আমরা একটা বিষয়ে বোঝাপড়ার অসুবিধা হচ্ছে, একটু সাহায্য করতে পারেন?
প্রথমত, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যে শারীরিক সম্পর্ক হয়, সেটি কি প্রেমিকার সম্মতিতে হয় না? হলে ধর্ষণ হচ্ছে কিভাবে? প্রলোভনে পড়া মানেও তো এক ধরনের সম্মতি, নাকি? এ দেশের নারীরা কি প্রেমিকের সঙ্গে স্বেচ্ছায় মিলিত হন না? বিবাহবহির্ভূত যৌনতা কি প্রেমিক একাই উপভোগ করে?
দ্বিতীয়ত, এই একবিংশ শতকে এসে মেয়েদের বিয়ে হতে কি এতই অসুবিধা যে বিয়ের প্রলোভনে পড়তে হয়? আচ্ছা, মানছি যোগ্য পাত্রের ক্ষেত্রে কোনো নারী বিয়ের প্রলোভনে পড়তে পারেন। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আছে। এক্ষেত্রে বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা নৈতিকভাবে অন্যায় হতে পারে, তার জন্য কি পূর্বের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক ধর্ষণ হয়ে যাবে? তাছাড়া, বিয়ের প্রতিশ্রুতি সব সময় ছেলেরাই ভঙ্গ করে তাই বা ধরে নিচ্ছি কেন? কোনো ছেলেও তো কোনো মেয়ের প্রলোভনে পড়তে পারে এবং সেই মেয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক করে পরে বিয়ে নাও করতে পারে। অনেক প্রেমের সম্পর্ক মেয়েরাও ভেঙে দেয়; দেয় না? সেক্ষেত্রে প্রেমের মিলনকে ছেলেরাও কি ধর্ষণ হিসেবে দেখিয়ে মেয়েদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে?
তবে প্রেমের সম্পর্কে ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে পারে, এমনকি বৈবাহিক সম্পর্কেও। ধর্ষণ তো ধর্ষণই, প্রেমিক বা স্বামী বলে ছাড় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ কিভাবে সম্ভব?
আজ দেখলাম, বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড বিধান করা হয়েছে। যদি বিষয়টি ধর্ষণই হয়, তাহলে সাজা কম হবে কেন? আর যদি ধর্ষণ না হয়, তাহলে সাজা হবে কেন? most importantly, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ—কোর্ট প্রমাণ করবে কি করে? ধরুণ, শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার এক বছর পর ব্রেকআপ হলো, তখন? এমন তো না সর্বক্ষেত্রে বিবাহবহির্ভূত অন্তঃসত্ত্বা নারীরাই এই আইনের সাপোর্ট নেবেন!
হ্যাঁ, আমাদের সমাজে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে কোনো নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার পর প্রেমিক পুরুষ বিয়ে না করলে নারীর জন্য সারভাইভ করা কঠিন, এক্ষেত্রে আইনি সমাধান থাকা উচিত। সেক্ষেত্রে মামলা কি ”বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ”র মামলা হবে? সেটি কি ঐ নারীর জন্য সম্মানজনক হবে?
আমি যতটুকু বুঝি, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী প্রলোভনে পড়ে বা কিছু প্রাপ্তির আশায় যৌনকর্মে লিপ্ত হতে পারেন, এটা তার চয়েস, জোর-জবরদস্তির বিষয় না। কিন্তু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পুরুষ যদি প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করেন, তাহলে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের মামলা হতে পারে, ধর্ষণের না। যৌনকর্মীও তার প্রাপ্য অর্থ বুঝে না পেলে মামলা করতে পারবে, মানে পারা উচিত, কিন্তু সেই মামলা ধর্ষণের না। ধর্ষণ আরো বড়ো অপরাধ। ধর্ষণের মতো অপরাধের লাইট ভার্সন তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই, মানে থাকা উচিত না।
সাংবাদিক মোজাফ্ফর হোসেনের ফেসবুক থেকে নেওয়া
পূর্বকোণ/এএইচ