হালদা নদীতে পাহাড়ি ঢল নামলেই সমাধান হবে চট্টগ্রামের দুই সমস্যার। তার আগেই নামতে হবে মুষলধারে বৃষ্টি। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হলে এ সমস্যা সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় ডিম ছাড়েনি রুই জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাইশ) মাছ। এখন নদীতে বৃষ্টির প্রহর গুনছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। অপরদিকে হালদাতে লবণ পানি প্রবেশ করায় নগরীতে লবণাক্ত পানি সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছে ওয়াসা। বৃষ্টি না হওয়ায় গত দুই মাস ধরে এ সমস্যা চলে আসছে। সমস্যা সমাধানে সরকারি সেবা সংস্থাটি এখন চট্টগ্রাম ও রাঙামাটিতে বৃষ্টির প্রহর গুনছে।
প্রায় ৭০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। কিন্তু হালদা নদীতে সাগরের লবণ পানি প্রবেশ করায় ওয়াসার পানি উৎপাদন ব্যাহতসহ লবণ পানি পান করছেন গ্রাহকরা। কাপ্তাই লেকে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি থেকে এ সমস্যা চলে আসছে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিকভাবে পানির পরিমাণ কমে গেছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি এসে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। পানির পরিমাণ কম হওয়ায় জোয়ারের সময় সাগরের লবণাক্ত পানি নদীর অনেক ভেতরে প্রবেশ করেছে। হালদা নদীর মোহরা ও মদুনাঘাট যেখান থেকে ওয়াসা পরিশোধনের জন্য পানি সংগ্রহ করে সেখানে দ্রুত লবণ পানি চলে আসে। তাই নগরীতে ওয়াসার পানিতে লবণ পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘গতকাল মোহরা পানি শোধনাগারে ইনটেকে জোয়ারের সময় (নদীর যে জায়গা থেকে পানি উত্তোলন করা হয়) প্রতিলিটার পানিতে ২৯০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। একই অবস্থা মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারেও। এ প্রকল্পের ইনটেকে পাওয়া যাচ্ছে প্রতিলিটারে ১৮০০ মিলিগ্রাম। এ অবস্থায় দৈনিক ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হচ্ছে এ দুইটি পানি শোধনাগার। যদিও ভাটার সময় লবণের মাত্রা তুলনামূলক কম। ওয়াসা ওইসময়ে পানি উত্তোলন করে নগরীতে সরবরাহ করে থাকে।
বিশেষ করে এ দুইটি প্রকল্পে প্রতিলিটারে ৬০০ মিলিগ্রামের কম হলেই ওয়াসা পানি উত্তোলন করে। লবণের কারণে ওয়াসার পানি উৎপাদনও কমে গেছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা হালদা নদী থেকে মোহরা পানি শোধনাগার ও মদুনাঘাটস্থ শেখ রাসেল পানি শোধনাগার প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীতে দৈনিক ১৮ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে। কিন্তু লবণ থাকায় এ দুইটি প্রকল্পে গতকাল পানি উৎপাদন হয়েছে মাত্র সাড়ে ১৩ কোটি লিটার। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত ওয়াসা পানির লবণাক্ততা কমবে না এবং উৎপাদনও বাড়বে না। তাই এখন আমরা বৃষ্টির প্রহর গুনছি।’
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে আমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমায় প্রবল বর্ষণ আর মেঘের গর্জনের কোন এক মুহূর্তে হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছ স্মরণাতীতকাল থেকে ডিম ছেড়ে আসছে। এ সময় নদীতে পাহাড়ি ঢল নামে। কিন্তু এবার কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না হওয়ায় হালদায় ডিম ছাড়েনি মা মাছ।
হালদার ডিম সংগ্রহকারী ও হাটহাজারীর গড়দুয়ারা এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন সওদাগর দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘এতদিন পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় হালদায় ডিম ছাড়েনি মা মাছ। তবে গত কয়েকদিনে কিছু কিছু বৃষ্টি হলে নদীতে নামেন ডিম সংগ্রহকারীরা। গত মঙ্গলবার রাতে নদীতে নমুনা (ডিম দেওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ আছে কিনা কিছু ডিম ছেড়ে পরীক্ষা করে মা মাছ) ছাড়ে রুই জাতীয় মাছ। গতকাল বুধবার বিকেলেও আরেক দফা নমুনা পাওয়া গেছে। তবে পাহাড়ি ঢল না নামলে পুরোপুরি ডিম দিবে না মা মাছ। তাই ডিমের জন্য মুষলধারে বৃষ্টির প্রতীক্ষায় আছি।’
তবে এ মুহূর্তে আশার কথা হচ্ছে- চট্টগ্রাম ও রাঙামাটিতে কয়েকদিন ধরে কিছু কিছু বৃষ্টি হচ্ছে। এ ধারা আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রামের দুই সমস্যা দ্রুত নিরসন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা গতরাতে দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘১২ মে থেকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে রাঙামাটি জেলায় ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত এ দুই জেলায় বৃষ্টির আভাস রয়েছে।’
পূর্বকোণ/পিআর