চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

সেপ্টেম্বরে ট্রেন কক্সবাজার যাবে?

মিজানুর রহমান

৭ জুলাই, ২০২৩ | ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

মন জুড়ানো প্রকৃতি ছুঁয়ে বিলাসবহুল ট্রেনে চড়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার যেতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন সারাদেশের পর্যটনপ্রিয় মানুষ। নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের কাজ সম্পন্ন করে আগামী সেপ্টেম্বরেই দেশের মানুষের এই দীর্ঘ অপেক্ষার ইতি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। তবে মন্ত্রী একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও সত্যি সত্যি সেপ্টেম্বরে ট্রেন কক্সবাজার যাবে কি না- তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

এর বড় দুটি কারণ হচ্ছে- নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে এখনও ২০ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ বাকি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই পর্যন্ত রেললাইন বসাতে চাইলে কাজ চালিয়ে নিতে হবে বিরতিহীনভাবে। যদিও ঘন বর্ষার এই সময়ে কাজে বিঘ্ন ঘটার শঙ্কাই বেশি। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে ট্রেন নিতে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার প্রয়োজন। তবে এখনও শুরুই হয়নি প্রায় শতবর্ষী এই সেতুর সংস্কার কাজ।

 

রেললাইন প্রকল্পে বর্ষা নিয়ে ‘দুশ্চিন্তা’:

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেন নিতে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার ১০২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে জুন পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ২০ কিলোমিটার রেললাইনের প্রায়ই সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অংশে। প্রকল্পের অধীনে ৯টি রেলস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে কক্সবাজারের দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশনসহ ৫টির কাজ শেষ পর্যায়ে। ৪টি স্টেশনের কাজ এখনো বেশ বাকি।

 

তবে ছোট-বড় ব্রিজ, কালভার্ট, ওভারপাসসহ অন্যান্য কাজ প্রায় শেষের দিকে। সব মিলিয়ে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থে বাস্তবায়নাধীন ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে’র অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। বাকি ১৪ শতাংশ কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা না গেলেও এই সময়ে অন্তত রেললাইন বসিয়ে কক্সবাজারে ট্রেন নিতে চায় রেলওয়ে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এটিও সম্ভব হবে কিনা- তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

 

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর লক্ষ্যে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন। বিরতিহীনভাবে কাজ করা গেলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পুরো রেললাইন বসিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালুর উপযোগী করা সম্ভব হবে। তবে বর্ষায় ভারী বর্ষণ হলে পুরোদমে কাজ চালিয়ে নেওয়া কঠিন হবে। এরপরেও আমরা আশাবাদী।

 

আড়াই মাসে সেতুর সংস্কার সম্ভব?

কালুরঘাট সেতু দিয়ে এখন ১০ টন এক্সেল লোডের ট্রেন চলতে পারে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে যেসব ট্রেন চলবে তার ওজন এর চেয়ে বেশি। এই কারণে বুয়েটের পরামর্শক দলের নকশায় কালুরঘাট সেতুর সংস্কার করা হচ্ছে। ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সংস্কার কাজ করতে ম্যাক্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে রেলওয়ে। তবে মাত্র আড়াই মাসে সংস্কার কাজ পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব হবে কিনা সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

 

যদিও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো সংস্কার কাজ শেষ করা না গেলেও এই সময়ে কালুরঘাট সেতু ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হবে। তিনি পূর্বকোণকে জানান, ফেরি চালু হলে খুব দ্রুতই কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হবে। সংস্কার কাজ শেষ হলে এই সেতু দিয়ে ১৫ টন এক্সেল লোডের ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

 

তাড়াহুড়ো করা ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত:

রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরই দেশের ৪৫তম জেলা হিসেবে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার কথা কক্সবাজারের। তবে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ, ষোলশহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ সংস্কার ও ফৌজদারহাট থেকে ষোলশহর পর্যন্ত বাইপাস রেলপথ নির্মাণ ছাড়া ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

 

তিনি পূর্বকোণকে বলেন, জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু, নড়বড়ে ষোলশহর-দোহাজারী রেলপথ দিয়ে দ্রুতগতির ট্রেন চালানো হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের মতো এতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে এই জায়গায় মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল। এসব কাজ সম্পন্ন ছাড়া তাড়াহুড়ো করে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। রেলওয়ের এই সিদ্ধান্ত পর্যটকদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলবে।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন