চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

হাজার বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখে এই নগরীকে গড়ে তুলতে হবে

২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১২:৪৭ অপরাহ্ণ

হাজার বছরের ঐতিহ্য বহনকারী শহর চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের সীতাকু-ের পাহাড়ি এলাকায় প্রস্তরযুগের নমুনা পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রিক ও মিশরীয় ভৌগলিকদের বর্ণনায়ও চট্টগ্রামের উল্লেখ আছে। ৯৫৩ সালে আরাকানের চন্দ্রবংশীয় রাজা বাংলা অভিযানে আসলে সীতাকু-ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। চন্দ্র বংশ ও পাল বংশের রাজত্বের পর ১৩৩৮ সালে সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ চট্টগ্রাম বিজয় করেন। ১৩৪৬ সালে মুর পরিব্রাজক ইবনে বতুতা চট্টগ্রাম আসেন। পনের শতকে চীনা পরিব্রাজকরা আসেন।

১৪৯২ সালে সুলতান হোসেন শাহ বাংলার সুলতান হন। ১৫১৭ সাল থেকে পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে আসতে শুরু করে। ১৫৩৭ সালে তারা চট্টগ্রামে বাণিজ্যকুঠি নির্মাণ করে। ১৫৮১ সাল থেকে ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সম্পূর্ণভাবে আরাকান রাজাদের অধীনে শাসিত হয়। ১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম মোগলদের হস্তগত হয়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার পরাজয়ের পর চট্টগ্রাম ইংরেজদের অধীনে চলে যায়।

 

১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হলে বাংলা পাকিস্তানের অধীনে যায়। অবশেষে ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রাম। এ চট্টগ্রামই বাংলাদেশের একটি প্রাণ চাঞ্চল্যময় শহর, একটি আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর, একটি সমৃদ্ধ জেলা, একটি মানসম্মত বিভাগ। এই ইতিহাস উল্লেখ করার কারণ হলো- হাজার বছরের ঐতিহ্য বহনকারী শহর চট্টগ্রাম। এরকম একটি অঞ্চলকে আরও উন্নত করা যেতো এবং সেটাই এখন সময়ের দাবি।

 

বর্তমানে এই চট্টগ্রাম শহর আমরা কেমন দেখতে চাই? সংক্ষেপে বলতে পারি- আমরা গাছপালায় ঢাকা, প্রশস্ত রাস্তা, শব্দ ও বায়ুদূষণহীন মনোরম পরিবেশ, যানজটমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত আবাসিক বা বাণিজ্যিক এলাকা, জীবনের নিরাপত্তা সম্বলিত চট্টগ্রাম শহরকে কল্পনা করি। যা আছে; কিন্তু পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও বিয়োজন করা প্রয়োজন। নাগরিক সুবিধা কম। পরিকল্পিতভাবে এসব সমস্যা সমাধান করতে পারলে ঐতিহ্য ধরে রেখে সত্যিকারের বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত হবে চট্টগ্রাম।

অপরিকল্পিত বাসস্থান ও বসবাস : চলাচলের অপরিসর রাস্তা। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ায় হাউজিং সোসাইটি বা হাউজিং সোসাইটিতে ইন্ডাস্ট্রি অথবা মার্কেট গড়ে তোলা।

 

অপরিচ্ছন্নতা : নাগরিকদের অসচেতনতা। দিনে ময়লার গাড়ি ব্যবহার। ফুটপাত ও রাস্তায় হকারদের বাণিজ্য।

যাতায়াত সমস্যা : যানবাহন স্টেশন ও পার্কিং সুবিধা নেই। সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠা-নামা করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাসের ব্যবস্থা করা। চাক্তাই খাল ও বড় ড্রেনগুলোকে ছোট নৌকার মাধ্যমে যাতায়াত ও পরিবহন কাজে ব্যবহার করা।

 

জলাবদ্ধতার কারণ : ড্রেন ও খালে ময়লা ফেলা। ড্রেন ও খাল দখল। পলিথিনের ব্যবহার।

 

বিনোদন : বিনোদনের জায়গা পর্যাপ্ত নয়। শিশুদেরসহ সকল শ্রেণির মানুষের বিনোদনের জায়গা বাড়ানো।
স্বাস্থ্য- হাসপাতাল : সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত সেবা ও সুবিধা নেই বলে বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে জনসাধারণকে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়। সেবা প্রদানকারী একই ব্যক্তি কয়েকটি ক্লিনিকে সেবা দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন বা ভুল করছেন। খাবারের দোকানগুলোকে আরও পরিচ্ছন্ন ও মানসম্মত করতে হবে। যত্রতত্র মাদকপ্রাপ্তি রোধ করতে হবে।

 

বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ : ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে হাউজিং সোসাইটি না রাখা অথবা হাউজিং সোসাইটিতে ইন্ডাস্ট্রি না রাখা। গাড়ির হর্ন, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক সভা-সেমিনার ইত্যাদির জন্য মাইকের ব্যবহার সীমিত এবং নি¤œ আওয়াজের জন্য বাইরে সাউন্ড সিস্টেম না রাখার ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

নারীবান্ধব : এখনও আমরা নারীবান্ধব হয়ে উঠতে পারিনি। রাস্তায়, যানবাহনে, মার্কেটে, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নারীবান্ধব মানসিকতা সৃষ্টি করা দরকার।

শিক্ষা : সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বল্পতার কারণে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। কিন্ত মেধাবী ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অপ্রতুলতার জন্য মান সমান নয়। অন্যদিকে, জনসাধারণকে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়। আবার ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশীয় সংস্কৃতির বাইরে অন্য পরিবেশ থাকে; যা সমীচিন নয় এবং এত বেশি ফি নেয়া হয় বলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিকভাবে উচ্চশ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়ছে।

প্রবীণদের সুবিধা : প্রবীণদের সুবিধা নেই বললেই চলে। প্রবীনদের জন্য থাকতে পারে আলাদা পার্ক বা শরীরচর্চা কেন্দ্র, মানসম্মত হাসপাতাল, ব্যাংকে আলাদা কাউন্টার, যানবাহন ও আলাদা টিকিট প্রাপ্তির ব্যবস্থা ইত্যাদি। আর তাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শহরকে বিকেন্দ্রীকরণ।

লেখক : সদস্য, বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি, প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ওমরগনি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট