চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

বৃথা গেল মুশফিকের অপরাজিত শতক

ওর্য়ানারের কাছে হারল বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক

২১ জুন, ২০১৯ | ২:৪২ পূর্বাহ্ণ

মুশফিক পেলেন দুরন্ত শতক। টাইগাররা পেল ওয়ানডেতে রেকর্ড সংগ্রহ। তবু পারল না বাংলাদেশ। শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় তুলে নিতে ব্যর্থ হলেন সাকিব মুশফিকরা। শুরুতে রানের চাকায় পৃষ্ট হওয়া টাইগাররা শেষ পর্যন্ত আর লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারেননি। নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে অজিদের কাছে ৪৮ রানে হারলেন সাকিব মুশফিকরা। গতকাল ব্যাট করতে নেমে ডেভিড ওয়ার্নারের এক বিধ্বংসী শতকে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮১ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। আকাশছোঁয়া টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকের অপরাজিত শতক, মাহমুদউল্লাহ ও তামিমের অর্ধশতকে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩৩ রান সংগ্রহ করে। ম্যাচে হারলেও ওয়ানডে ম্যাচে টাইগাররা সবচেয়ে বড় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে। এর আগে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ৬ উইকেটে সর্বোচ্চ ৩৩০ রান করে রেকর্ড গড়েছিল টাইগাররা। গতকাল সেটাকেও ছাড়িয়ে গেলেন মুশফিকরা। তবে টাইগারদের ছোট ছোট কিছু ভুলে আগেই ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের। মাশরাফির বলে ১০ রানে থাকা ওয়ার্নারের ক্যাচ ছেড়েছিলেন সাব্বির। সে ওয়ার্নারই কাল গড়ে দিলেন ম্যাচের পার্থক্য। তাঁর দুরন্ত ইনিংসে পাহাড় চূড়ায় উঠে অজিরা। যেখানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন মাশরাফিরা। ম্যাচে শুরুতে বাংলাদেশের নিয়মিত বোলাররা ব্যর্থ হলেও বল হাতে চমক দেখিয়েছেন সৌম্য সরকার। পার্টটাইমার হিসেবে ৮ ওভারে ৫৮ রানে নিয়েছেন তিন উইকেট। টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ওয়ার্নার, ফিঞ্চ ও খাজাকে ফেরান সৌম্য। দুর্দান্ত এ জয়ে ছয় ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠল অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে সমান সংখ্যক ম্যাচে ৫ পয়েন্টে থাকা বাংলাদেশ রইল আগের পঞ্চম স্থানে। হারলে সেমিফাইনালের সম্ভাবনা এখনও টিকে আছে বাংলাদেশের
নটিংহামের গ্যালারির প্রায় পুরোটাই ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। নেচে গেয়ে পুরো ম্যাচে টাইগারদের সমর্থন দিয়ে গেছেন তারা। জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামা টাইগারদের মাথার উপর ছিল রানের বিশাল পাহাড়। কিন্তু শুরুতে দুর্ভাগ্যজনক বিদায় সৌম্য সরকারের। বোলার হিসেবে চমক দেখানো হার্ডহিটার সৌম্যের ব্যাট হাসলো না। নামের পাশে ১০ রান যোগ হতে না হতেই রান আউট হয়ে ফেরেন তিনি। দারুণ ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসান এরপর জুটি গড়েন তামিম ইকবালের সঙ্গে। তামিম ধীর গতিতে খেললেও সাকিব করছিলেন স্বভাবসুলভ ব্যাটিং। এ দুই অভিজ্ঞর ব্যাট ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু ৪১ রানে মার্কাস স্টয়নিসের বলে ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। এরপর তামিমের সাথে জুটি গড়েন মুশফিকুর রহিম। ২১ তম ওভারে নিজের অর্ধশতক তুলে নেন তামিম। ১১৪ রানের মাথায় স্টার্কের বল বুঝে উঠার আগে উড়ে যায় স্টাম্প। তবে এর আগে ৭৪ বলে ৬টি চারে ৬২ রান করেন তামিম। এরপর মুশফিক-লিটন দাস জুটি ভালোই শুরু করেছিলেন। ৩০তম ওভারে লিটনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন এডাম জাম্পা। ১৭ বলে ৩ চারে তিনি ২০ রান করেন। ১৭৪ রানে চার উইকেট হারানোর পর চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ১২৭ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়েন মুশফিক মাহামুদউল্লাহ। কিন্তু পাহাড়সম রানের বিপরীতে রানের গতিও সেভাবে বাড়াতে পারেনি। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রানরেটও বেড়ে যাচ্ছিল দ্রুত গতিতে। দলীয় ৩০২ রানে কোল্টার নাইলের বলে কামিন্সের তালুবন্দী হয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। ৫০ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৯ রান করেন তিনি। পরের বলেই শূন্য রানে ফেরেন সাব্বির রহমান। একজন বেশি ব্যাটসম্যান খেলানোর ভাবনা কাজে আসেনি বাংলাদেশ। এরপর সমান ৬ রান করে মেহেদি মিরাজ ও মাশরাফি ফিরে গেলেও ১০২ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। ৯৭ বলে ৯টি চার ও একমাত্র ছক্কায় তিনি এ রান সংগ্রহ করেন। অজিদের পক্ষে স্টার্ক, নাইল ও স্টয়নিস ২টি করে এবং জাম্পা ১টি উইকেট নেন।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বেশ সতর্কতার সঙ্গে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। দুই ওপেনার এরন ফিঞ্চ আর ডেভিড ওয়ার্নার বাংলাদেশি বোলারদের দেখেশুনে খেলছিলেন। ৫ম ওভারে মাশরাফির বলে ডেভিড ওয়ার্নার কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে বল ভাসালেন। দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন বলে গণ্য সাব্বির বুঝতেই পারলেন না বলের মতিগতি। হাত ফসকে গেল। ওয়ার্নার সেই যে জীবন পেলেন আর থামলেন না। প্রথমে এরন ফিঞ্চের সাথে গড়লেন বড় রানের ভীত। ২০ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান বিনা উইকেটে ১১৭। অবস্থা বেগতিক দেখে পরের ওভারে পার্টটাইমার সৌম্য সরকারের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। অধিনায়কের এমন বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত কাজে লেগে যায় সঙ্গে সঙ্গে। নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে এসে এরন ফিঞ্চকে শর্ট থার্ড ম্যানে রুবেল হোসেনের ক্যাচ বানান সৌম্য। ফিঞ্চ ৫১ বলে করেন ৫৩ রান। ১২১ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙায় স্বস্তি ফিরে বাংলাদেশ শিবিরে। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সে স্বস্তিকে আবারও অস্বস্তিতে রূপ দেন ওয়ার্নার আর উসমান খাজা। এর মধ্যে ওয়ার্নার এবারের বিশ্বকাপে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরিও তুলে নেন। সেটা দেড়শোতে নিয়েও থামেননি। ১৯২ রানের বিশাল এই জুটিটি শেষপর্যন্ত ভাঙেন ওই সৌম্য সরকারই। যেন ফিঞ্চের আউটের পুণরাবৃত্তি। শর্ট থার্ড ম্যানে রুবেলই নিয়েছেন ক্যাচ। ১৪৭ বলে ১৪ বাউন্ডারি আর ৫ ছক্কায় ওয়ার্নারের উইলো থেকে আসে ১৬৬ রান। এরপর উইকেটে এসে ছোটখাটো এক ঝড় তুলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ৪৭তম ওভারে এসে আবারও চমক দেখান সৌম্য। ১০ বলে ২ চার আর ৩ ছক্কায় ৩২ রান করা ম্যাক্সওয়েল শর্ট ফাইন লেগে বল ঠেলে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। রুবেল হোসেন সরাসরি থ্রোতে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন। ওই ওভারেরই পঞ্চম বলে উসমান খাজাকে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান সৌম্য। ৭২ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ৮৯ রানে সাজঘরের পথ ধরেন খাজা, সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে। পরের ওভারের প্রথম বলে স্টিভেন স্মিথকে মাত্র ১ রানেই এলবিডব্লিউ করেন মুস্তাফিজুর রহমান। শেষদিকে মার্কাস স্টয়নিসের ১৭ আর এলেক্স ক্যারির ১১ রানে ৩৮১ তে থামে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটি যে কোন দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। আগের দুটি সংগ্রহ ইংল্যান্ডের। ২০০৫ সালে ৪ উইকেটে ৩৯১ এবং এ বিশ^কাপে ৬ উইকেটে করা ৩৮৬ রান করে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল পার্টটাইমার সৌম্য সরকারই। ৮ ওভারে ৫৮ রান খরচায় তিনি নেন ৩টি উইকেট। বাকি একটি উইকেট মুস্তাফিজের।
অস্ট্রেলিয়া : ৩৮১/৫ (৫০)
ব্যটিং
ডেভিড ওয়ার্নার-কট রুবেল বল সৌম্য- ১৬৬
এরন ফিঞ্চ-কট রুবেল বল সৌম্য- ৫৩
উসমান খাজা-কট মুশফিক বল সৌম্য- ৮৯
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল-রানআউট রুবেল- ৩২
মার্কস স্টইনিশ-অপরাজিত- ১৭
স্টিভ স্মিথ-এলবিডব্লিউ মুস্তাফিজ- ১
এলেক্স ক্যারি-অপরাজিত- ১১
বোলিং
বোলার-ওভার-রান উইকেট
মাশরাফি ৮-৫৬-০
মুস্তাফিজ ৯-৬৯-১
সাকিব ৬-৫০-০
রুবেল ৯-৮৩-০
মিরাজ ১০-৫৯-০
সৌম্য ৮-৫৮-৩
স্কোর:
বাংলাদেশ :৩৩৩/৮ (৫০)
তামিম ইকবাল- বোল্ড স্টার্ক- ৬২)
সৌম্য সরকার-রানআউট ফিঞ্চ- ১০
সাকিব আল হাসান-কট ওয়ার্নার বল স্টয়নিস- ৪১
মুশফিকুর রহিম-অপরাজিত -১০২
লিটন দাস-এলবিডব্লিউ জাম্পা-২০
মাহামুদউল্লাহ-কট কামিন্স বল নাইল-৬৯
সাব্বির রহমান- বোল্ড নাইল-০
মেহেদি মিরাজ-কট ওয়ার্নার বল স্টার্ক-৬
মাশরাফি মর্তুজা-কট ম্যাক্সওয়েল বল স্টয়নিস-৬
বোলিং
বোলার-ওভার-রান উইকেট
স্টার্ক-১০-৫৫-২
কামিন্স-১০-৬৫-০
ম্যাক্সওয়েল-৩-২৫-০
নাইল-১০-৫৮-২
স্টয়নিস-৮-৫৪-২
জাম্পা-৯-৬৮-১

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট