টস জিতে ব্যাট নেয়া শ্রীলঙ্কা জানিথ লিয়ানাগের সেঞ্চুরিতে ভর করে লড়াইয়ের রসদ পেয়েছিল। তবে চট্টগ্রামের উইকেটে এই লক্ষ্য তাড়া করা টাইগারদের জন্য খুব বেশি কঠিন হতো না। কিন্তু দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়ায় চৈত্রের গরম আর ফিল্ডিংয়ের সময় পাওয়া একের পর এক চোট। তবে সৌম্য সরকারের কনকাশন বদলি নেমে তানজিদ তামিমের দারুণ ইনিংস অনেকটাই কাজ করে দিয়েছিল। বাকিদের ব্যর্থতায় অনিশ্চয়তাও ছিল। শেষে মুশফিকুর রহিম ও রিশাদ হাসানের ব্যাটে কেটেছে সব শঙ্কা।
সোমবার (১৮ মার্চ) জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কা জানিথ লিয়ানাগের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারের শেষ বলে ২৩৫ রানে অলআউট হয়ে যায়।
জবাবে কনকাশন বদলি হিসেবে নামা তানজিদ হাসান তামিমের ৮১ বলে ৮৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের পর রিশাদ হোসেনের ঝড়ে ৫৮ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখে জয় পায় বাংলাদেশ। এই জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।
২৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার আগেই সৌম্য সরকারের ইনজুরি ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় বাংলাদেশকে। লিটন দাসের বদলে এই ম্যাচের একাদশে জায়গা পাওয়া এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে সৌম্য সরকারের কনকাশান বদলি হিসেবে তানজিদ তামিম ইনিংস শুরু করেন। তাদের উদ্বোধনী জুটি মাত্র ৭.৩ ওভারে ৫০ রান যোগ করে।
তানজিদ তামিম শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক থাকলেও বিজয় শুরুতে ছিলেন খোলসবন্দী। আগের ওভারে থিকসানাকে চার মেরে খোলস ভাঙার ইঙ্গিত দিলেও পরের ওভারে কুমারার ফুল লেন্থের বলে কাভারে ধরা পড়েন বিজয়। আউট হওয়ার আগে ২২ বলে করেন ১২ রান।
অধিনায়ক শান্তও বেশিক্ষণ টেকেননি। কুমারার পরের ওভারে আউট হয়ে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। কুমারার বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালান শান্ত। শরীর থেকে বেশ দূরে ছিল বল। রীতিমতো উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন তিনি।
দ্রুত দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশকে ভালো জুটি এনে দেন তানজিদ তামিম-তাওহীদ। ৪৯ রানের এই জুটি ভাঙেন কুমারা। কুমারার শর্ট বলে ব্যাট চালান হৃদয়। কিন্তু মাটিতে খেলতে চাইলেও বল ডিপ স্কয়ার লেগে উঠে যায়। ৩৬ বলে ২২ রান করেন তিনি।
কুমারা বাংলাদেশকে আরও বিপদে ফেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিদায় করে। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রিয়াদ। ৪ বলে ১ রান করেন তিনি।
পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট হারালেও চালিয়েও খেলছিলেন তানজিদ তামিম। দেখতে দেখতে ৮০ পেরিয়ে প্রথম শতকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হাসারাঙ্গার ওপর চড়াও হতে গিয়েই বিপদে পড়লেন। শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে বাইন্ডারিতে ধরা পড়ার আগে ৮১ বলে ৯ চার ও ৪ ছয়ে ৮৪ রান করেন তিনি। ১৩০ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
তানজিদের বিদায়ের পর মুশফিকুর রহিম জুটি বাঁধেন মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে। বিপদ কাটিয়ে এই জুটি জয়ের দিকেই নিচ্ছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু মিরাজের অদূরদর্শী শট বিপদে ফেলে টাইগারদের। ভাঙে ৪৮ রানের জুটি। হাসারাঙ্গার আলগা বল লেগ সাইডের বলে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দেন মিরাজ। ২৫ রান করেন মিরাজ।
নতুন ব্যাটার রিশাদ হোসেন নেমে প্রথম বলেই হাঁকান ছক্কা। দ্বিতীয় বলে তার পায়ে বল লাগলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করে লঙ্কানরা। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় তারা। রিভিউয়ে অবশ্য আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই অটল থাকে।
লাইফ পেয়ে বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন রিশাদ। হাসারাঙ্গার ওপর দিয়েই ঝড়টা বেশি গেছে। টাইগার লেগ স্পিনার একের পর এক চার ছয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন জয়ের বন্দরে। উইনিং শটটা অবশ্য এসেছে মুশফিকের ব্যাট থেকে।
৩৬ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ৩৭ রান করেন মুশফিক। মাত্র ১৮ বলে ৫ চার ও ৪ ছয়ে ৪৮ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেন রিশাদ।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে ৮ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন কুমারা। এছাড়া হাসারাঙ্গা নেন ২ উইকেট।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে জানিথ লিয়ানাগের সেঞ্চুরিতে ২৩৫ রান করে শ্রীলঙ্কা। ১০২ বলে ১১ চার ও ২ ছয়ে ১০১ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। এছাড়া চরিথ আসালাঙ্কা ৩৭ ও কুশল মেন্ডিস ২৯ রান করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন আহমেদ ১০ ওভারে ৪২ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ ২টি করে উইকেট শিকার করেন। সৌম্য ও রিশাদ ১টি করে উইকেট পান।
পূর্বকোণ/জেইউ