলার ভূমির গঠন ও আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য অনুকূল। উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হবে। জেলায় এবার ৩ হাজার ৭৯৩ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে।

 

বিদেশি আমের সাথে গত ক’বছর থেকে পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে আবাদ হচ্ছে আরেক বিদেশি ফল ড্রাগন। উপযুক্ত পরিচর্যা পাওয়ায় পাহাড়ি মাটিতে ড্রাগনের আশানুরূপ ফলন মিলছে।

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট