
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এটি যেমন মানুষের ভাবনার আদান-প্রদানের একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, তেমনি এটি হয়ে উঠেছে আত্মপ্রকাশ ও বিনোদনের এক নতুন ক্ষেত্র। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই প্ল্যাটফর্মেই দিনে দিনে বাড়ছে অশ্লীলতা, কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট আর সামাজিক অনৈতিকতার চর্চা। ভিউ, লাইক, ফলোয়ার বা ভাইরাল হওয়ার আশায় অনেকেই এখন মূল্যবোধ, শালীনতা আর নৈতিকতা বিসর্জন দিচ্ছেন। যার ফলে ফেসবুকের মতো শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠছে সামাজিক অবক্ষয়ের হাতিয়ার।
একটা সময় ছিল, যখন কেউ কিছু পোস্ট করলেই তা দিয়ে তার চিন্তা-চেতনার পরিচয় মিলতো। কিন্তু এখন অনেকেই কনটেন্ট তৈরি করছেন শুধুমাত্র ‘ভিউ’ পাওয়ার জন্য। যেন এটাই হয়ে উঠেছে জীবনের একমাত্র লক্ষ। অর্ধনগ্ন ভিডিও, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, ভুয়া প্রেম-ভাঙন নাটক কিংবা আপত্তিকর প্র্যাংক এসবই যেন নিয়মিত রুটিনে পরিণত হয়েছে কিছু তথাকথিত ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’-এর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব কনটেন্টে দেখা যায় হাজার হাজার লাইক, শেয়ার, কমেন্ট। সমাজের নানা স্তরের মানুষ বিশেষত তরুণ প্রজন্ম এসব দেখছে, শিখছে এবং অনুকরণ করছে। ফলে তৈরি হচ্ছে এক ভয়াবহ সামাজিক ও মানসিক সংকট। এই সমস্যা শুধু কিছু ব্যক্তি বা কনটেন্ট নির্মাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর দায়ভার সমাজ ও দর্শককেও নিতে হবে। কারণ দর্শকই এসব কনটেন্টকে ভাইরাল করে তোলে। দর্শকদের অসংযমী কৌতূহল, অপ্রয়োজনীয় বিনোদনের তৃষ্ণা এবং দায়িত্বহীনতার কারণেই এসব অশ্লীল কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমরা যারা ‘দর্শক’, তারা যদি এসব কনটেন্ট এড়িয়ে চলতাম, প্রতিবাদ করতাম বা রিপোর্ট করতাম, তাহলে এমন অবস্থা হতো না।
এখন সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। ফেসবুকে আমরা যারা সক্রিয়, আমাদের দায়িত্ব এসব কনটেন্টের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, প্রতিবাদ জানানো এবং সুন্দর-শালীন কনটেন্টকে উৎসাহ দেওয়া। সরকার, সামাজিক সংগঠন, এবং পরিবারকেও একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রয়োজন ফেসবুক কর্তৃপক্ষেরও কঠোর মনিটরিং ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের। ভিউ নয়, গঠনমূলক চিন্তা হোক আমাদের লক্ষ।
পূর্বকোণ/ইবনুর