চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বারার স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের কাছে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে। আর ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। তবে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে মুশফিকুর রহিমের ফিফটিতে বিপর্যয় সামাল দেয় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শেষ দিকের ৪১ রানে ভর করে বাংলাদেশের পুঁজি দাঁড়ায় নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৫ রান।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরুতেই লিটন দাসকে হারায় বাংলাদেশ। ট্রেন্ট বোল্টের সুইং কমাতেই হয়তো পপিং ক্রিজের বাইরে দাঁড়ান লিটন দাস। ইনিংসের প্রথম ডেলিভারিও পান লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে যুতসই জায়গায়। কিন্তু শটটি ঠিকঠাক খেলতে পারেননি লিটন। তার উড়িয়ে মারা ফ্লিক শটে ডিপ ফাইন লেগে লাফিয়ে উঠে দারুণ ক্যাচ নেন ম্যাট হেনরি। প্রথম বলে বিদায় ঘণ্টা বাজে বাংলাদেশের ওপেনারের।
ক্যারিয়ারে ১২তম বারের মতো শূন্য রানে ফিরলেন। আর পঞ্চম বার ফিরলেন প্রথম বলে আউট হয়ে। ইনিংসের প্রথম বলে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আউট হলেন লিটন। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে আউট হয়েছিলেন ইনিংসের প্রথম বলে। তবে ম্যাচের প্রথম বলেই আউট হলেন এবারই প্রথম।
শুরুতে মুভমেন্টের দেখা পেয়েছেন। তবে ম্যাট হেনরি ঠিক কাজে লাগাতে পারেননি। ৩ ওভার পর তাকে সরিয়ে আনা হয়েছে লুকি ফার্গুসনকে। শরীর থেকে বেশ আগবাড়িয়ে ফ্লিক করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে সরাসরি ক্যাচ দিয়ে থেমেছেন তামিম। শুরুটা ভালোই মনে হচ্ছিল, কিন্তু সেটি শেষ হলো আগেভাগেই। ইনিংসের ৮ম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৪০ রানের মাথায় ১৭ বলে ১৬ রান করে ফেরেন তিনি।
এরপর ব্যাট হাতে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মিরাজকে সঙ্গী করে দুই ওপেনারকে হারানোর চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। তবে ১২তম ওভারে দলীয় ৫৬ রানে ফেরেন মিরাজও।
লুকি ফার্গুসন পেয়েছেন দ্বিতীয় উইকেট। নিউজিল্যান্ড পেয়েছে তৃতীয়। কাজে এসেছে শর্ট বল। ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েছেন মিরাজ। ৩০ রান করতে খেলেছেন ৪৬ বল। বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে ৫৬ রানে। ম্যাচের ১২তম ওভার শেষ হয়নি।
এরপর ব্যাট হাতে আসেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে তার সঙ্গে জুটি গড়ার আগেই ফিরে গেছেন ছন্দে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তও। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৩তম ওভারে বল হাতে গ্লেন ফিলিপসকে এনেছেন কেইন উইলিয়ামসন। ফিলিপস সফল প্রথম বলেই! একটু বাড়তি বাউন্সের বলে ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ধরা পড়েছেন নাজমুল, সেখানে থাকা ডেভন কনওয়ে নিয়েছেন দারুণ ক্যাচ। এ পিচে বাউন্স আছে, সেটি নিশ্চিতই। তবে নাজমুল যেন ভুলে গিয়েছিলেন সেটিই। ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে তাঁর ব্যাটের কানায় লেগেই উঠেছে ক্যাচ। ৮ বলে ৭ রান করে শান্ত ফিরলে বাংলাদেশ হারাল চতুর্থ উইকেট।
ব্যাট হাতে যখন উইকেটে আসলেন তখন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আর সেই ধংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ৫২ বলে তুলে নিলেন অর্ধশতক। বিশ্বকাপে এটি মুশফিকের টানা দ্বিতীয় অর্ধশতক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও ফিফটি করেছিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও পেয়ে গেলেন ফিফটি।
ইনিংসের ১৩তম ওভারে ব্যাট হাতে নামতে হয়েছে মুশফিকুর রহিমের। যখন ব্যাট হাতে নামেন তখন বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ৪ উইকেট হারিয়ে রান ৫৬। অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানকে সঙ্গী করে বিপর্যয় সামাল দেন মুশফিক।
সাকিব ধীরে সুস্থে ব্যাট চালাচ্ছিলেন। তবে অপরপ্রান্তে রানের চাকা সচল রাখেন মুশফিকুর রহিম। ৫২ বলে ৫টি চার আর দুটি ছক্কায় মুশফিকুর রহিম পূর্ণ করেন অর্ধশতক। এটি তার ৪৮তম ওয়ানডে অর্ধশতক।
পঞ্চম উইকেটে সাকিব আল হাসানকে সঙ্গী করে ৯৬ রানের জুটি গড়েন। সাকিব ৪০ রান করে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরলে ভাঙে জুটি। এরপর তাওহিদ হৃদয়কে বেশি সময় সঙ্গ দিতে পারেননি তিনি। দলীয় ১৭৫ রানে মুশফিকুর রহিম ফেরেন ব্যক্তিগত ৭৫ বলে ৬৬ রানে ফেরেন। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ উইকেটের এক প্রান্ত আকড়ে ধরেন। আর শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান। তার ৪৯ বলে ৪১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে বাংলাদেশ পায় ২৪৫ রানের পুঁজি।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন লুকি ফারগুসন। এছাড়া দুটি করে উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট এবং ম্যাট হেনরি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ২৪৫/৯ (মাহমুদউল্লাহ ৪১*, মোস্তাফিজ ৪, তাসকিন ১৭, মুশফিকুর রহিম ৬৬, তাওহীদ হৃদয় ১৩, লিটন ০, তানজিদ হাসান ১৬, মেহেদী হাসান ৩০, নাজমুল হোসেন শান্ত ৭, সাকিব আল হাসান ৪০)
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ