
ক্রিকেটে জার্সি নাম্বারের প্রচলন শুরু হয়ে অনেক পরে। ১৯৯৫-৯৬ সালে ওয়ার্ল্ড সিরিজ কাপ-এ অস্ট্রেলিয়া সর্বপ্রথম ক্রিকেটে জার্সি নাম্বার ব্যবহার শুরু করে। প্রথম দিকে ক্রিকেটাররা চাইলে প্রতি টুর্নামেন্ট শেষে জার্সি নাম্বার পরিবর্তন করতে পারতো কিন্তু কয়েক বছর পরেই সিংহভাগ ক্রিকেটাররা তাদের পুরো ক্যারিয়ার নির্দিষ্ট একটি জার্সি নাম্বার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। তবে চাইলে যে কোনো সময় ক্রিকেটার বোর্ডের সাথে কথা বলে তার জার্সি নাম্বার বদলে নিতে পারেন। বিশ্বকাপে জার্সিতে নাম্বারের প্রচলন শুরু হয় ‘৯৯ এর বিশ্বকাপে। সে বিশ্বকাপে ১ নাম্বার জার্সিটি বরাদ্দ ছিলো অধিনায়কের জন্য এবং ২ থেকে ১৫ নাম্বার জার্সি স্কোয়াডের বাকি সদস্যরা ব্যবহার করতো। যদিও এর ব্যতিক্রম ঘটান তৎকালীন আফ্রিকান অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রোনিয়ে। ১ এর বদলে তিনি বেছে নেন ৫ নাম্বার জার্সি আর। ১ নাম্বার জার্সিটি গায়ে তুলেন ওপেনার গ্যারি কারস্টেন। কিছুদিন পর কিছু পরিবর্তনের সাথে ক্রিকেটাররাও ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত যে কোনো জার্সি নাম্বার ব্যবহারের স্বাধীনতা পেয়ে যান। ক্রিকেটে ৩ সংখ্যার জার্সি নাম্বারও ব্যবহৃত হতে দেখা গিয়েছে। যেমন, ক্রিস গেইল ৩৩৩, মুরালিধরন ৮০০।
মাশরাফি কেন ২, সাকিব কেন ৭৫: ‘২’, ‘৭৫’…সংখ্যাগুলো শুধুই সংখ্যা নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘২’ বললেই মাশরাফি বিন মুর্তজা, ‘৭৫’ মানে সাকিব আল হাসান। মাশরাফি শুরুতে পেয়েছিলেন ‘২০’ নম্বর। পরে ফেলে দিয়েছেন শেষের শূন্যটা। এখন ‘২’ শুধু সংখ্যাই নয়, অনেকের কাছে তা ভীষণ প্রেরণাদায়ী। সাকিবের বিখ্যাত হয়ে যাওয়া ‘৭৫’ নম্বরের অবশ্য তেমন রহস্য নেই। এক সাক্ষাৎকারে বাঁহাতি অলরাউন্ডার বলেছেন, ‘যখন জার্সিটা দেওয়া হয়, তেমন কোনো বিশেষ কারণ ছিল না। কিন্তু এখন তো এটা স্পেশাল। বোর্ড থেকে দিয়েছিল। এখন চাইলে পরিবর্তন করা যায়, কিন্তু করি না।’ তামিম শুরুতে ‘২৯’ পরতেন। পরে সেটি বদলে নেন ‘২৮’। বদলের কারণ বললেন বাঁহাতি ওপেনার, ‘সব সময়ই ২৮ নিতে চাইতাম। যখন জাতীয় দলে ঢুকি, তখন এই নম্বরটা আরেকজনের ছিল। অনেক বছর তাই আমার জার্সি ২৯ ছিল। পরে জিজ্ঞেস করি, ২৮ পাওয়া যাবে কি না। তখন পেয়ে যাই।’ মুশফিকুর রহিমের আবার ‘৯’-এর প্রতি ভীষণ দুর্বলতা। তাঁর আদর্শ ব্রায়ান লারা এই নম্বরটাই ব্যবহার করতেন। কিন্তু ‘৯’ না হয়ে কেন মুশফিকের জার্সি হলো ‘১৫’? মুশির উত্তর, ‘বোর্ড থেকে ১৫ দিয়েছে, সেটাই রেখে দিয়েছি। লারার ‘৯’ আমার ভীষণ পছন্দ ছিল। কিন্তু তখন ওটা আশরাফুল ভাই পরতেন। আমি অবশ্য কিছুদিনের জন্য ৯ নম্বর পরেছি। পরে আবার ১৫ নম্বরে ফিরে গেছি।’ পছন্দের জার্সি পাননি মাহমুদউল্লাহও। প্রিয় খেলোয়াড় অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের ‘৩৯’ তাঁর বেশি ভালো লাগত। কিন্তু পরে ‘৩০’-এর সঙ্গে কিভাবে যেন মাহমুদউল্লাহর বন্ধনটা দৃঢ় হয়ে গেল, ‘আমি চাইনি, জানিও না, ৩০ নম্বর পেলাম। এই জার্সিতে অনেক সাফল্য পেয়েছি। নম্বরটা তাই ভীষণ ভালো লেগে গেছে।’ বিকেএসপিতে পড়ার সময় সৌম্য সরকারের রোল নম্বর ছিল ৪৫৯। প্রিয় শিাপ্রতিষ্ঠানের ভালোবাসা থেকেই বাঁহাতি ওপেনারের জার্সি নম্বর ৫৯। অবশ্য এ জন্য তাঁকে ‘৪’ ফেলে দিতে হয়েছে। নিজেকে ‘নম্বর ওয়ান’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই কি ‘১’ নিয়েছেন সাব্বির রহমান? একগাল হাসলেন বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, ‘নাম্বার ওয়ান হতে হবে, এমন ভাবনায় ‘১’ নেওয়া নয়। তবে এখন ভাবনায় ঢুকে গেছে, ভবিষ্যতে এক নম্বরই হতে হবে। এটা আমার সৌভাগ্যের জার্সি। এর আগে ৯৯ ও ৬৫ নম্বর পরেছি। তবে ১ নম্বরই বেশি মানিয়ে গেছে।’ মুস্তাফিজুর রহমানের ‘৯০’, রুবেল হোসেনের ‘৩৪’ নম্বরের অবশ্য বিশেষ কোনো গল্প নেই। বিসিবি থেকে দেওয়া সংখ্যাটাই আপন করে নিয়েছেন তাঁরা।