চট্টগ্রাম বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

সাতকানিয়ায় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে শতবর্ষী পুকুর ভরাট !

সৈয়দ মাহফুজ-উন নবী খোকন, সাতকানিয়া

১৫ জুলাই, ২০২৩ | ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় শতবর্ষী গোদার পুকুর প্রায় ভরাটের পথে। শতাধিক ট্রাক ফসলি জমির মাটি এনে পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে মার্কেট নির্মাণের জন্য। আইন লঙ্ঘন করে দিনদুপুরে ভরাটের কর্মযজ্ঞ চললেও উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা সহকারী কমিশনারের কার্যালয়, পৌর কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রশাসন ‘চুপচাপ’। অথচ জেলা প্রশাসকের স্পষ্ট নির্দেশনা পুকুর ফসলি জমি ভরাট বন্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী মহলের মধ্যস্থতায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পুকুরটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের জন্য নেমেছে একটি সিন্ডিকেট।

 

জানা গেছে, শতবর্ষী গোদার পুকুরটি সাতকানিয়া দেওয়ান হাট বাজার ও বাজার মসজিদের মুসল্লিরা ব্যবহার করে আসছে। আশেপাশে রয়েছে কয়েকটি ব্যাংক, বিশাল বিশাল মার্কেট, স্কুল-কলেজসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেসরকারি স্থাপনা। অগ্নিকাণ্ডে পানির অন্যতম উৎস হতে পারে এটি।

 

তবে বছর পাঁচেক ধরে পুকুরটিতে কুচুরিপানা জমিয়ে মার্কেটের ময়লা ফেলে কৌশলে ব্যবহার অনুপযোগী করে মালিকপক্ষের একটি অংশ। তখন থেকেই পুকুরটি ভরাট করে তাদের মার্কেট নির্মাণের স্বপ্ন। বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও অর্থদাতারা সরে যাওয়ায় তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এবার পুকুরটির মালিকপক্ষের একজন কবির মোহাম্মদ মহসিন বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা ভিড়িয়েছেন মার্কেট নির্মাণে। স্ট্যান্ডার্ড বিল্ডার্স নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে তিনিও পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের শরীকদার।

 

গত ১২ এপ্রিল পুকুরটি ভরাটের কার্যক্রম শুরু করে চক্রটি। শুরুতে অর্ধশত ট্রাক মাটি ফেলে পুকুরের উত্তরাংশ ভরাট করা হয়। সেসময় দৈনিক পূর্বকোণসহ স্থানীয়, জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখন উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা সহকারী কমিশনার কার্যালয় থেকে পুকুরটি ভরাটে জড়িতদের নিষেধের কথা জানানো হলেও রহস্যজনকভাবে দৃশ্যত কোন ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। এরপর প্রশাসনের রহস্যজনক এ নীরবতায় ১৯ জুন রাত ৮টা থেকে আবারও তিন শতাধিকের অধিক ট্রাক নিয়ে একযোগে মাটি ফেলে পুকুরটি ভরাটযজ্ঞ সফল করে। সে সময়ও উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা সহকারী কমিশনার কার্যালয় থেকে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

 

ইউএনওর কার্যালয়, বাসভবন থেকে কয়েকশ গজ দূরে পুকুরটি। প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে তার এ পথ ধরেই যেতে হয়। এছাড়া এসিল্যান্ডের কার্যালয় ও থানা থেকে দূরত্ব নামেমাত্র। তাদেরও নিত্যনৈমিত্য চলাফেরা এ পথ ধরেই। অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বারংবার জানালেও এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি দেখার সুযোগ হয়নি তিন মাস ধরে।

 

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পুকুরটি ভরাট হয়েছে। যদিও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত সিদ্দিকী বলছেন, ঈদের পর পুকুর ভরাটের খবর পেয়ে লোক পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ম্যানেজ করার কিছুই নেই।

 

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, অভিযোগ পেয়ে একজন পরিদর্শককে বিষয়টি তদন্তের জন্য দেয়া হয়েছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভরাটের কোন সুযোগ নেই। ভরাট করলে তাদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিজ খরচে পুনঃখনন করে দিতে হবে।

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট