একই দিনে তিনজনকে অপহরণ করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির নেপথ্যে ছিলেন সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুল। মুক্তিপণ দিতে রাজী না হলে তিনজনকে মেরে ফেলার জন্য অনুসারীদের মুঠোফোন নির্দেশ দেন সাইফুল। অপহরণের ঘটনায় সাইফুলের ভাই ফাহিমও জড়িত ছিল। অপহরণের শিকার তিনজন হলেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের পুরোহিত কাজল দে প্রকাশ কেশব মিত্র দাস (৪৩), সেবক রুবেল রুদ্র (৪২) ও বায়েজিদ থানার হিলভিউ এলাকার বাসিন্দা সমির দাস (৪৫)।
তিন সহোদর সুবজ-সাইফুল-ফাহিম। কথায় কথায় মানুষকে মারধর, অপহরণ কিংবা কোপানো যেন তাদের নিত্যদিনের কাজ। ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে নানা অপরাধে জড়ানোর কারণে দুই ভাইকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হলেও তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড কিন্তু থেমে নেই। নগরের ষোলশহর থেকে বায়েজিদ অক্সিজেন পর্যন্ত ছড়িয়েছে সাইফুলের আধিপত্য। পুলিশও যেন অসহায় সাইফুলের কাছে। তিন সহোদরের মধ্যে সাইফুলের বিরুদ্ধে ২৮, সবুজের বিরুদ্ধে ৩৩ ও ফাহিমের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে।
অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় গত রবিবার বায়েজিদ থানায় মামলা দায়ের করেন রুবেল রুদ্র। মামলায় আটজনকে এজাহারভুক্ত ও ১৫/২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার চারজন ছাড়া পলাতক চারজন হলেন সাইফুলের ছোট ভাই ফাহিম, সহযোগী সাজ্জাদ হোসেন টিংকু, মো. মিঠু ও করম আলী।
রুবেল রুদ্র বলেন, হিলভিউ এক নম্বর সড়কের ডি-ব্লকে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে লন্ড্রি দোকান শুরু করেন। ২৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে দশটায় সাইফুলের ভাই ফাহিমসহ ১৫/২০ জনের একদল যুবক এসে রুবেলকে দোকান থেকে বের করে একটি নির্মাণাধীন ভবনের চারতলায় নিয়ে আটকে রাখে। তারা বলেন, মুক্তি পেতে হলে সাইফুল ও বার্মা সবুজকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। টাকা দিতে অপারগতা জানালে তারা রুবেলকে মারধর করে। রুবেল তার কাছে থাকা ২৫০০ টাকা অপহরণকারীদের দিয়ে দেয়। এরমধ্যে দুপুরের দিকে সমীর দাশকেও তার দোকান থেকে তুলে নিয়ে আসে তাদের সহযোগীরা।
রুবেল আরও বলেন, সমীরের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা দাবি করে। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে সমীরের পরিচিত কেশব মিত্রকেও নিয়ে আসে তারা। এক পর্যায়ে তারা তিনজনের চোখ, মুখ ও হাত বেঁধে ফেলে। এরমধ্যে অপহরণকারীরা মুঠোফোনে সাইফুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সাইফুলের সঙ্গে কথা বলার পর তারা তিনজনকে একটি ট্যাক্সিতে তুলে পলিটেকনিক মোড়ের শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের পিছনে বাগানের ভেতর নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটকও করা হয়।
ওই ঘটনায় গত রবিবার সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের উপ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) রইছ উদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তার চারজনই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বার্মা সাইফুলের সহযোগী ছিল। বার্মা সাইফুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আসামি হয়ে তারা প্রকাশ্যে: গত ১১ অক্টোবর অনুসারীদের নিয়ে বায়েজিদ থানা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশকে পিটিয়ে আহত করে সাইফুল ও তার অনুসারীরা। সাইফুল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নগর শাখার সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক ও সবুজ পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিল। ১২ অক্টোবরের সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন দুই ভাইকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই ঘটনায় বায়েজিদ থানার এস আই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে সাইফুল, সবুজ ও ফাহিমসহ ৬০ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাজ্জাদ হোসেন টিংকু আর বাছিরকেও আসামি করা হয়েছিল।
যাদেরকে তিনজন অপহরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। মামলার আসামি হয়ে বিগত আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে সাইফুল অনুসারীদের নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাকে গ্রেপ্তার করেনি। অভিযোগ রয়েছে সাইফুলের সঙ্গে স্থানীয় থানার ওসি নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। গত রবিবার রাত দেড়টায় সাইফুল তার নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেন ‘সেদিন ওসি সাহেব ফোন দিয়ে বললেন, কয়েকজন স্থানীয় ছেলেকে রাতে পুলিশের টহল টিমের সাথে দিতে হবে সহযোগিতার জন্য।’
জানতে চাইলে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান জানান, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর মামলার আসামি সাইফুলের ভাই সবুজকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। সাইফুল ওই মামলার পলাতক আসামি।
পূর্বকোণ/ইব