আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে নৌকা প্রতীক না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারপরও মন্ত্রী-এমপিদের পছন্দের প্রার্থী নিয়ে চাপের শঙ্কায় ছিলেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর সেই চাপ ও শঙ্কামুক্ত হয়ে নতুন করে শক্তি ফিরে পেয়েছেন বলে জানান সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, ‘মন্ত্রী-এমপি বা পুলিশের চাপ সাধারণ মানুষের চাপে উড়ে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী উন্মুক্ত করে রাজনীতিবিদদের বড় সুযোগ করে দিয়েছেন। অবহেলিত বোয়ালখালীর পরিকল্পিত উন্নয়ন, নির্যাতিত-নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের ভাগ্যোয়ন্ননে নির্বাচন করবো।’ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দলের মধ্যে বিভেদ তীব্র আকার ধারণ করে। নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে এই বিভেদ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন উপজেলায় দ্বন্দ্ব-সংঘাত সহিংসতায় রূপ নেয়। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কায় ছিলেন নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পছন্দের প্রার্থী নিয়ে চাপের শঙ্কায় ছিলেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। উপজেলা নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হওয়ার পর থেকেই সেই শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন অনেকেই।
গতকাল আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শেষে কথা হয় সম্ভাব্য পাঁচ প্রার্থীর সঙ্গে। তাদের মধ্যে তিন জন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদ সদস্যের সঙ্গে তাদের মুখ দেখাদেখি নেই। নির্বাচনে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের শঙ্কায় ছিলেন। এখন সেই শঙ্কা কাটিয়ে পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানালেন তারা।
দলীয় সূত্র জানায়, বিগত উপজেলা নির্বাচনগুলোতে সংসদ সদস্যদের প্রচ্ছন্ন হস্তক্ষেপ ছিল। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের জেতানোর জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও জয়লাভ করেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই সংসদ সদস্য ও দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। আর পরাজিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের মাঠে কাজ করা সম্ভাব্য প্রার্থীরা চাপের শঙ্কায় ছিলেন।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এই কথাটি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি। উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কতটুকু কাজ করেছেন, কারা করতে পারেননি, সেটাও যাচাই-বাছাই হয়ে যাবে। জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা, সেটা দেখব।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো রকম সংঘাত চাই না। যিনি এর সঙ্গে জড়িত থাকবেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এবার চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৪ মে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণের ঘোষণা দেয় ইসি। এরপর ১১ মে দ্বিতীয়, ১৮ মে তৃতীয় ও ২৫ মে চতুর্থ ধাপে উপজেলা পরিষদের ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীদের তোড়জোড় বেড়ে যায়। প্রতি উপজেলায় আওয়ামী লীগের অন্তত ১০-১২ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচনও উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এতে প্রতিযোগিতা ও অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়বে।’
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই এখন শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড়। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা মধ্যে ১৪ উপজেলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। এসব উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
উপজেলা থেকে সংসদে তিন চেয়ারম্যান
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ছয় উপজেলার চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। তারা হলেন, ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, সীতাকু- উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন, পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব, চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর জব্বার। বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মো. গালিব। তম্মধ্যে বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মো. গালিব শেষতক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।
পদত্যাগ করা ছয় চেয়ারম্যানের মধ্যে তিন জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারা হলেন, পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সীতাকু-ের এসএম আল মামুন, সাতকানিয়ার এম এ মোতালেব। এসব উপজেলায় নতুন মেরুকরণের আভাস দিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।
পূর্বকোণ/পিআর