সম্প্রতি ভারত থেকে ডিম আমদানি নিয়ে বিতর্ক চলছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২ লাখ ৩১ হাজার ৪০ পিস মুরগির ডিম আমদানি করা হয়। ভারতীয় একটি ট্রাকে এই প্রথম বেনাপোল বন্দর দিয়ে ডিমের চালান আসে। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে আগামী দুই মাসের মধ্যে আরও ৪৭ লাখ ডিম আমদানি করা হবে বলে জানা গেছে। তবে আমদানির পরও দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। উল্টো সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ডিমের দাম।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর উৎপাদক, পাইকারি ও ভোক্তা তথা খুচরা পর্যায়ে ডিম, সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তারপরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। । ডিমের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যাকেও দায়ী করা হচ্ছে। ওই অঞ্চলে প্রচুর ডিম হত। সেখানে বন্যা হওয়ায় উৎপাদন কমেছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের তথ্যমতে, দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৪ কোটি আর উৎপাদন সাড়ে চার কোটি। সেহিসেবে ভারত থেকে আমদানিকৃত ২ লাখ ৩১ হাজার ৪০ পিস ডিম সাগরে একফোঁটা জল পড়ার মতো। তাছাড়া এসব ডিমের একেকটার ওজন ৫০ থেকে ৫৩ গ্রাম, যেখানে দেশি ডিমের ওজন ৬৫ গ্রাম। প্রশ্র উঠেছে, তবু আমদানি কেন?
বাংলাদেশে খামারিদের সমিতি বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন-বিপিএ ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ার ঘোর বিরোধী। এরই মধ্যে খামারিদের একটি সংগঠন ডিম আমদানির বিরোধিতা করে কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে, খাবার ও বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না নিয়ে আমদানিতে গেলে কোনো লাভ হবে না, উল্টো দেশের ক্ষতি। বুধবার বিপিএ এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলছে, ‘ডিমের উৎপাদন খরচ না কমিয়ে ডিম আমদানি করে প্রান্তিক খামারিদের ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে। দেশে চাহিদার চেয়ে ডিমের উৎপাদন দিনে ৫০ লাখ বেশি জানিয়ে সমিতি বলেছে, তাই আমদানির প্রশ্নই আসে না। আমদানির সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত প্রান্তিক খামারিদেরকে লসের মুখে ফেলবে। আস্তে আস্তে দেশীয় খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।’ বাজারে মূল্য বৃদ্ধির জন্য কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন অনেকে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কথাও বলা হচ্ছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেপ্টেম্বরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের পছন্দমাফিক চারটি কোম্পানিকে ভারত থেকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারত থেকে ৬২ হাজার ডিমের একটি চালান আসে। তখন বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন বলেছিল, দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন সত্ত্বেও (প্রতিদিন সাড়ে কোটি) সরকার একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে এই ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। সরকার দলীয় সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কারণে পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চার দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। ফলে মুরগি ও ডিমের দাম কমছে না।
এদিকে এ ডিম আমদানি নিয়ে বাংলাদেশকে অনেকটা কটাক্ষ করেই সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যম। ‘ইলিশ বন্ধ, তো’ ভারত থেকে যাওয়া আড়াই লাখ ডিম পাতে পড়বে বাংলাদেশে!- এমন শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন পূজার উপহার হিসেবে আসত পদ্মার ইলিশ। কিন্তু এবার ইউনূস সরকার সেই প্রথা ভেঙে জানিয়ে দিয়েছে যে, এবার আর বাংলায় (পশ্চিমবঙ্গে) ইলিশ পাঠনো হবে না। ইলিশ বন্ধ, তো? ভারত থেকে এবার আড়াই লাখ ডিম পাতে পড়ছে বাংলাদেশের।
গুণমানের বিষয়ে ঘটনাচক্রে ভারত থেকে পাঠানো ডিমের ওপর বাংলাদেশকে ‘অন্ধের মতো ভরসা করতে হবে’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে জি নিউজের প্রতিবেদনে। কারণ হিসেবে বেনাপোলের প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা ডা. বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে,তাদের ডিম পরীক্ষার কোনো যন্ত্রপাতিই নেই। ভারতের চুক্তির ওপর ভিত্তি করে ডিমের ছাড়পত্র দেয়া হবে। খালি চোখে কোনও সমস্য দেখা দিলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
এছাড়া “ভারতের ডিমেই পুষ্টি বাংলাদেশের! ইলিশ না দিলেও ডিমের ‘আগুন’ দাম ঠেকাতে ভরসা ইন্ডিয়া” শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে আরেক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় এ গণমাধ্যমটি বলেছে, ইলিশ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ভারত থেকে কিন্তু লাখ-লাখ ডিম পাতে পড়ছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের ডিম আমদানি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি পশ্চিমবঙ্গের বহুল প্রচারিত সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারও। ‘একটি ডিম কিনতে হতো ১৬ টাকায়! ভারত থেকে গাড়ি বাংলাদেশে যেতেই অর্ধেক দামে ‘মধ্যবিত্তের প্রোটিন’- শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে তারা।
তারা লিখেছে, “বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলেও স্থিতিশীল নয় সে দেশের বাজারদর। নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর সঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে মুরগির ডিমের দাম। সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ‘সস্তার প্রোটিন’। বাংলাদেশে একটি ডিম কিনতে হচ্ছিল ১৫-১৬ টাকায়। আড়তদাররা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় যোগান কম বলে এই অবস্থা। তবে ভারত থেকে পড়শি দেশে (বাংলাদেশ) দু’লাখ ৩১ হাজার ৪০টি (১৩ হাজার ৯১০ কেজি) মুরগির ডিম রপ্তানি হতেই এক লাফে নামল সেই দাম”।
ডিম নিয়ে ভারতীয় এসব গণমাধ্যম কটাক্ষ করলেও দেশটির মাছ ব্যবসায়ীরা দুর্গাপূজার আগে ইলিশ চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। ইলিশ রপ্তানির কথা উল্লেখ করে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে আবেদন করেছে ভারতের ফিস ইমপোর্টার’স এসোসিয়েশন।
এদিকে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে বছরে অতিরিক্ত ৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ পোলট্রি এসোসিয়েশন’র (বিপিএ)। সংগঠনটির ভাষ্য, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা, অনেকেই খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে একচেটিয়াভাবে ডিম ও মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এক কেজি ফিডের দাম ৪০-৫০ টাকা, একটি মুরগির বাচ্চার দাম ২৫-৩৫ টাকা। সেখানে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ৫ টাকা। আর এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ৭৬-৮৬ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে এক কেজি ফিডের দাম ৬০-৭২ টাকা, একটি মুরগির বাচ্চার দাম ৬০-১০০ টাকা, প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ দশমিক ২৯ টাকা, এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৫৫-১৭০ টাকা, আর এক কেজি সোনালি মুরগির উৎপাদন খরচ ২৪০-২৬০ টাকা। ফলে বর্তমান বাজারে উৎপাদন খরচের বিপরীতে প্রতি কেজি মুরগিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে অনুমোদন না থাকা উপকরণ ভারতের পোল্ট্রি শিল্পে ব্যবহারের কারণে সে দেশের ফিডের দাম কমার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের ফিড উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রথমত: ভারতের পোল্ট্রি ফিডে সস্তা প্রোটিন হিসেবে কসাইখানার শুকনো বর্জ্য (মানুষের খাওয়ার অযোগ্য মাংস, অন্ত্র, মাথা) এবং হারের গুড়া (এমবিএম) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত: প্রাণীর রোগ প্রতিরোধের জন্য ফিডের সাথে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রমোটার (এজিপি) মিশিয়ে দেওয়া। ফলে খাদ্যে কম প্রোটিন থাকলেও তা বৃদ্ধি ও উৎপাদনে সহায়তা করে। তৃতীয়ত: ভারত নিজস্ব চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদন করায় সে দেশের মিলগুলো কমদামে ভুট্টা ব্যবহার করতে পারে। স্থানীয় চাষিরাও আন্তর্জাতিক বাজার দরে ভুট্টা বিক্রি করায় কখনো কখনো তা ভারতের বাজার দামের চেয়েও বেশি হয়ে থাকে। এতে ফিড উৎপাদন খরচ ভারতের তুলনায় বেশি হয়।
অপরদিকে, বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন বলছে, দেশে বছরে ফিডের চাহিদা ১ কোটি ২০ লাখ টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৮০-৮৭ লাখ টন। আমরা যদি প্রতি কেজিতে সর্বনিম্ন ৫ টাকা বেশি ধরে হিসাব করি তাহলে প্রতি টনে ৫ হাজার টাকা হয়। আর ৮০ লাখ টনে বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে ফিড সিন্ডিকেট। আর এর খেসারত দিচ্ছেন ভোক্তা ও প্রান্তিক খামারিরা।’
ইন্টিগ্রেটেড ডেইরি রিসার্চ নেটওয়ার্ক (আইডিআরএন) বলছে, গত এক বছরেই দেশে প্রাণীর খাবারের দাম বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। যেখানে বিশ্বে বেড়েছে ২০.৬ শতাংশ। কয়েক বছর বিবেচনায় নিলে দেশে এখন প্রাণী খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। দেশে বর্তমানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিবন্ধিত ফিডমিলের সংখ্যা ২৯৪টি। এর মধ্যে মাত্র ডজনখানেক ফিডমিলের দখলে প্রাণী খাদ্যের বাজার। এসব কারখানার সিন্ডিকেটে বন্ধ হয়ে গেছে ছোট ছোট অনেক ফিডমিল। ২০১৯ সালের শেষ দিকে দেশে প্রান্তিক খামারের সংখ্যা ছিল দুই লাখ পাঁচ হাজার। গত তিন বছরে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৪৫ হাজার খামার। দেশের মোট মুরগির মাংসের ৯৫ ভাগ সরবরাহ করে এইসব প্রান্তিক খামার। ডিমের ৮৫ ভাগ আসছে প্রান্তিক খামার থেকে।
পোল্ট্রি ফিডের অন্যতম প্রধান উপকরণ ভুট্টা ও সয়ামিল। এক কেজি প্রাণী খাদ্যে ভুট্টা ও সয়ামিল থাকে ৯০ শতাংশের বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এক দশকে ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। গত বছর দেশে ৫৬ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৮ লাখ টন। ২০১৫ সালে দেশে ভুট্টার উৎপাদন হয়েছিল ২৭ লাখ টন। বিশ্বে ভুট্টার হেক্টরপ্রতি সর্বাধিক ১১ টন ফলন হচ্ছে তুরস্কে। বাংলাদেশে হেক্টরপ্রতি ভুট্টার ফলন হচ্ছে ১০ টন, যা বিশ্বে তৃতীয়। পাঁচ বছর আগেও (২০১৮ সাল) দেশে হেক্টরপ্রতি ভুট্টার ফলন ছিল ৮ টন।
গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ভুট্টার দাম কমেছে কেজিতে ৬-৮ টাকা। প্রতি কেজি ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ভুট্টার আমদানি কমেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছর ভুট্টার আমদানি ছিল তিন লাখ ৮৪ হাজার টন, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২১ লাখ ৬৩ হাজার টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ভুট্টার আমদানি কমেছে প্রায় ১৮ লাখ টন।
বর্তমানে দেশে ভুট্টার চাহিদা ৬০ লাখ টনেরও বেশি।
কমেছে আমদানি করা সয়াবিন মিলের (সয়ামিল) দামও। দেশি কয়েকটি কোম্পানিও আগের চেয়ে কম দামে সয়ামিল বিক্রি করছে। বাংলাদেশে ভোজ্য তেল উৎপাদন, পোলট্রি ও প্রাণিসম্পদ খাতে বছরে প্রায় ২৫ লাখ টন সয়াবিনের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশে ১০ শতাংশের মতো উৎপন্ন হয়, বাকিটা বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশে মোট আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আসে আমেরিকা থেকে। আমদানিকারকরা দাম কমাতে সয়ামিলের ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ) বলছে, ২০২০ সালে ৫০ কেজির এক বস্তা ফিডের দাম ছিল ১ হাজার ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে একই খাদ্য বস্তাপ্রতি দেড় হাজার টাকা বেড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজারে ঠেকেছে। দেশের মানুষ যাতে কম দামে পোলট্রি পণ্য খেতে পারে এ জন্য সরকার পোলট্রি ফিডের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। দেশের ফিড ব্যবসায়ীরা ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭৮ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯৭৮ কোটি টাকার শুল্ক ছাড় পেয়েছে পোলট্রি ফিডের কাঁচামাল আমদানিতে। অথচ তারা পোলট্রি ফিডের দাম না কমিয়ে বাড়িয়েই চলেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২২-২৪ সাল পর্যন্ত দফায় দফায় ফিড তৈরির উপাদানের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে কোনো কারণ ছাড়াই তা বেড়েছে।
এক সময় ৫০ লাখের বেশি গরু ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে ও চোরাপথে বাংলাদেশে আসতো। তখন দেশ ভারতীয় গরুর ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর হঠাৎ করে ভারত সরকার গরু রফতানি বন্ধ করে দেয়। সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে, যাতে চোরাপথেও গরু না আসতে পারে। একই সঙ্গে সেখানে গরু জবাই ও খাওয়া নিষিদ্ধ করে দেয়। স্বাভাবিক কারণেই গরু আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ বড় রকমের সংকটে পতিত হয়। এক বছর অসুবিধা হলেও অবশ্য পরবর্তী বছর থেকে সংকট কেটে যায়। বিশেষ উদ্যোগ ও উদ্যমে গরুসহ গবাদিপশু লালন-পালন বেড়ে যায়। গড়ে ওঠে ছোট বড় অনেক ডেইরি ফার্ম। এখন শুধু ভারত কেন, কোনো দেশের গরুরই প্রয়োজন নেই বাংলাদেশের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাহিদার অতিরিক্ত গরু উৎপাদিত হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ভারত নির্ভরতা কাটিয়ে বাংলাদেশ ডেইরি শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারলে পোল্ট্রি শিল্পে নয় কেন? পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও উদ্যাক্তারা বলছেন, দেশের পুষ্টি সরবরাহের অন্যতম প্রধান খাত পোল্ট্রি। পুষ্টির প্রধান উপাদান মাংস এবং ডিম আসে এই খাত থেকে। ‘আমদানি নির্ভরতা কমাতে সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং নীতিমালার প্রয়োজন। ভেঙে দিতে হবে সিন্ডিকেট। বাড়াতে হবে উৎপাদনশীলতা।’
তাছাড়া, প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদনে টিকিয়ে রাখতে ও ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে ডিম ও মাংস সরবরাহের জন্য বিপিএ’র সাত দফা দাবিকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। যার মধ্যে পোলট্রি ব্যবসায়ী ও খামারিকে বাংলাদেশের সব ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণ সুবিধা দেয়া, একদিন বয়সের সব মুরগির বাচ্চার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩০-৫০ টাকা ও সব ধরনের পোলট্রি ফিডের ৫০ কেজি বস্তার মূল্য ২৫০০-৩০০০ টাকা নির্ধারণ খামারীদের সহজ শর্তে ঋণ ও প্রণোদনা, সয়ামিল রপ্তানি বন্ধ উল্লেখযোগ্য।
সঠিক কার্যকর পরিকল্পনার অভাবে সম্ভাবনাময় এই শিল্প ধ্বংস হলে হুমকির মুখে পড়বে পুষ্টি সরবরাহ ব্যবস্থা। বেকার হয়ে পড়বে লাখ লাখ মানুষ। আমদানি নির্ভর হয়ে যাবে এই খাত। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
লেখক : মুহাম্মাদ মোরশেদ আলম, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক
পূর্বকোণ/এএইচ