
ভালোবাসার টুকিটাকি : বর্তমান সময়ে বাঙালিদের কাছে ভালোবাসা দিবসের আলাদা একটি তাৎপর্য আছে। সাধারণত, প্রেমিক-প্রেমিকারা খুব আগ্রহ নিয়ে এই দিনের জন্য অপেক্ষা করে এবং এই দিন উদযাপন করে। সাধারণ অর্থে এই দিন উদযাপন করা বলতে বোঝায়, প্রেমিক যুগলের একসাথে ঘুরতে বের হওয়া, একসাথে খাওয়া-দাওয়া করা, একজন অন্যজনকে ফুল, কার্ডসহ অন্যান্য উপহার দেওয়া ইত্যাদি। প্রেমিক-প্রেমিকারা এই দিন সবচেয়ে ঘটা করে উদযাপন করলেও এই প্রশ্ন থেকে যায় যে, ভালোবাসা কি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট দিন ভিত্তিক কিনা। তা কিন্তু নয়।
ভালোবাসা সবসময়ের জন্য। ভালোবাসা এমন এক জিনিস যা সবসময় ধরে রাখতে হয়। ভালোবাসা থাকলে তা একটি নির্দিষ্ট দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করতে হয় না, ভালোবাসা প্রতিমুহূর্তে আপনার কথা এবং কাজের মধ্যে প্রকাশ পাবে। তবুও সকলে ভালোবাসা দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করে থাকেন। তার কারণ হচ্ছে, ভালোবাসা দিবস মানুষকে সুযোগ দেয় পুরোনো মান-অভিমান ভুলিয়ে ভালোবাসাকে ঝালাই করে নেওয়ার। ভালোবাসা আমরা প্রতিমুহূর্তে আপনজনদের কাছে প্রকাশ করে থাকি। মান-অভিমান ভুলবার জন্য, ভালোবাসা ঝালাই করার জন্য, সম্পর্ককে আরেকটি সুযোগ দেওয়ার জন্য-তাই যদি হয় এই দিবস পালন সুন্দর। যদিও এখন ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক অন্যায় বাণিজ্য। যেমন: ফুলের বাড়তি দাম রাখা, খাবারের বাড়তি দাম রাখা, উপহার সামগ্রীর বাড়তি দাম রাখা ইত্যাদি। মানুষ প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বাড়তি দাম দিয়ে এসব কিনছে। এসবের প্রতিকার করা উচিত। কিন্তু প্রতিকার তখন-ই সম্ভব যখন আপনি, আমি, সকলে এগিয়ে আসবো। আশা করি, সকলের ভালোবাসা দিবস উদযাপন সুন্দর হোক, কল্যাণকর হোক। মানবধর্ম ভালোবাসার জয় হোক। ভালোবাসা এবং শান্তি ছড়িয়ে যাক পুরো পৃথিবী জুড়ে।
তরুণীদের প্রেম ভাবনা: ভালোবাসা দিবসকে নিয়ে তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাসের, আবেগের কমতি নেই। অনেকে এই আনুষ্ঠানিক দিনটি আসার অনেক আগে থেকেই এই দিন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করে থাকেন। তারা নানাভাবে এই দিন উদযাপন করে থাকেন। যদিও সবাই প্রতিটি দিন তাদের প্রিয়জনদের ভালোবেসে থাকেন, বিভিন্নভাবে তাদের ভালোবাসার প্রকাশ ঘটান, তবুও এই বিশেষ দিনটিতে তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করার তাগিদ অনুভব করে থাকেন। এরকম কয়েকজন তরুণী ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে তাদের উচ্ছ্বাস, তাদের অনুভূতি, তাদের পরিকল্পনা আমাদের সাথে ভাগাভাগি করেছেন। তারা বলেছেন, তাদের জীবনে প্রেম এসেছে কিনা, এলেও সেটা কবে, সম্পর্কের আগে ও পরে ভালোবাসা দিবস নিয়ে তাদের ভাবনা এবং উদযাপন, আর ভালোবাসা কি একদিন প্রকাশ করাই যথেষ্ট কিনা ইত্যাদি নানা বিষয়।
দীপা প্রিয়া বণিক: (শিক্ষার্থী/ একুশ বছর) আমি ক্লাস নাইনে পড়ার সময় কোচিংয়ে তার সাথে পরিচয় হয়েছিলো। এবং ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়ার সময় আমরা প্রেমের সম্পর্কে জড়াই। সম্পর্কের আগে ভালোবাসা দিবস নিয়ে আমার কোনো আহামরি ভাবনা ছিলো না। হয়তো মাঝে মাঝে বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে যেতাম। ব্যাস এতটুকুই। সম্পর্কের পর এখনো আমরা অতটা ঘটা করে এইদিন উদযাপন করি না। কারণ, আমাদের মনে হয়, এইদিনেও অন্যসব দিনের মতো একে অপরের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা একই থাকবে। তাই আলাদা কোনো দিনের প্রয়োজনবোধ করি না। ভালোবাসার অনুভূতিটা একদিনে সৃষ্টি হয় না আর তাই তা একদিনে প্রকাশও করা যায় না। তাই আমি বলবো, ভালোবাসা একদিনে প্রকাশ করার জন্য হতে পারে না।
আইভি বড়ুয়া: (শিক্ষার্থী/বিশ বছর) আমরা দুজন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। ফেসবুক ফ্রেন্ডস ছিলাম কিন্তু কথা হয় নি। তারপর একপর্যায়ে পড়াশোনার খাতিরেই কথা শুরু হয়। বন্ধু হই। তারপর আমার বিশতম জন্মদিনের সন্ধ্যা তার সাথে ফানুশ দেখতে দেখতেই কাটিয়ে দিলাম। এর এক সপ্তাহ পর সে আমার প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করে। আমি বলেছিলাম, ‘আমি প্রেম নয়, ভালোবাসায় বিশ্বাসী।’ এইভাবে আমাদের একই যাত্রার যাত্রী হওয়া। প্রেমের আগে পত্রিকায় যুগলের ছবি দেখতাম আর ভাবতাম এবার দেশে গোলাপের বাম্পার ফলন হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে ভালোবাসা দিবসে আমি বাসাতেই থাকি। পরিবারকে সময় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সম্পর্ক হওয়ার পরেও ভালোবাসা দিবস নিয়ে ভাবনাটা একইরকম। এখনো একটা বসন্তও তার সাথে পার করা হয় নি। তবে ওইদিন একটুখানি বেশি সময় তার সাথে ব্যয় করার ইচ্ছা আছে। আমার কাছে দিনটার তাৎপর্য একটু বেশি কারণ আমার বাবা-মায়ের বিবাহ বার্ষিকী ওইদিন। এই দুজন মানুষকে দেখেছি কিভাবে ভালোবেসে সব রকম সময় পাড়ি দিতে হয়। কিভাবে নিজেদের যা আছে তা নিয়ে ভালোবেসে আপনজনদের আরো আপন করে নিতে হয়। ভালোবাসা অনন্ত কালের জন্য। তবে এই দিনটাকে ‘ভালোবাসা প্রকাশক’ হিসেবে হাইলাইট করার মতো মনে করি। যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারার মধ্যে আমি ভালোবাসা খুঁজে পাই। কিছু পাওয়ার আশা নিয়ে ভালোবাসা হয় না, তা শুধু প্রেম করার জন্য প্রযোজ্য।
সার্বজনীন ভালোবাসা দিবস: অনেকেই মনে করেন, ভালোবাসা দিবস শুধুমাত্র প্রেমিক যুগলের জন্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তা ফলাও করে প্রচারও করে। কিন্তু ভালোবাসা শুধুমাত্র প্রেমিক যুগলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভালোবাসা রয়েছে পৃথিবীর সবখানে, সব সম্পর্কের মাঝে। ভালোবাসা রয়েছে গানে, কবিতায়, চলচিত্রে, সংস্কৃতিতে, ভাষায়, বইয়ে-সবখানে। আমাদের মিডিয়া ভালোবাসা দিবসকে মূলত প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিশেষ দিবস হিসেবে প্রমোট করলেও এখন তার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তাই এখন ভালোবাসা দিবস নিয়ে ভাবনা শুধুমাত্র প্রেমিক যুগলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, ভালোবাসা দিবস পালনের উচ্ছ্বাস এখন সব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে। এরকম কয়েকজন আমাদের সাথে ভালোবাসা দিবস নিয়ে তাদের ভাবনা, পরিকল্পনা ভাগাভাগি করেছেন।
তানজিলা চৌধুরী বৃষ্টি: (প্রভাষক, বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজ) আমরা প্রতিদিন, প্রতি মূহুর্তে আমাদের আপনজনদের কাছে আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করি আমাদের নানা কথা, নানা কাজের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এই দিবসটিতে ভালোবাসা আবার ঝালাই করে নেওয়া যায়, বিশেষভাবে প্রকাশ করা যায় বলে এই দিনটির আলাদা একটি গুরুত্ব আছে আমার কাছে। আমি কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকি মূলত কিন্তু এর ফাঁকে এই দিনে খুব আগ্রহ নিয়ে এই দিবস উপলক্ষে নির্মিত বাংলা নাটক দেখি। এর মধ্যে ‘ক্লোজ আপ কাছে আসার গল্প’ আমার সবচেয়ে প্রিয়। তাছাড়া, এই দিনের বিশেষ অনুষ্ঠান, জুটিদের ইন্টারভিউ দেখি। রাস্তায় আসা-যাওয়ার পথে ছেলেমেয়েদের
বিভিন্নভাবে এইদিন উদযাপন করতে দেখি। ভালো লাগে তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখতে। আগে এই দিনটি আমি আমার কাজিন এবং বন্ধুদের সাথে উদযাপন করতাম। তখন পড়াশোনার ফাঁকে যথেষ্ট সময় থাকতো। কাজিন এবং বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতাম, তাদের নিয়ে সিনেমা দেখতাম, গান শুনতাম। এখন অবশ্য আমরা সবাই নিজেদের ব্যক্তিগত জীবন, ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত বলে ঠিক আগের মতো আর পালন করা হয়ে উঠে না। ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে গড়ে উঠা বাণিজ্য নিয়ে বললে বলতে হয়, কেউ যদি সত্যি ভালোবেসে থাকে তাহলে সেখানে দামে বেশি কিছু আসে যায় না। তবুও ব্যবসায়ীদের উচিত বাড়তি দাম না রাখা কারণ, অনেকের জন্য হয়তো বাড়তি দাম দিয়ে ফুল অথবা কার্ড কেনা কষ্টসাধ্য হবে। এই অন্যায় বাণিজ্য প্রতিকার করা উচিৎ তবে আমি কাউকে দেখিনি এই বাড়তি দাম রাখার প্রতিবাদ করতে। অনেককে দেখেছি অভিযোগ করতে কিন্তু আমার জানা মতে কেউ প্রতিবাদ করে নি। কিন্তু যদি প্রতিকার করতে হয় তাহলে সবাই যদি একসাথে প্রতিবাদ করে তাহলে হয়তো তা প্রতিকার করা সম্ভব হবে।
শরমিলা তাসনিম আনিকা: (শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তা) প্রেম নিয়ে সেভাবে ভাবিনি আসলে। একটা বয়সে এসব নিয়ে অনেক আগ্রহ ছিল। বয়সন্ধিকালীন সময়ে হালকা পাতলা অপরিণত প্রেম বলতে যা বুঝি তা আমারও ছিলো। ওই যে গল্প-উপন্যাসের ষোল বছর বয়সে যে প্রথম প্রেম হয় অনেকটা ওরকম। যদিও আমাদের প্রেম বেশিদিন টিকে নি। এসব ভাবলে এখন নিজেকে বোকা মনে হয়। আমার মনে হয়, প্রত্যেকটি দিনই ভালোবাসার। যদিও এখনকার ভালোবাসাগুলো খুব স্বার্থকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। মানুষ মন উজাড় করে মানুষ ভালোবাসতে জানে না। শুধু দেয়া-নেয়া সম্পর্কে বিশ্বাসী হয়ে গেছে। চারপাশের এতো ঝামেলা, এতো অশান্তির অবসান একমাত্র স্বার্থহীন ভালোবাসাই দিতে পারে। যেহেতু কাগজে, ক্যালেন্ডারে একটা ভালোবাসা দিবস আছে তাই শুধু চাই পৃথিবীর সব প্রাণী সুখী হোক, সুন্দর থাকুক। এ বছর ভালোবাসা দিবস উদযাপন নিয়ে আমার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। অন্যসব সাধারণ দিনের মতোই এই দিনটি কাটবে। অন্যদিনের মতোই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবো, গান শুনবো, রাস্তায় আসা-যাওয়া করা মানুষদের মধ্যে গল্প খুঁজবো। হয়তো কাছের মানুষদের জড়িয়ে ধরে বলবো, ‘ভালোবাসি’। একজন শিক্ষার্থী এবং উদ্যোক্তা হিসেবে ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে গড়ে উঠা ব্যবসা নিয়ে বলতে পারি, পুঁজিবাদী সমাজে একটা দিবসকে ঘিরে ব্যবসা হচ্ছে, সামনেও হবে। পুঁজিবাদ তার নিয়মেই সবকিছুকে গ্রাস করবে। এর প্রতিকার নিয়ে তার ভাবনা স্বভাবসুলভ। সমাজের প্রধান একটা অংশ এর সা¤্রাাজ্য তৈরি করেছে। আমরা চাইলেই গোঁড়া থেকে এটা তুলে ফেলতে পারবো না। সর্বস্তরের মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন হলে এর প্রতিকার হতে পারে।
শাশ্বতী বড়ুয়া: (শিক্ষার্থী) আমার প্রেমের জীবন খুব দারুণ। পরিবার, আমার আশেপাশের কাছের মানুষ সব নিয়ে পরিপূর্ণ ভালোবাসা পেয়ে যাই সারাক্ষণ। দিবস তো অনেক সেগুলো যদি উদযাপন করা যায়, তবে এটা কেন নয়! আজকে তবে ভালোবাসা দিবসের সৌন্দর্য রক্ষা এবং ভালোবাসা দিবস পালন নামের বুজরুকি পরিহার করে যতটুকু শোভনীয় ততটুকু করাই যায়। ভালোবাসা দিবস উদাযাপন নিয়ে আমার তেমন কোনো বিশেষ প্ল্যানিং নেই। তবে চেষ্টা করি ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসা দিবস উদযাপন করতে। বর্তমান সময়ে অন্যান্য যুগলদের ভালোবাসা দিবস উদযাপন করার ধরন নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই। কেননা সবাই তো এক না। তবে অধিকাংশের মধ্যেই আজকাল মেকি ব্যাপারটা খুব চরমভাবে লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ ভাবেন ভালোবাসা দিবস মানেই প্রেমিক-প্রেমিকার গদগদ প্রেম। কিন্তু তা তো না, ভালোবাসা কি শুধু অইটুকুতেই সীমাবদ্ধ? টিনের চাল, বটগাছের ছায়া, পাখি, সমুদ্র, পাহাড়, গানের সুর, নাচের তাল থেকে শুরু করে বড় বড় অট্টালিকা কোথাও কি ভালোবাসা নেই? এই সব খানেই তো ভালোবাসার চাষ। কোথাও কম, কোথাও বেশি। আজকালকার ছেলেমেয়েদের উদযাপন নিয়ে তাই আর বেশি কিছু বলতে চাই না। ভালোবাসা দিবস মানেই ফুলের দোকানে ভিড়, গিফটের দোকানে ভিড়, পার্কে ভিড়। কিন্তু সেটা খারাপ তা নয়। সেটাতেও সৌন্দর্য আছে। এর প্রতিকার তো জানা নেই তবে সুন্দর দেখার চোখ সব বদলে দিতে পারে তবে ভালোবাসা বা প্রেম শুধু সেই এক প্রেমিক প্রেমিকাতেই সীমাবদ্ধ না হোক এটাই আশা রাখি। ভালোবাসা ছড়িয়ে পরুক দেয়ালের কোণায় কোণায়। রাস্তার ইটের কণায়, শ্রমিকের অক্লান্ত ঘাম ঝরানো শ্রম থেকে শুরু করে এক ছাদের নিচে সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করা স্বামী-স্ত্রী পর্যন্ত।
ভালোবাসা বিয়ের পরে: যেকোনো সম্পর্ককে পূর্ণতা দেয় ভালোবাসা। পৃথিবীর সবখানের মানুষের মধ্যেই আছে নিজের দাম্পত্য জীবন নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস, রঙিন স্বপ্ন। মানুষ তার জীবনের এক পর্যায়ে নিজের জন্য জীবন সঙ্গী খুঁজতে শুরু করে। অনেকের সাথেই তার দেখা হয়, হয় তো সম্পর্ক হয় কিন্তু সে জীবন সঙ্গী বানায় কোনো বিশেষ একজনকে। প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া অনেকেই বিয়ের পর তাদের বিবাহ পূর্ববর্তী এবং বিবাহ পরবর্তী জীবনের অনেক পার্থক্য খুঁজে পান। তাদের প্রেমে জোয়ার-ভাটা হয়, মান-অভিমান হয় কিন্তু ভালোবাসা এখনো জিইয়ে থাকে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এরকম দু’জন নারী তাদের মূল্যবান অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন আমাদের।
শামসুন্নাহার সাজু: (গৃহিণী) আমি বর্তমানে দুই সন্তানের জননী। সব প্রেম-ই অসাধারণ। আমার প্রেমের গল্পও তাই। আমরা তখন যে বাড়িতে থাকতাম তার পাশের বাড়িতে আমার স্বামীর এক বন্ধুর বাড়ি ছিলো। বন্ধুর বাড়িতে তার আসা-যাওয়ার সময়ে আমাদের চোখাচোখি হয়। এরপর আমরা পরিচিত হই, বন্ধু হই। একপর্যায়ে আমাদের প্রেমটাও হয়। আমাদের প্রেমের অসাধারণ বিষয়টি হলো আমি আমার স্বামীর চেয়ে বয়সে এক বছরের বড়। বিষয়টিকে অসাধারণ বলছি কারণ, এখনো সমাজের বড় অংশের লোক মানতে নারাজ যে প্রেম, বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের বয়স ছেলের বয়স থেকে বেশি। সুতরাং, বয়সটা আমাদের বিয়ের ক্ষেত্রে একরকম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তাছাড়া, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থান তো আছেই। তবুও আমরা দায়বদ্ধ হয়ে প্রেম করেছি, বিয়ে করেছি এবং উনিশ বছরের সংসারে এখনো আমরা খুব ভালো বন্ধু। আমি বলবো, এটাই আমাদের প্রেমের অসাধারণ বিষয়। বিয়ের আগে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করতাম। তবে এতোটা ঘটা করে নয়। আমরা দেখা করতাম, চিঠি আদানপ্রদান হতো, একসাথে খাওয়া হতো-এটুকুতেই আমাদের ভালোবাসা দিবস উদযাপন সীমাবদ্ধ ছিলো। তবে ভালোবাসা দিবসের চিঠিটা খুব আবেগ দিয়ে লেখা হতো। বিয়ের পর শুরুর দিকে মোটামুটি আয়োজন করে এই দিন উদযাপন করা হতো। যেমন: একসাথে ঘুরতে যাওয়া, বাইরে খেতে যাওয়া, একে অন্যকে উপহার দেওয়া, কার্ড, ফুল দেওয়া। কিন্তু এখন আর সেভাবে আয়োজন করে উদযাপন করা হয়ে উঠে না। ব্যবসায়িক কাজের জন্য সে অন্য শহরে থাকে আর আমিও বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আগের মতো উচ্ছ্বসিত হই না আর তবে ফোনে কথা হলে পুরোনো দিনের কথা মনে করি। তাতেই দুজনে সার্থকতা খুঁজে পাই। এই পর্যন্ত আমি আমার প্রেম এবং বিয়েকে সার্থক বলে মনে করি। মাঝে মধ্যে মনোমালিন্য হয় কিন্তু দিনশেষে একে অন্যকে কাছে টেনে নিই। বাচ্চাদের জন্য কষ্ট করছি। নিজেকে আমার সম্পূর্ণ মনে হয়।
কোহিনূর আক্তার বিউটি: (রাজনৈতিক কর্মী) আমরা তখন ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পাসে থাকতাম। স্কুলে পড়তাম। বয়স বোধহয় তের-চৌদ্দ হবে। তখন সে (আমার স্বামী) ক্যাডেট কলেজ স্কুলে পড়ার সুযোগ পায়। সেই সুবাদেই আমাদের পরিচয় এবং একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক হয়। প্রথমদিকে পরিবার মোটেই সাপোর্টিভ ছিলেন না। কিন্তু আট বছরের প্রেমের পরে আমরা শেষমেশে বিয়ে করেছি। আমাদের প্রেমের সময়ে মোবাইল ছিলো না। আমাদের কিছু মিউচ্যুয়েল বন্ধু ছিলো যাদের মাধ্যমে আমরা খবর আদানপ্রদান করতাম। তখন মিডিয়া ছিলো বন্ধু আর চিঠি ছিলো একমাত্র ভরসা। তখন আমাদের কাছে ভালোবাসা দিবস বলে কিছু ছিলো না। প্রতিটি মূহুর্ত ছিলো আবেগতাড়িত। বিয়ের পর সবার কাছেই আমরা ভালো জুটি হিসেবে আছি। শুধু স্বামী-স্ত্রী নই, আমরা একে অপরের ভালো বন্ধু। ভালোবাসা দিবস সেভাবে পালন করা হয়ে উঠে না। কারণ, আমি মনে করি, ভালোবাসা প্রতিক্ষণের। এর জন্য আলাদা কোনো দিন লাগে না। আসলে এখন সময় বদলেছে। আমরা আর এই যুগের ছেলেমেয়েদের মতো উদযাপন করি না কিন্তু তাদের দেখে আনন্দিত হই আর মনে করি, এইদিন তাদের যদি আনন্দের কিছু মূহুর্ত দিতে পারে তাহলে খারাপ কি?