৪০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ২৩৮। রানরেট তখনো ৬-এর নিচে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে তো তখনো ৭ উইকেট, তারওপর ক্রিজে দুই ব্যাটসম্যানের মধ্যে ৪০ রানে ব্যাট করতে থাকা হেনরিখ ক্লাসেন সেট, আর ১১৭ রান করে ফেলা কুইন্টন ডি কক তো শুধু সেটই নন, মহাসেট! এবার বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতার কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকা কী করেছে, তার চেয়ে বড় দুর্ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা কী করতে পারে, সেটি।
দক্ষিণ আফ্রিকা যা করেছে, তাকে ঘূর্ণিঝড় হামুনের সঙ্গেই তুলনা করা যায়! ৩১ থেকে ৪০ এই দশ ওভারে ৭৩ রান তুলে ‘হাত মকশো’ করা দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ দশ ওভারে তুলেছে ১৪৪ রান। বাংলাদেশের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ৩৮২ রানের এভারেস্ট। কী নির্মম, কী নির্দয় এই দক্ষিণ আফ্রিকা!
তা-ও যে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪০০ রানের নিচে ‘আটকে’ দিতে পেরেছে বাংলাদেশ, সেটা সম্ভবত হয়েছে ডি কক অবশেষে আউট হওয়ায়। হাসান মাহমুদের করা ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে ডি কক ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট গ্যালারিতে নাসুমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার সময়েই দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৩০৯! শেষ পর্যন্ত ডি ককের ১৪০ বলে ১৫ চার ও ৭ ছক্কায় সাজানো চোখধাঁধানো ইনিংসটি শেষ হয়েছে ১৭৪ রানে – এখন পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ স্কোর। আউট হওয়ার আগের ৩০ বলে নিয়েছেন ৬৮ রান, ইনিংসের ৯টি চার ও ৩টি ছক্কা এসেছে ওই ৩০ বলে।
কিন্তু ডি কক আউট হলেও হেনরিখ ক্লাসেন তো ছিলেন। তৃতীয় পাওয়ার প্লে শুরু হওয়ার পর মূলত ডি ককই পিটিয়েছেন। ৪১তম ওভারে মোস্তাফিজকে একটি চার, পরের ওভারে শরীফুলকে একটি চার ও ছক্কা, তার পরের ওভারে সাকিবের ওপর ধস – দুটি চার ও দুটি ছক্কা! তবু তাঁর মন ভরেনি। ৪৩তম ওভারে শরীফুলকে দুটি চারের পর ৪৪তম ওভারে আবার মোস্তাফিজকে এক চার।
ক্লাসেন সে সময়ে শুধু ৪৪তম ওভারে শরীফুলকে একটি ছক্কা ছাড়া তেমন মারেননি। যেন সহমর্মিতা দেখালেন! দুদিক থেকে পেটালেই কেমন দেখায় না? ক্লাসেন পেটালেন ডি কক আউট হওয়ার পর। ডি কক আউট হওয়ার সময় তাঁর রান ছিল ৩৬ বলে ৫৩। এরপর হাসানকে এক ছক্কার পরের ওভারে মোস্তাফিজকে মারলেন দুই ছক্কা ও এক চার। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হওয়ার আগেও প্রথম বলে হাসানকে আরেকটি ছক্কা মেরে ফেলেছেন। শেষ পর্যন্ত আউট হলেন ৪৯ বলে ৯০ রানের নির্মম ইনিংস খেলে।
বাংলাদেশের বোলারদের তবু নিস্তার থাকলে তো! ডেভিড মিলার ছিলেন না! তিনি আর অন্যদিকে চুপ থাকলেন না। ডি কক আউট হওয়ার পর নেমেছেন, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ১৫ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ৩৪ রান করে।
১৫+৯০+১৭৪ = ২৯৮ রান তো এই তিন ব্যাটসম্যানই করে ফেলেছেন, মাত্র ২০৪ বলে। এঁদের এই ‘মাত্র ২৯৮ রানের’ পাশে এইডেন মার্করামের ৬৯ বলে ৬০ রানের ইনিংসটি তাই ‘১০০০ টাকা কিছুই না’ হয়ে থাকছে আর কী!
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ