বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হতে ইচ্ছুক চট্টগ্রাম বিভাগের এথলেটদের প্রাথমিক বাছাই গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর সাগরিকায় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেএসপি’র ২১টি ইভেন্টে প্রায় ৯০০ এথলেট এবার বাছাইয়ে অংশ নিয়েছেন।
সকাল ৯টা থেকে বাছাই কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও ভোরের আলো ফোটার আগে থেকেই শিশু-কিশোরদের হল্লায় মুখর হতে শুরু করে সাগরিকা। নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ভিড়ে বিকেএসপি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মূল ফটকের প্রবেশপথ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বাছাই কার্যক্রম শুরু হলে ধীরে ধীরে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে শুরু করে ভর্তিচ্ছুরা। বাইরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন অভিভাবকরা। বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে এ বাছাই কার্যক্রম।
বিকেএসপি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. মতিউর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই চট্টগ্রামে বাছাই কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন ইভেন্টে মোট ৮৯৫ জন বাছাইয়ে অংশ নিয়েছে। ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে ৬৮৬ জন ছেলে ও ৬০ জন মেয়ে; ১৪৯ জন একাধিক ইভেন্টে অংশ নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফুটবলে ৩৮৮ জন পরীক্ষার্থী ছিল। এছাড়া ক্রিকেটে ৩১৫ জন, ব্যাডমিন্টনে ২৯, এথলেটিক্সে ২০, ভলিবলে ১৫, শ্যুটিংয়ে ১৪, বাক্সেটবলে ১২ জন পরীক্ষার্থী ছিল। প্রায় ২১ ইভেন্টের প্রত্যেকটিতে একাধিক পরীক্ষার্থী এবার উপস্থিত ছিল।
উৎসাহের কমতি ছিল না বাছাইয়ে অংশ নিতে আসা প্রতিযোগী ও অভিভাবকদের মধ্যে। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে ভাগ্নে তসিফুল ইসলামকে সাথে নিয়ে এসেছেন একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুস ছালাম। তিনি বলেন, তসিফুল খুব ভালো ফুটবল খেলে। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা নিয়ে এসেছি। ভোর চারটায় গাড়িতে উঠে এখানে সাড়ে সাতটায় পৌঁছেছি। দোয়া করবেন, পরীক্ষাটা যেন তার ভালো হয়।
বাবাকে সাথে নিয়ে কুমিল্লার চান্দিনা থেকে আসা ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জারিন গওহর বলে, বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছি। গতকাল রাতে বাবার সাথে চট্টগ্রামে এসে এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম। সেখান থেকে সকালে সাগরিকায় এসে বাছাইয়ে অংশ নিচ্ছি।
পরীক্ষকদের মধ্যেও আগ্রহের কমতি নেই। কারাতে ইভেন্টে পরীক্ষকের চেয়ারে বসেছিলেন ঢাকা থেকে আসা বিকেএসপি সাঁতার বিভাগের প্রধান ও কোচ মো. সোলায়মান। তিনি বলেন, এর আগে চট্টগ্রাম থেকে বেশ কয়েকজন ভালো এথলেট পেয়েছিলাম। ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাই এবারও আশা করছি এই ইভেন্টে এখান থেকে ভালো এথলেট পাওয়া যাবে।
প্রায় সব ইভেন্টের পরীক্ষা কেন্দ্রে হলেও সাঁতারের পরীক্ষা নেয়া হয় বাইরে দিঘি বা জলাশয়ে। ঢাকা থেকে বাছাইয়ের দায়িত্বে আসা সাঁতারের সিনিয়র কোচ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এখানে সুইমিং পুল না থাকায় বাছাইয়ের জন্য পরীক্ষার্থীদের বিকেএসপির তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।
সাঁতারে পরীক্ষা দিতে রাঙামাটি সদর থেকে সন্তান তাসনিম সালেহকে নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রের রিজিওনাল ম্যানেজর মো. আবু সালেহ। তিনি বলেন, মেয়েকে আমি রাঙামাটি লেকে সাঁতার শিখিয়েছি। যেখানেই পরীক্ষা হোক আশা করি সে ভালো করবে।
তার মতো প্রত্যেক অভিভাবকেরই আশা তাদের সন্তান যেন বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পায়। তাদের কাছে ক্রীড়াঙ্গনের আগামীর তারকাও হওয়ার একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান এই বিকেএসপি।
পূর্বকোণ/মাহমুদ