মিয়ানমারের ডিলারের কাছে ‘মানুষ বন্ধক’ রেখে বাংলাদেশে ইয়াবা আনা এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় তার এক সহযোগীকেও ৪০ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত জাকির আহমেদ জকির (৩৯) টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাজমপাড়া এলাকার মৃত সালেহ আহমদের ছেলে। তার সহযোগী মো. ইসমাইল (৩৫) একই এলাকার নুরুল বসরের ছেলে। জকিরের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার (১৬ মে) মধ্যরাতে কক্সবাজার ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের আলমাছিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার মসজিদের সামনের রাস্তা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বুধবার (১৭ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-১৫’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী।
তিনি জানান, গত ১৫ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জসিম নামক একজন বাংলাদেশিকে মিয়ানমারের ইয়াবা ডিলারদের নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে ভুক্তভোগী জসিম নিজেই জানায়, টেকনাফ হাজম পাড়ার জকির তাকে কৌশলে মিয়ানমারের ইয়াবা ডিলারের নিকট বন্ধক রেখে ২৫ লাখ টাকার ইয়াবা নিয়ে গেছে। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করায় ইয়াবা ডিলাররা তাকে শারীরিক নির্যাতন করছে। ভিডিওটি দৃষ্টিগোচর হলে র্যাব-১৫ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধিসহ অভিযান অব্যাহত রাখে। তবে ভিডিওটি প্রকাশের পরেই সংশ্লিষ্ট মাদক কারবারীরা আত্মগোপনে চলে যায়।
এরসূত্র ধরে র্যাব জানতে পারে জকির মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে সাগর পথে মহেশখালী হয়ে চৌফলদণ্ডী ঘাটে আসবে এবং ওখান থেকে ঈদগাঁওতে ইয়াবা চালান পৌঁছে দেবে। এমন খবরে র্যাব-১৫ মঙ্গলবার মধ্যরাতে আলমাছিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার মসজিদের সামনে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে দুইজন ব্যক্তি একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নেমে কৌশলে পালানোর চেষ্টা করলে র্যাবের আভিযানিক দল তাদের গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জকির জানায়, সে টেকনাফ ও উখিয়া থানা এলাকার ইয়াবা গডফাদার এবং তার সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোককে সীমান্তবর্তী মায়ানমার এলাকায় বন্ধক রেখে ইয়াবার বড় বড় চালান নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে মামলা করে গ্রেপ্তার জকির ও তার সহযোগীকে কক্সবাজার সদর থানায় সোর্পদ করা হয়েছে।
সম্প্রতি মিয়ানমারে ‘মানুষ বন্ধক’ রেখে মাদক আনার বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা জানা গেছে। মিয়ানমার থেকে মাদক আনতে দেশের কারবারিরা সাধারণত অগ্রিম টাকা পাঠাতেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কোনঠাসা হয়ে পড়া কারবারিরা বড় বড় চালানের টাকা অগ্রিম দিতে পারছে না। তাই তারা কৌশল বদলে সমঝোতার ভিত্তিতে নিজের প্রতিনিধিকে স্বজন হিসেবে পরিচয় দিয়ে মিয়ানমারের ডিলারদের কাছে ‘বন্ধক’ রেখে আসেন। মাদকের চালানের টাকা হাতে পাওয়ার পর সেই জিম্মিকে মুক্তি দেন ডিলাররা। আর টাকা না পেলে বা দেরি হলে প্রতিনিধির ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন।
তেমনি একবন্দি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মিঠাপানির ছড়ার আবুল কাশেমের ছেলে জসিম উদ্দিন। তাকে বন্ধক রেখে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান এনে টাকা পরিশোধ না করে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে এপারের ইয়াবা কারবারিরা। এ জন্যে তার ওপর চলে নির্যাতন। পরে এ বছরের শুরুতে মিয়ানমারের বন্দিশালা থেকে মোবাইল ফোনে জসিম তার ওপর নির্যাতন চালানোর ভিডিও বাংলাদেশে স্বজনসহ বিভিন্ন মানুষের কাছে পাঠিয়ে তাকে মুক্ত করতে সহায়তা চান। সেই ভিডিও ছড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যায়, শিকলে দুই পা বাঁধা একব্যক্তির হাত দুটিও দড়ি দিয়ে পেছনে বাঁধা। বালুতে লুটিয়ে পড়া অবস্থায় দুজন রাখাইন রড-লাঠি দিয়ে তাকে বেদম পেটাচ্ছে। যাতে চিৎকার করতে না পারে, সেজন্য কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে মুখও। জসিম ছাড়াও টেকনাফ সদরের পল্লানপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আইয়ুব, বাহারছড়ার বাসিন্দা আলী হোছনসহ বেশ কয়েকজনের ওপর এমন নির্যাতনের ঘটনার কথা জানা গেছে।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ