কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ঈদুল আজহায় আড়াই হাজারের বেশি গরু-ছাগল জবাই করা হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে। এর মধ্য ২ হাজার ১০০টি গরু এবং ৬৭৮টি ছাগল।
জানা যায়, লেদা ও রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের পুরনো রোহিঙ্গাদের বাইরে থেকে গরু দেওয়া হচ্ছে না। কারণ স্বচ্ছল হওয়ায় তাদের অনেকেই নিজ উদ্যোগে পশু কিনে কোরবানি দিচ্ছেন। তবে মিয়ানমার থেকে গত আগস্টের পর পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গাদের পশু কেনার আর্থিক সক্ষমতা নেই।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আড়াই হাজারের বেশি কোরবানির পশু পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে যেসব পশু পেয়েছি, সেগুলো একত্রিত করে যেখানে, যতটা দরকার পাঠানো হয়েছে। এসব পশু জবাইয়ের পর মাঝিদের সহযোগিতায় ক্যাম্প ইনচার্জদের তত্ত্বাবধানে মাংস বণ্টন করা হবে।
টেকনাফের লেদা ক্যাম্প ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান, ক্যাম্পে সাড়ে ৫ হাজার পরিবারে প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা বাস করেন। এসব মানুষ গত বছর কোরবানির ঈদে গরুর মাংস পায়নি। এবারও তার ক্যাম্পের লোকজনের কোনো বরাদ্দ পায়নি। তবে কিছু লোকজন মিলেমিশে কোরবানির গরু কিনেছেন।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১২টি ঈদ পার করতে যাচ্ছি। আমরা মিয়ানমারে থাকা অবস্থায় ২-৩টি বড় গরু কোরবানি দিতাম। কিন্তু এখানে আসার পর সেই সুযোগ হয়নি। এবার আমরা ১০ জন মিলে একটি ছোট গরু কিনেছি। ৬টি বছর পার হচ্ছে যাচ্ছে। তবুও আমাদের কোনো কূল-কিনারা হচ্ছে না। এরপরও আমাদের আশা, অনন্ত আগামীবছর নিজ দেশে ঈদ উদযাপন করতে পারবো।
টেকনাফের জাদিমুড়া শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা বজলুল রহমান বলেন, আমার অধীনে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গার বসতি। এখানেও কোরবানির পশু পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট ঈদুল আজহার মাত্র কয়েকদিন আগে রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করে। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭ জন।
পূর্বকোণ/কাশেম/জেইউ/এএইচ