মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে আনোয়ারার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে আমি বন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম এবং বন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং এলাকা থেকে এম এন এ প্রার্থী এম.এ আজিজ এবং এমপি প্রার্থী ইসহাক মিয়ার সমর্থনে সহপাঠী ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করি। পরবর্তী আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবহিকতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর সহপাঠীদের সংগঠিত করে বন্দরের নিমতলা এলাকায় সশস্ত্র ট্রেনিং শুরু করি। ট্রেনিং কমান্ডার ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সুবেদার মোহাম্মদ ইসহাক।
উত্তাল মার্চে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসে বাঁধা প্রদান কর্মসূচিতে আওয়ামীলীগ নেতা এম এ হান্নানের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করি। হানাদার বাহিনী চট্টগ্রাম শহর দখল করে নিলে প্রথমে বাসায় আত্মগোপন করি এবং গোপনে নেতা – কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করি। এমনই পরিস্থিতিতে মে মাসে সশস্ত্র ট্রেনিং – এর জন্য ভারত যাবার প্রস্তুতি নিয়ে কয়েকজন বন্ধুর সাথে কে.সি.দে রোড বাস স্টেশনে আসি। কিন্তু ততক্ষণে বাস স্টেশনে পৌঁছে যান আমার পিতা। ভয়ে বাস থেকে নেমে পুনরায় বাসায় ফিরে যাই। ভারতে যেতে না পারলেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলি শহরের কমান্ডার মৌলভী সৈয়দ আহমদের সাথে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, এরইমধ্যে গেরিলা কমান্ডার শহীদ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে দলবলসহ চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করেন। আমি তার গ্রুপে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু জিন্নাহ শহীদ হলে দলের অন্যান্য যোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে গ্রামের বাড়ি আনোয়ারার গহিরাতে ফিরে যাই। জুলাই মাসের শেষের দিকে আনোয়ারায় স্থানীয় কমান্ডার কাজী আবদুল হকের সাথে যোগাযোগ করি। তারই সহযোগিতায় চন্দনাইশের কমান্ডার শাহজাহান ইসলামাবাদীর সাথে দেখা করি এবং তার গ্রুপে যোগ দিই।
ঐ সময় চানখালী নদী হয়ে দক্ষিণে চাঁদপুর গোডাউনে খাদ্যবাহী নৌকা নিয়ে রাজাকার- মিলিশিয়ারা যাতায়াত করত। একদিন শহর থেকে কয়েকটি নৌকায় করে চানপুর গোডাউনে চাউল নিয়ে যাচ্ছিল কয়েকজন মিলিশিয়া ও রাজাকার। ঘটনাটি কমান্ডার শাহজাহান ইসলামাবাদী জানতে পারলে তিনি আমাকেসহ একদল মুক্তিযোদ্ধাকে নির্দেশ দেন নৌকায় হামলা চালাতে। তার নেতৃত্বে সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধারা বরকল ঘাটে গিয়ে ওঁৎপেতে থাকেন। এক পর্যায়ে নৌকাগুলো আসতে দেখে গুলি চালালে কয়েকজন হতাহত হয়। এই অপারেশনে বেশ কয়টি রাইফেল হস্তগত করেন।
এরপর দ্বিতীয়বার আনোয়রা থানা অপারেশন, পটিয়া থানা অপারেশন, পটিয়ার খরণাসহ নানা অপারেশনে অংশগ্রহণ করি। সর্বশেষ ১৪ ডিসেম্বর মেরিন একাডেমি অপারেশনে অংশগ্রহণ করি। সেদিন ফজলুল কাদের চৌধুরী সপরিবারে নৌকাযোগে বার্মা পালিয়ে যাওয়ার সময় মেরিন একাডেমির নিকটে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। ঐদিন আনোয়ারা থানা শত্রুমুক্ত হয়ে যায়। ২ দিন পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদাররা সারেন্ডার করলে দেশ শত্রুমুক্ত হয়ে যায়। দেশ শত্রুমুক্ত হবার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাজী আবদুল হকের নেতৃত্বে গ্রুপের অন্যরাসহ অস্ত্র জমা দিই।
পূর্বকোণ/আর