অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখায় দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর অংশের উপকূল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সাগর গর্ভে হারিয়ে গেছে। এছাড়াও দ্বীপের গলাচিপা অংশের দুই পাশ ইরোসনের (ক্ষয়) কারণে সাগরতলে মিশে গেছে।
গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এনভায়রনমেন্টাল ওশানোগ্রাফি ও ক্লাইমেট বিভাগের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান আবু শরীফ মো. মাহবুব-ই-কিবরিয়া।
আবু শরীফ মো. মাহবুব-ই-কিবরিয়া বলেন, সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে কেন্দ্রমুখে চারদিকের বায়ু একত্রিত হতে থাকে। এতে সাগরের ওপর বায়ু প্রবাহের একটি চক্র গঠিত হয়ে ঘুরতে থাকে। সমুদ্রের উপরিভাগ থেকে ১০০ মিটার গভীর পর্যন্ত পানির মধ্যে ঝড়ের প্রভাব দেখা যায়। তবে ব্যতিক্রমও হতে পারে। এটা নির্ভর করে সাগরের ভৌত কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের ওপর।’
এই বিজ্ঞানীর মতে, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতির হিসাবটা গভীর সাগরের চেয়ে উপকূলে বেশি দেখা যায়। উপকূলের কাছের অগভীর সাগরতলে বসবাসকারী বিভিন্ন জীবের বাস্তুসংস্থান বিনষ্ট হয়। উপকূলে সেডিমেন্টেসনের মাত্রার পরিবর্তন সাধিত হয়, প্রচুর পরিমাণে সাধু পানি উপকূলের লবণাক্ত পানির সঙ্গে মিশ্রিত হয় এবং অনেক জায়গায় সেডিমেন্ট এক্রিসন ও ইরোসন হয়।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর অংশের উপকূল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সাগরে মিশে গেছে। এছাড়াও দ্বীপের গলাচিপা অংশের দুই পাশ ইরোসনের কারণে সাগরে হারিয়ে গেছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন ভূমিতে অবস্থিত ঘরবাড়ি, গৃহপালিত পশুপাখি, স্থাপনা, গাছপালা ও অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।’
ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সাগরের জীববৈচিত্র্যের ওপর কোন প্রভাব পড়েছে বা ভবিষ্যতে পড়বে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আবু শরীফ মো. মাহবুব-ই-কিবরিয়া বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সাগরের জীববৈচিত্র্যের ওপর এখনো কোনো প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যায়নি। যদিও এটি গবেষণা ছাড়া বলা ঠিক নয়। তবে অতিরিক্ত সেডিমেন্টেসনের কারণে অগভীর সমুদ্রতলের অনেক জীবের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্থানান্তরিত বা মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা বেশি রয়েছে। সমুদ্রতলের কোরাল কলোনি পলি মাটিতে চাপা পড়ে ধ্বংস হতে পারে এবং এতে কোরালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য জীবের আবাসস্থলও বিনষ্ট হয়ে যাবে।
ঘূর্ণিঝড় মোখায় সাগরের ক্ষতি হলে তার পরিমাণ কত হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখায় সাগরের ক্ষতির হিসাব করা মোটেও সহজ বিষয় নয়। ক্ষতির হিসাব কষতে হলে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। কোন কোন প্রাণী-জীব বা প্রাণীর বাস্তুসংস্থান অথবা জীবের বাস্তুসংস্থান বা কি কি উদ্ভিদের স্থান বিনষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ধ্বংস হলো, সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ ইনভেন্টরি করতে হবে। বিশাল সমুদ্র নিয়ে কাজ করতে সময়, অর্থ ও শ্রমের প্রয়োজন হবে।’
বিজ্ঞানী কিবরিয়া বলেন, ‘সাগরের তাপমাত্রা বাড়ছে বলেই সাইক্লোন, টাইফুন বা হারিকেনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের উৎপত্তি হচ্ছে। কাজেই সব কিছুর মূলে মানুষের কর্মকা- দায়ী। সম্মিলিতভাবে কাজ করে হয়তবা আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা কমাতে পারি কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হলে এত বিশাল সমুদ্রের অগণিত প্রাণীদের কীভাবে রক্ষা করা যাবে, তা আমার জানা নেই। তবে দুর্যোগ পরবর্তী মৃত প্রাণীর সৎকার করা বা আহত সামুদ্রিক প্রাণীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা কঠিন কিছু নয়।
পূর্বকোণ/পিআর