চট্টগ্রাম সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

প্রাইভেসি সুরক্ষা ও নিরাপদ ডিজিটাল কানেক্টিভিটি

অনলাইন ডেস্ক

৩ আগস্ট, ২০২৩ | ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের এক দম্পতি বিভিন্ন মানুষের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতেন। এরপর ভুক্তভোগীদের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দেবেন বলে ব্ল্যাকমেইল করে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করতেন। সাইবার অপরাধ কিভাবে মানুষের ক্ষতি করতে পারে এবং নিরাপদ ডিজিটাল কানেক্টিভিটি কেন জরুরি হয়ে পড়েছে, এটি হচ্ছে তারই একটি উদাহরণ।

আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, এক তরুণী রাতে একটি কল রিসিভ করেন। অপর পাশে থাকা মানুষটি মোবাইল ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউট থেকে ফোন করেছেন বলে দাবি করেন। ওই ব্যক্তি জানান, তরুণীর অ্যাকাউন্টে একটি ত্রুটি দেখা দিয়েছে, যা খুব দ্রুত ঠিক করতে হবে। অ্যাকাউন্টের ত্রুটি ঠিক করতে ওই তরুণীকে একটি নম্বরে বেশ কিছু টাকাও পাঠাতে বলেন তিনি। টাকা না পাঠালে অ্যাকাউন্টটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ওই পাশে থাকা মানুষটি তাগাদা দিতে থাকেন।

ওই তরুণী টাকা পাঠাবেন বলে ভাবছিলেন, তবে সাইবার অপরাধ বিষয়ে তাঁর ধারণা থাকায় শেষ পর্যন্ত আর টাকা পাঠাননি। ওই পাশের মানুষটির তাগাদা অগ্রাহ্য করে ফোন কেটে দেন ওই তরুণী। পরে কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হন যে এটি স্প্যাম কল ছিল।
দ্বিতীয় উদাহরণটিতে দেখা যাচ্ছে, ওই তরুণী সাইবার ক্রাইমের ভোগান্তি এড়িয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট বিচক্ষণ।

যাই হোক, এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে দেখা যায়, মানুষ সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়ে আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ ই-গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-গভ সিআইআরটি) ও সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দেশে উল্লেখযোগ্য হারে সাইবার অপরাধ বেড়ে চলেছে। সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা, স্মিশিং, ফিশিং, ম্যালওয়্যার আক্রমণ বা যেকোনো ধরনের অপব্যবহার হোক না কেন, বড় পরিসরে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই সাইবার ক্রাইম।

নাগরিকদের টার্গেট করা ইন্টারনেটের নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো দেখলেই এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। ব্যক্তিগত প্রাইভেসির অপর্যাপ্ত সুরক্ষাই আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এটা বোঝা খুব বেশি কঠিন নয়।

আজকের এই সংযুক্ত বিশ্বে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সাইবার প্রাইভেসি মূলত ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। ব্যক্তিগত তথ্য ও সংবেদনশীল ডাটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সাইবার হুমকি ও ক্ষতিকর ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিরাপত্তার দেয়াল গড়ে তোলে সাইবার প্রাইভেসি। শক্তিশালী সাইবার প্রাইভেসি নিশ্চিত না করা গেলে এবং নিজের জায়গায় সচেতন না হলে নিরাপত্তা, আর্থিক সুরক্ষা ও সামগ্রিক ডিজিটাল অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে সাইবার ক্রাইমের ভুক্তভোগী হতে পারেন যে কেউ।

তবে মানুষের প্রাইভেসির যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের নীতিনির্ধারক, কর্তৃপক্ষ এবং এই খাতের নেতৃস্থানীয়রা একটি বাস্তব সমাধান নিয়ে আসার জন্য একযোগে আলোচনা করছেন। এই কাজ একার পক্ষে করা সম্ভব না। উন্নত প্রাইভেসি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকার বেশ কিছু নতুন আইন নিয়ে এসেছে এবং একই সঙ্গে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও নিত্যনতুন ফিচার নিয়ে আসছে।

স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের দ্রুতগতিতে সাইবার প্রাইভেসি সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তি খাতে কারো একার নিজস্ব আইনকানুন তা নিশ্চিত করতে সক্ষম নয়। প্রযুক্তি যতই আধুনিক হোক না কেন, মানুষ যথার্থভাবে ব্যবহার না করলে তা কোনো কাজেই আসবে না। এমনকি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও কোনো একজন ক্ষতিকর মানুষের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা পুরো সমাজের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে। সামগ্রিক সমাধান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি একটি বিষয় মাত্র।

আধুনিক বাংলাদেশি হিসেবে আমরা যারা প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করছি, তারা কি আসলেই বলতে পারব, প্রাইভেসির নিরাপত্তা কিভাবে যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হয়! প্রয়োজনের সময় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ফিচারগুলো আমরা কি পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছি? যখন আমাদের প্রাইভেসি লঙ্ঘিত হয়, তখন কি আমরা আমাদের দেশের আইনি সুরক্ষার আওতার মধ্যে থাকা আইনকানুন যথাযথভাবে ব্যবহার করি? একটি নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যদি প্রযুক্তিগত সমাধান প্রথম পদক্ষেপ হয়, তবে এগুলো হচ্ছে দ্বিতীয় বা তৃতীয় পদক্ষেপ! স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাত্রা করতে হলে এগুলো আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আলোচনা করতে হবে এবং আমাদের চিন্তাও পরিশীলিত করতে হবে। সৌজন্য: কালের কণ্ঠ

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট