সারাদেশজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছে। তীব্র শীতে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। কয়েক দিনের টানা শৈত্যপ্রবাহ আর ঘনকুয়াশায় চরম বেকায়দায় পড়েছে দরিদ্র পরিবারের মানুষগুলো। কনকনে শীতে হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, দুস্থ, ভবঘুরে, অভাবী, প্রতিবন্ধী, বিভিন্ন রোগাক্রান্ত মানুষ ও পথশিশুদের দুঃখ-কষ্টের সীমা নেই। অর্থের অভাবে অনেকেই শীতের গরম কাপড় কিনতে পারছেন না। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র এবং টাকা না থাকায় তারা চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি মহৎ কাজে সমাজে বসবাসরত প্রত্যেক শ্রেণী, পেশা ও ধর্মের মানুষ আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে এলেই এই পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে বাধ্য।
কারণ, আমাদের দেওয়া একটি গরম কাপড় হতে পারে হতদরিদ্র মানুষগুলোর জন্য একরাশ উষ্ণতা। একটু সু-চিন্তা, সু-নজর কারো জন্য বেঁচে থাকার অবলম্বন। কেননা সমাজের সংগতিসম্পন্ন ও সচ্ছল মানুষের ঘরে বছর ঘুরে শীতকাল ঋতু হিসেবে আনন্দ ও খুশির বার্তাবহ হলেও দেশের বৃহত্তর জনজীবনে শীত নৈরাশ্য ও বেদনার ধূসর বার্তাবাহক মাত্র। সামর্থ্যবান মানুষ শীতবস্ত্র ব্যবহার করে পরিত্রাণ পেলেও হতদরিদ্র লোকেরা শীতবস্ত্রের অভাবে সীমাহীন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। প্রত্যেক বছর শীত আসলে দেখা যায় সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সুবিধাবঞ্চিত মানুষজনের পোহাতে হয় শীতজনিত নানা রোগ-বালায় ও জটিলতা। বিশেষ করে দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চল থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ তীব্র শীতের প্রকোপে কাবু হয়ে পড়ে।
পত্র-পত্রিকার সংবাদে আমরা এ-ও জানি, শীতজনিত রোগে মারা যায় অনেক শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ। শীতকালীন ভাইরাসজনিত সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, রক্ত আমাশয়, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, মেনিনজাইটিস প্রভৃতি রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা জানি, আল্লাহর ইচ্ছায় প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই ঋতুর পালাবদল ঘটে। প্রকৃতির আচরণ মানুষের অসহায়ত্বকে আরও তীব্র করে তোলে। হাড়কাঁপানো এই শীতেও অনেককে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে দেখা যায়। ছিন্নমূল অসহায় মানুষগুলো খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত মোকাবিলার প্রয়াস চালাতেও দেখা যায়। এমতাবস্থায় শীতার্ত মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো খুবই জরুরি।
কারণ হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশায় নির্মমভাবে বিপর্যস্ত মানুষের জীবনে শৈত্যপ্রবাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য অসহায় দরিদ্র মানুষের প্রয়োজন অনেক অনেক শীতবস্ত্রের। এই সময়ে আমাদের একটি অব্যবহৃত শীতবস্ত্র যদি একজন দুস্থ শীতার্তের গায়ে জড়িয়ে দেই, তাহলে এটাই হবে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে দেওয়া আমাদের উত্তম উপহারের একটি। কারণ মহান সৃষ্টিকর্তা যে প্রতিটি বঞ্চিত মানুষের অন্তরেও বিরাজমান। হাড়কাঁপানো শীতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বর্ণনাতীত দুঃখ-কষ্টে এবং অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাপন করছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো ধর্মপ্রাণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। মানবিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা ছাড়াও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অভাবী মানুষের শীতবস্ত্রের অভাব মোচনে সরকারি-সেবরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিত্তবান মানুষ, ছাত্র-শিক্ষক, সংগঠন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
সমাজের বিত্তবান মানুষ, ব্যবসায়ী, সংগঠন, সামাজিক বা স্বেচ্ছাসেবামূলক সংস্থা ইচ্ছা করলে তাদের নিজ নিজ এলাকার শীতার্ত অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে পারে। যারা মানুষের দুঃখ-কষ্টে, অভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাদের পরকালীন পুরস্কার সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। (আবু দাউদ শরিফ)
তাই শীতার্ত হতদরিদ্র মানুষের প্রতি সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের সাহায্য ও সহানুভূতির হাত স¤প্রসারিত করে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ, শীতবস্ত্র দান করে তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো দরকার। কারণ নিঃস্বার্থভাবে শীতার্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করাই মানবতার সেবা। তাই আসুন, আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য ছিন্নমূল শীতার্ত এবং নানান শ্রেণীর সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সাহায্যার্থে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানবতার হাত স¤প্রসারিত করি।
লেখক: প্রাবন্ধিক, পরিবেশ-মানবাধিকারকর্মী।
পূর্বকোণ/ইব