চট্টগ্রাম সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চক্ষু বিশেষজ্ঞ নেই ১৩ উপজেলায়

ইমাম হোসাইন রাজু

৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতার চিকিৎসা নিতে ফটিকছড়ি থেকে নগরীর পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে আসেন পঞ্চাশোর্ধ্ব আইয়ুব আলী। অথচ এ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই রয়েছে চোখের চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র ‘কমিউনিটি ভিশন সেন্টার’। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যার উদ্বোধন করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেন্টার থাকলেও আইয়ুব আলীর দাবি- ‘তাতে বিশেষজ্ঞ কোন চক্ষু চিকিৎসক নেই। যার কারণে তিনি এত দূর পাড়ি দিয়ে এসেছেন নগরে।’

 

শুধু ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্ষেত্রে এ চিত্র নয়। চট্টগ্রামের সব’কটি উপজেলাতে চক্ষু চিকিৎসায় নেই কোন বিশেষজ্ঞ। ভিশন সেন্টার থাকলেও তাতে শুধুমাত্র চশমা আর প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া কোন সেবা নেই বললেই চলে। বেসরকারিভাবেও গ্রাম পর্যায়ের চক্ষু চিকিৎসাসেবার পরিসর খুবই নাজুক অবস্থা। যার জন্য চোখের সামান্য ত্রুটিতেও রোগীরা ছুটে আসেন নগরীতে। তাতে রোগীদের বাড়তি খরচের পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতেও।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রামে ১৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও তারমধ্যে শুধুমাত্র ১০টি উপজেলায় একজন করে মাত্র ১০ জন চক্ষু রোগের জুনিয়র কনসালটেন্ট বা বিশেষজ্ঞের পদ রয়েছেন। বাকি পাঁচটি উপজেলাতে কোন পদই নেই। বাস্তবতা হচ্ছে- এ দশ উপজেলার মধ্যে সীতাকু- ও পটিয়া উপজেলায় কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন চিকিৎসক। বাকি ১৩ উপজেলাতেই নেই কোন চক্ষু বিশেষজ্ঞ।

 

কমিউনিটি পর্যায়ে চক্ষু চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘কমিউনিটি ভিশন সেন্টার’ নামে দেশের ৪৫ উপজেলায় কমিউনিটি ভিশন সেন্টার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, হাটহাজারী, আনোয়ারা, রাউজান ও চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘ভিশন সেন্টার’ চালু করা হয়।

 

পটিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ বলেন, ‘চক্ষু বিশেষজ্ঞ না থাকলেও প্রাথমিকভাবে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে রোগীদের সেবা প্রদান করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালের একজন নার্স রোগীদের ওষুধপত্রগুলো লিখে দেন। ৩ টাকায় চিকিৎসা পেয়ে রোগীরাও খুব খুশি।’

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অস্ত্রোপচার তো দূরের কথা, চোখের ছানি পড়া, দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতাসহ নানা জটিল রোগের চিকিৎসা গ্রাম পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নেই। উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতাল থাকলেও তাতে কোন বিশেষজ্ঞ নেই কিংবা অস্ত্রোপচার। উপজেলা হাসপাতালের ভিশন সেন্টারে যে কজন রোগী চোখের সমস্যা নিয়ে যান, তাতে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে অন্যত্র থেকে শুধুমাত্র পরামর্শ নিয়েই ফিরেন। কিছু ওষুধ আর চোখের ড্রপ ছাড়া তেমন কিছুই মিলে না। অন্যদিকে, বেসরকারিভাবে গুটি কয়েক হাসপাতালে চিকিৎসক মিলে বন্ধের দিনে। জটিলতায় পড়া রোগীদের জরুরি চিকিৎসা নিতে হলে আসতে হয় শহরের বিশেষায়িত হাসপাতালে কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।

 

চট্টগ্রাম জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ওয়াজেদ চৌধুরী অভি বলেন, ‘চোখ সম্পূর্ণ স্পর্শকাতর একটি অঙ্গ। এ অঙ্গে খুবই সতর্কতার সাথে চিকিৎসা প্রদান করতে হয়। বাস্তব সত্য হচ্ছে- গ্রামাঞ্চলে চোখে চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে তেমন বিশেষজ্ঞ নেই বললেই চলে। এ সুযোগে কিছু অসাধু কয়েক মাসের ট্রেনিং নিয়ে এসে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে গ্রামেই চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা শুধুমাত্র ওষুধ আর চশমা বিক্রির জন্য উপযোগী। অনেক সময় এরাই চোখের অস্ত্রোপচারের মতো কাজ চালাচ্ছেন। যার কারণে মারাত্মক চোখের ক্ষতি হচ্ছে রোগীদের। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ভিশন সেন্টার থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার নেই। বেসরকারিভাবেও তেমন উন্নতি নেই। ফলে রোগীরা শহরের দিকে চলে আসেন।’

 

আন্তর্জাতিক চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ট্রাস্টের ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন বলেন, ‘সরকারিভাবে প্রতিটি স্তরেই কাজ হচ্ছে এটি সত্য। কাগজে বৃহৎ পরিকল্পনাও নেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে খুবই নাজুক। সরকারিভাবে যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক সবই আছে, কিন্তু সদিচ্ছার অভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। বেসরকারি হাসপাতাল যদি সুন্দরভাবে চলতে পারে, সরকারি হাসপাতালগুলো কেন চলতে পারে না? যন্ত্র পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কোন জবাবদিহিতা নেই। যার জন্য এমন অবস্থা। শুধু চোখের চিকিৎসার ক্ষেত্রেই নয়, সব চিকিৎসার বিষয়ে নজর দেয়া খুবই প্রয়োজন। চোখের সাধারণ চিকিৎসাও যদি গ্রামে করা যেতো, তাহলে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত চাপ নিতে হতো না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়া উচিত।’

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট