চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

ধীরে হলেও অন্যায়কারী প্রাপ্য শাস্তি ঠিকই পায়

ফারজানা তাবাসসুম

২৭ মে, ২০২৪ | ১১:১৯ অপরাহ্ণ

Rafsan the ChotoBhai কে নিয়ে Saiyed Abdullah এর ভিডিওটা উইকেন্ডে দেখবো বলে সেভ করে রেখেছিলাম। দেখতে বসে মনে হল এ জিনিস পপকর্ন ছাড়া দেখে মজা নেই।

 

Suits(Legal drama) এর যে এপিসোড দেখছিলাম, তারচে কোন অংশে কম এক্সাইটিং না ওর ভিডিওটা। তার ওপর এটা ফিকশন না। ফ্যাক্টস। দেখতে দেখতে একটু পরে মনে হল ও নিশ্চয়ই খুব দারুণ বিতার্কিক ছিল। ও যদি কোন কোর্টরুম ড্রামা বানায়, আমি দেখবো।

 

kidding apart, ছেলেটা আমার ইউনিভার্সিটির জুনিয়র ব্যাপারটা ভাবতেই প্রাউড লাগছিল। কি দারুণভাবে হোমওয়ার্ক করে বসে ভিডিওটা বানিয়েছে আবদুল্লাহ! প্রতিটা কথা কি ভদ্রভাবে যুক্তি দিয়ে বলে গেলো!

 

একজন সাধারণ মানুষ, যে আইন বা অর্থনীতি তেমন বোঝে না, সেও দিব্যি বুঝে যাবে ও কি বলছে। এবং কেন সে ঋণখেলাপিদের নিয়ে কথা বলছে সে কারণটা শুনে ভীষণ শ্রদ্ধা তৈরি হল ওর জন্য।

 

মাত্র ২৪ হাজার টাকার ঋণ শোধ করতে না পারার কারণে ১২ জন কৃষককে জেলে যেতে হয়েছিল এই ব্যাপারটা প্রচণ্ড কষ্ট দিয়েছে ওকে। অথচ কোটি কোটি টাকার ঋণখেলাপিরা দিব্যি ল্যাভিশ জীবন কাটায়।

 

আমার দেশের কৃষকদের নিয়ে কেউ ভাবছে, এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তাও এমন একজন শিক্ষিত তরুণ, ব্যাপারটা খুব আশাজাগানিয়া।

 

রাফসানের বাবা-মাকে তাদের ড্রিম কার কিনে দেয়ার ব্যাপারটা খুব চমৎকার লেগেছিল আমার। সেটা নিয়ে পোস্টও করেছিলাম। তখনও জানতাম না ওর বাবার ঋণখেলাপি হবার ব্যাপারটা।

 

কেউ তাঁর বাবা-মাকে তাদের স্বপ্ন পূরণ করে দিচ্ছে সেটা তো অবশ্যই সুন্দর ব্যাপার। তখনকার তর্ক ছিল পড়াশোনা ওভাররেটেড কিনা তা নিয়ে। সেটা নিয়ে লিখেছিলাম।

 

কারণ আমি কোনদিন বিশ্বাস করি না লেখাপড়া শেখার, সত্যি সত্যি শিক্ষিত হবার কোন বিকল্প আছে। আব্দুল্লাহর ভিডিও আবার প্রমাণ করে দিল শিক্ষিত মানুষেরা কিভাবে দেশের জন্য, পৃথিবীর জন্য প্রয়োজনীয়।

 

রাফসান বলেছে- ওরা দুই ভাই এ ঋণ পরিশোধ করবে। আশা করি কথা রাখবে। তার পেছনে আব্দুল্লাহর সাহসী কণ্ঠের অনেকটা অবদানও নিশ্চয়ই থাকবে।

 

ওর ভিডিওতে এমন অনেক রাঘব বোয়ালদের কথা বলা হয়েছে যারা দেশের হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছে। এদের অনেকে কানাডায় আমার শহরেই থাকে। একটা এলাকাই নাকি ‘বেগম পাড়া’ নামে পরিচিত হয়েছে কারণ তাদের বেগমরা ওখানে ল্যাভিশ জীবনযাপন করেন।

 

সে টাকায় তাদের সন্তানরা কানাডার ভীষণ এক্সপেনসিভ আন্ডারগ্র্যাডের পড়াশোনা অ্যাফোর্ড করতে পারেন। সে টাকা তাদের না। সে টাকা আমার দেশের জনগণের। সে টাকা ফেরত না দিয়ে এই ঋণখেলাপিরা তার ভোগান্তি ভোগাচ্ছে দেশের সাধারণ, সৎভাবে বাঁচতে চাওয়া মানুষদের।

 

আবদুল্লাহকে অনেকে প্রশ্ন করেছে সে কেন দেশের বড় বড় ঋণ খেলাপিদের নিয়ে কথা বলে না। সে বলেছে রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধেই সে সবচে বেশি কথা বলে। এরপর পালটা প্রশ্ন ছুঁড়েছে সবার দিকে। ‘দেশটা আপনাদেরও না? আপনাদেরও তো দায়িত্ব আছে, তাই না?’ সামাজিকভাবে ঋণখেলাপিদের বয়কট করার কথা বলেছে।

 

ও যেটা করেছে সেটা সিটিজেন জার্নালিজম। আরও অনেকে ওর পাশে দাঁড়ালে কি চমৎকার ব্যাপার হতো। ঋণ করে ঘি খাওয়ার জাতিগত যে কালচার, সেটা আস্তে আস্তে হয়তো কমে আসতো।

 

ছেলেটা আমার ইউনিভার্সিটির জুনিয়র। ভাবতেই কি গর্ব হচ্ছে আমার। সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষরা বোধহয় এমন হয়। সভ্যভাবে, যুক্তি দিয়ে ন্যায়ের কথাটা বলতে পারে তারা! অনেক কিছু শিখেছি ভাইটার কাছ থেকে।

 

I know I’m late to the party but man oh man! I’m glad I got to know about Saiyed Abdullah . He knows what he’s talking about.

 

একটা কথা আছে, “The mills of the gods grind slowly but exceedingly fine. অর্থ হচ্ছে, হয়তো অনেক সময় লাগে কিন্তু লোকে তার প্রাপ্য শাস্তি ঠিকই পায়।

 

এটার সাথে মিলিয়ে বলা হয় যে, জাস্টিসের চাকাও খুব স্লোলি ঘোরে। ভাবতে ভালো লাগছে কেউ কেউ সে চাকা ঘোরাতে তাদের অবদানটুকু রাখছে।

 

লেখিকা: কানাডা প্রবাসী লেখক এবং শিক্ষক।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট