পতেঙ্গায় মেরিন ফিশারিজ সার্ভিল্যান্স চেকপোস্টে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের সরকারি রেস্ট হাউস দখল করে রাখার অভিযোগ ওঠেছে মাহাবুব রহমান তানভীর নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কোনো ভাড়া পরিশোধ না করে প্রায় একবছর ধরে রেস্ট হাউসের দুটি রুম দখল করে আছেন তিনি। বর্তমানে রেস্ট হাউসের এই ‘অতিথি’ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন দপ্তরের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, মাহাবুব রহমান তানভীর মৎস্য দপ্তরের নির্মাণাধীন একটি প্রকল্পের কাজ তদারকি করতে ঠিকাদারের পক্ষ হয়ে ‘দু’একদিনের’ জন্য সরকারি এই রেস্ট হাউসে ওঠেছিলেন। এরপর আরও একটি রুম দখল করে নেন এবং পরিবারের সদস্যদেরও সেখানে নিয়ে আসেন। এ সময়ের মধ্যে রেস্ট হাউজের জন্য নির্ধারিত কোনো ভাড়াও পরিশোধ করেননি তিনি। ভাড়া চাইতে গেলে মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের হুমকি দেন। মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, কয়েক বছর আগে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে রেস্ট হাউসটি চালু হয়। বছর দুয়েক আগে তৃতীয় ও চতুর্থ তলার নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে মৎস্য দপ্তর। নুরজাহান কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজের দায়িত্ব পায়। গত বছরের জানুয়ারিতে এর কাজ শুরু হয়। এরপর ঠিকাদারের প্রতিনিধি তানভীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধ করে দু’একদিনের জন্য রেস্ট হাউজের ২০৮ নম্বর রুমে ওঠেন।
এরপর সপ্তাহ যায়, মাস যায় কিন্তু তিনি কিছুতেই রেস্ট হাউজ ছাড়েন না এবং রুমের ভাড়াও দেন না। শুরুতে একা থাকলেও কিছুদিন পর পরিবারের সদস্যদেরও নিয়ে আসেন তিনি। এরপর মালামাল রাখার জন্য ২০৪ নম্বর রুমও দখল করে নেন। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার তাকে মৌখিকভাবে রেস্ট হাউজ ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তাতে কোনো কর্ণপাত করেননি তিনি। সর্বশেষ গত ৫ মার্চ সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর, চট্টগ্রামের পরিচালক মো. আবদুস সাত্তার তাকে ১৪ মার্চের মধ্যে রেস্ট হাউজের সকল ভাড়া পরিশোধ করে রুম দুটি ছেড়ে দেয়ার জন্য লিখিত নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এতেও কোন লাভ হয়নি। তিনি পরিবার নিয়ে গেস্ট হাউসে আয়েশি জীবন পার করছেন।
এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে তৎকালীন পরিচালক ড. মো. শরীফ উদ্দীনকে অনুরোধ করে তিনি রেস্ট হাউসের ওঠেছিলেন। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে তিনি অবসরে গেলে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান জিল্লুর রহমান। এরপর তিনিও রেস্ট হাউজ ছাড়ার জন্য তাকে বেশ কয়েকবার মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি পরিচালক হিসেবে যোগদান করা মো. আবদুস সাত্তারও তাকে লিখিত নোটিশ দেন। নোটিশে কয়েক মাস অবস্থানের কথা উল্লেখ করা হলেও কখন থেকে তিনি রেস্ট হাউজ দখল করে আছেন সেটার নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ নেই। নিয়ম অনুযায়ী অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ছাড়া বাইরের কেউ রেস্ট হাউসে অবস্থান করলে প্রতিদিন ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। সে হিসেবে দুই রুমে গত একবছরে কয়েক লক্ষ টাকা ভাড়া পাওনা রয়ে গেছে ঐ ব্যক্তির কাছে।
গত সপ্তাহে রেস্ট হাউসে গিয়ে তানভীরকে পাওয়া না গেলেও তার পরিবারের সদস্যদের সেখানে থাকতে দেখা যায়। দপ্তরের নিয়োজিত প্রহরী মো. কালাম বলেন, ব্যক্তিগত কাজে তানভীর এ মুহূর্তে বাইরে আছেন। তিনি আরও বলেন, ‘গত প্রায় একবছর ধরে দ্বিতীয় তলায় বসবাস করে আসছেন মাহাবুব রহমান তানভীর। প্রথম দিনে একাই ছিলেন, এখন স্ত্রীর সাথে মাকেও নিয়ে এসেছেন। অফিস থেকে দেয়া নোটিশটি তার কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি সেটা গ্রহণ করেননি।’
এ ব্যাপারে জানতে গত বুধবার মুঠোফোনে তানভীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
মৎস্য দপ্তরের পরিচালক মো. আবদুস সাত্তার বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর বিষয়টি জানতে পেরে রেস্ট হাউস ছাড়তে ওই ব্যক্তিকে লিখিত নির্দেশ দিয়েছি। তারপরও তিনি রেস্ট হাউজ ছাড়েননি। ভাড়া আদায় ও তাকে উচ্ছেদের জন্য আমাদের প্রক্রিয়া চলমান আছে।
তবে অধিদপ্তরের অন্য এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেস্ট হাউস ছাড়ার কথা বললেই তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে চান এবং বিভিন্নভাবে কর্মকর্তাদের হুমকি দেন।
পূর্বকোণ/এসি