চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছবি: শরীফ চৌধুরী

আবাদি জমিতে শিল্পায়নের থাবা

ইমরান বিন ছবুর

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ

নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় দিন দিন বদলে যাচ্ছে কর্ণফুলীর নদীর দক্ষিণ পাড়ের কর্ণফুলী উপজেলা। এক সময়ের নীরব এই জনপদ হয়ে উঠেছে শিল্পনগর। শাহ আমানত সেতু পেরিয়ে মেট্রোর চাকচিক্য ও শিল্পায়নের ফোয়ারা পৌঁছে যাচ্ছে নদীর ওপারেও। কর্ণফুলী নদীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ জনপদের বাসিন্দাদের কাছে নদীর কলকল ধ্বনি শোনা দুরূহ হয়ে পড়েছে। শিল্পায়নে ছোঁয়ায় ঢাকা পড়েছে কর্ণফুলী নদীর তীর। গড়ে ওঠছে শিল্প-কারখানা, নানা অবকাঠামো ও স্থাপনা। তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় অন্তত শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। দালান-কোঠা ও শিল্পায়নের ছোঁয়ার চাপ পড়েছে আবাদি জমিতেই। শিল্পায়নের প্রভাবে দিনদিন কমছে আবাদি জমির পরিমাণ।

 

জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে এ জনপদের দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে ১৯৮৯ সালে কর্ণফুলী নদীতে শাহ আমানত সেতু চালু হওয়ার পর। শাহ আমানত সেতু চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা অনেক সহজ হয়ে যায়। সেতু হওয়ায় পর কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় বেসরকারী উদ্যোক্তারা। কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা থেকে জুলধা ডাঙাচর- কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠে একের পর এক শিল্পকারখানা। বিশাল এলাকাজুড়ে এখন যে শিল্পায়ন, তা অধিকাংশ আবাদি ও চাষের জমিতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেছে। যত্রতত্রভাবে চলছে ঘরবাড়ি, বহুতল ভবন নির্মাণ। অপরিকল্পিত আবাসন ও শিল্পায়নের চাপে ক্রমান্বয়ে কমছে কৃষি জমি। নদী ও খাল দখল-ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠছে। কমে যাচ্ছে পুকুর- ডোবাসহ নানা জলাধার। যার ফলে জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কায় রয়েছেন বাসিন্দারা। পরিবেশবিদ অভিমত, আগামী কয়েক বছর পর কৃষি জমি বা জলাশয় অনেকাংশে হারিয়ে যাবে।

 

কর্ণফুলীর তীরের এক জনপদ জুলধা ইউনিয়ন। পাখি ডাকা-ছায়া ঢাকা সবুজে ঘেরা এক জনপদ। সবজি চাষের জন্য নামডাক রয়েছে জুলধার ডাঙারচর এলাকা। এখন নদী ও খাল দখল করে ঢুকছে উন্নয়ন। গড়ে ওঠছে শিল্প-কারখানা। চাষাবাদের কথা ভুলে যাচ্ছেন এই এলাকার মানুষেরা।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কৃষি জমি বিক্রি হচ্ছে ব্যাপক হারে। দূর দূরান্ত থেকে মাটি দিয়ে নির্বিচারে ভরাট করা হচ্ছে জলাভূমিসহ জমি। দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে জমির চেহারা। অনেক জমি কেনার পর বাউন্ডারি করে রাখা হয়েছে। যেকোন সময় এসব জমি চলে যাবে অন্য খাতে। কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়ন এক সময় কৃষি প্রধান অর্থনীতি থাকলেও এখন পুরো ইউনিয়ন অর্থনীতি শিল্পপ্রধান হিসেবে পরিণত হয়েছে। এই ইউনিয়নে জমির দাম বেড়েছে ৫০ গুণের বেশি। আশপাশের ইউনিয়ন ভূমির চিত্র ঠিক একই রকমের।

 

১৪টি মৌজার প্রায় ১২ গ্রামসহ ৫৫ দশমিক ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে কর্ণফুলী উপজেলার পথ চলা শুরু হয় ২০১৬ সালের ৯ মে। ফসলি জমি ৩ হাজার ৮৬২ হেক্টর। এক ফসলি জমি ১ হাজার ২২৮ হেক্টর। দুই ফসলি জমি ৬১২ হেক্টর এবং তিন ফসলি জমি ৪৭০ হেক্টর। অনাবাদি জমির ১ হাজার ৫৫২ হেক্টর।

 

উপজেলায় শিল্পায়নের ফলে পরিবেশদূষণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা ও আবাসন নির্মাণ করায় নানা বর্জ্য মিশে দূষিত করছে মাটি, পানি ও বায়ু। অবৈধ ইটভাটার কারণে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ যেমন বাড়ছে তেমনিভাবে কমছে গাছের সংখ্যা। সামগ্রিকভাবে এ উপজেলার পরিবেশদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

 

এদিকে অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি নির্মাণ, কলকারখানা, রাস্তাঘাট, ইটভাটা তৈরিসহ আবাদি জমি নষ্টের দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদ- এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে জমি সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

 

কৃষিবিদ মো. হাসানুজ্জামান বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিতভাবে আবাসন, শিল্প কারখানা, রাস্তাঘাট, পুকুর খননসহ নানা কারণে প্রতি বছরই কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। ভূমিদস্যুদের কাছে এসব আইন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা অসহায়।

 

জলাধার, বন, পাহাড় রক্ষায় আইন ও নীতিমালা থাকলেও সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবে এর তোয়াক্কা করছেন না কেউ। দ্রুত ভূমি রক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ না করলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

 

ভুক্তভোগীরা জানান, কর্ণফুলীতে ব্যবসায়ী ভূমি আইন উপেক্ষা করে কৃষিজমিতে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা ও আবাসন নির্মাণ করছেন। আর এসব  কারণে পাশের নিচু জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। এতে অনেকেই চাষ না করে জমি ফেলে রাখছেন।

 

কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, কর্ণফুলীতে এমনিতেই কৃষি জমির পরিমাণ কম। তার ওপর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনার কারণে প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে কৃষি জমির পরিমাণ।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন