ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে চার বছরেও শেষ হয়নি চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যাদেশ অনুয়ায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুন মাসে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও পেরিয়ে গেছে চারটি বছর। এরমধ্যে গত দুইবছর ধরে কাজ ফেলে নিরুদ্দেশ রয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ উঠেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের নতুন ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় শ্রেণীকক্ষ সংকটে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীর নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষকমণ্ডলী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল অবিলম্বে নতুন ভবনের কাজ সমাপ্তপুর্বক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ সংকট লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর কক্সবাজার সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর কক্সবাজারের অধীনে চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের প্রথমতলার নির্মাণকাজ সমাপ্ত করা হয়। এরপর নতুন আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার নির্মাণকাজের জন্য ভাটিক্যাল এস্ট্রেনশন অনুমোদন দেন। বরাদ্দ দেয়া হয় ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করেন কক্সবাজারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নিশাত তানহা।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মাস্টার সিরাজউদ্দীন আহমদ বলেন, টেন্ডার কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৯-২০২০ অর্থবছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণকাজ শুরু করেন। এরপর থেমে থেমে প্রায় দুইবছর কাজ করে ভবনের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করলেও ভবনের ভেতরে বাইরের আনুষাঙ্গিক কাজগুলো ফেলে রেখে হঠাৎ করে লাপাত্তা হয়ে যান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা আক্ষেপ করে বলেন, ভবনের নির্মাণ কাজ ফেলে চলে যাবার পর আমরা ঠিকাদারকে ফোন করে অনেকবার অনুরোধ করেছি, ভবনটির কাজ সমাপ্ত করে দিতে। পাশাপাশি সেসময় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর কক্সবাজারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যারা ছিলেন সবার সহযোগিতা চেয়েছি, অনুরোধ করেছি। কিন্তু কেউই ভবনের কাজ সমাপ্ত করতে ইতিবাচক সাড়া দেননি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের অধীন চকরিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী অমিত নাথ বলেন, ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণকাজের জটিলতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে ঠিকাদারকে অফিসে ডেকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। ঠিকাদারের সঙ্গে কথা হয়েছে, আগামী মাসে ভবনের অসমাপ্ত কাজগুলো শুরু করবেন।
নির্মাণকাজে গাফিলতির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ে ভবনের দ্বিতীয় তৃতীয় ও চতুর্থ তলার নির্মাণ কাজ শেষ করেছি। বলা যাবে, প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ। তবে কিছু আনুষাঙ্গিক কাজ বাকী আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবনটির পুরো চারতলার ফ্লোরে মোজাইক লাগানোর কথা ছিল কার্যাদেশে। কিন্তু কার্যাদেশের বাইরে গিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবনের নীচতলায় টাইলস লাগিয়ে দিয়েছেন। এই অবস্থায় আমরা পুরো ভবনে মোজাইক লাগানো নিয়ে বিপাকে পড়ি। তবে, জুলাই মাস থেকে অসমাপ্ত কাজ শুরু করব।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান আরিফ বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী রয়েছেন। সেই তুলনায় পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। এই অবস্থায় পুরানো দুটি ভবনে একসঙ্গে এত পরিমাণ শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান করতে গিয়ে শিক্ষকরা হিমশিম খাচ্ছি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মৃদুময় চাকমা বলেন, ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, দ্রুতসময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের ভবনের কাজটি সমাপ্ত করতে। আশা করি, কয়েকমাসের মধ্যে আমরা ভবনটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করতে পারবো।
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ