চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

৬ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে নানামুখী উদ্যোগে বেড়েছে ফলন

রাউজানে বোরোর রেকর্ড আবাদ

জাহেদুল আলম, রাউজান

৪ মে, ২০২৩ | ৬:৫১ অপরাহ্ণ

রাউজানে বোরো মৌসুমের ধানকাটা শুরু হয়েছে। এবার বোরোর ভালো ফলনে বেশ খুশি কৃষক। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় এ বছর ৬ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা বিগত বছরগুলোর সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডের উঁচু এলাকাগুলোতে পাকা ধান কাটতে শুরু করেছে কৃষক। তুলনামূলক নিচু এলাকাগুলোতেও ধান পাকতে শুরু করেছে এবং ধীরে ধীরে কাটাও শুরু হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর এলাকার কৃষক ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ইসহাক ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ইঞ্চি জমিও খালি না রাখার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য আমি এবার ২৫ কানি জমিতে বোরোর চাষ করেছি। এখন ফলন ঘরে তুলছি। ধানও ভালো হয়েছে। আগামী আমন মৌসুমেও আমি নিজের জমি ও বর্গা জমি নিয়ে চাষ করবো। তবে কামলা (শ্রমিক)সহ চাষাবাদের বিভিন্ন উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছি।’

এদিকে উরকিরচর ইউনিয়নে বোরো ধান কাটা শুরুতে কৃষকদের মিষ্টিমুখ করান স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. কাউছার। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় গত বছর ৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল বোরোর। এবার ৬ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা বিগত বছরগুলোর সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে বলে কৃষি অফিস দাবি করেছেন। তারা জানায়, উপজেলার সবচেয়ে বড় শস্যভা-ার হলদিয়া ইউনিয়নে। এখানে প্রতি মৌসুমে জমির আবাদ হয় বেশি। পাল্লা দিয়ে রয়েছে চিকদাইর, ডাবুয়া, ৭ নম্বর রাউজান সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডও। এসব এলাকা ছাড়াও এবার পূর্বগুজরা, পশ্চিম গুজরা, বিনাজুরী, উরকিরচর, কদলপুর, গহিরা, নোয়াজিষপুর ইউনিয়নেও অনেক অনাবাদি জমি বোরো মৌসুমে আবাদের আওতায় এসেছে।’ কৃষি অফিস জানায়, স্থানীয় জাতের পাশাপাশি হাইব্রিড, তেজগোল্ড, এসএলএইচএস, আগমনী, ইস্পাহানি-৮, চমক-২, এরাইজসহ বিভিন্ন জাতের বোরো চাষ হয়েছে। উপজেলায় ৩৮-৩৯ মেট্রিক টন খাদ্য চাহিদার বিপরীতে এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার মেট্রিক টন।

উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসাইন এবার রাউজানে সর্বোচ্চ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হওয়ার বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে বলেছেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমি খালি না রাখার নির্দেশনাকে উপজেলায় বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিভিন্ন পদক্ষেপকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছে উপজেলা কৃষি অফিস। এর অংশ হিসেবে কৃষকদের ১৩০ ফুটের মধ্যে বৈদ্যুতিক লাইন, কোনপ্রকার চার্জ ছাড়াই বিনামূল্যে বৈদ্যুতিক মিটার প্রদান এবং ২৩০টি ট্রান্সফরমার ফ্রি দেওয়া হয়েছে। সেচের সুবিধার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হয় কৃষকদের। পানির সঞ্চালনের জন্য ড্রেনের পরিবর্তে পাইপ দেওয়া হয়।

বিভিন্ন খাল পুনর্খনন ও প্রশস্ত করা হয়। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপির অর্থায়নে গহিরা সর্তা খালে ড্রেন নির্মাণ করা হয়। একেবারে চাষ হয়নি- এমন জায়গায় পাওয়ার টিলার সাপোর্ট দেয়া হয়। হলদিয়া উত্তর সর্তায় খালের পানি ও খালকে কেন্দ্র করে পাড়ে এবার তিনগুণ চাষ হয়েছে। এখানে ১৪টি স্কিমে ২৪ ঘণ্টা রোস্টার করে মেশিন চালাতে দেয়া হয়। ওই আলোকে স্কিম ম্যানেজাররা মেশিন চালু করতো। এতে চিকদাইর, ডাবুয়া, হলদিয়ায় কৃষকরা খালে পানি পায় নিশ্চিন্তে। ডাবুয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমান চৌধুরী তার বাড়ির সামনে কৃষকদের জন্য বিশাল জমির সেচের সুবিধার্থে বৈদ্যুতিক মোটর বসান নিজ অর্থায়নে।’

কৃষি অফিসের কর্মকর্তা জানায়, সরকারি প্রণোদনার অংশ হিসেবে পুনর্বাসনের আওতায় প্রায় ৫ হাজার ৫শ কৃষককে এবার বিনামূল্যে ধানবীজ, সারসহ বিভিন্ন সুবিধা দেয়া হয়। জমি যেন অনাবাদি না থাকে, সেজন্য প্রতি এলাকায় জনপ্রতিনিধি, কৃষক ও গণমাণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে প্রায়শই সভা করা হয়। কৃষি কর্মকর্তা জানান, ‘ইতিমধ্যে ধানকাটা শুরু হয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে।’

পূর্বকোণ/সাফা

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট