আমার বসের বয়স ৬০ হল রিসেন্টলি। তরুণ বয়সে কানাডায় এসে নিজের বিজনেস দাঁড় করিয়েছে। এখন রিটায়ারমেন্টের জন্য রেডি হচ্ছে ধীরে ধীরে। ছেলেকে রেডি করছে কোম্পানির হাল ধরার জন্য।
দৌড়ঝাঁপের মাঝেও, এ বয়সে এসেও মাঝে মাঝেই লাঞ্চ ব্রেকে সে বউকে নিয়ে ডেটে যায়। তার ওপর এ বছরের শুরু থেকে দেখছি প্রতি মাসে ১/২ সপ্তাহের জন্য দুজন মিলে বিদেশে ঘুরতে চলে যাচ্ছে।
এই তো সেদিন আরুবা ঘুরে এসে ফ্লোরিডা গেলো। ফিরে এসে ইউরোপ ট্যুরে ইতালি, গ্রিস ঘুরে এলো। বউ আমালফি কোস্টে যেতে চেয়েছিল। ওখানে তোলা দুজনের একটা ছবি এখন ওর ডেস্কে।
গতকাল দুপুরে বউ এসে তাকে পিক করে লাঞ্চে নিয়ে গেলো। যাবার আগে কিছুক্ষণ বসে বসে গুটুর গুটুর করে গল্প করলো দুজনে।
কাপল গোল এর পোস্টারে বসিয়ে দেয়ার মতো মানুষ দুজন। ওই যে প্ল্যান থাকে না রিটায়ার করার পর দুনিয়া ঘুরতে বেরোবে? তাই করছে ওরা। ফাঁকে ফাঁকে যখন যতটা সম্ভব একসাথে সময় কাটাচ্ছে।
হুট করে এসে বরকে সারপ্রাইজ দিচ্ছে বউ। লাঞ্চে নিয়ে যাচ্ছে। সকালে যাকে বাড়িতে রেখে বেরিয়েছে সে অফিসে এলে তাকে কি সুন্দর করে জড়িয়ে ধরছে যেন কতদিন দেখা হয়নি!
ওদের যতবার দেখি আমার মনে হয় ভালোবাসা আসলে দেশভেদে বদলায় না। ভালোবাসা প্রকাশের ধরণ বদলায় কিন্তু কমিটমেন্ট সব দেশে, সবার জন্যই একই রকম দেখতে।
ভালবাসতে জানলে বয়সের সাথে সাথে গায়ের চামড়া কুঁচকে গেলেও ওই মানুষটাকে দেখলে মুগ্ধতা কমে না। তার পাশে বসলে বুকের ভেতর ঠাণ্ডা আরাম, আরাম বোধ হয়। এতবার ধরা হাতটা ধরতে ভীষণ রকম শান্তি লাগে। সাদা চুলেও ওই মানুষটাকে তরুণ বয়সের মতোই হ্যান্ডসাম লাগে।
ছেলে-মেয়েদের বড় করে নিজেদের রাস্তায় তুলে দিয়ে নিজেরা আবার কিশোর বয়সের প্রথম প্রেমের মতো করে দু’জন দুজনের হাত ধরে ঘুরে বেড়াতে নিশ্চয়ই খুব ভাগ্যবান হতে হয়, নিশ্চয়ই শুরুর দিকের ভালোবাসাকে ভীষণ যত্ন করে ঝেড়ে পুছে রাখতে হয় যেন সময়ের ছোবলে সেটা মলিন সোয়েটারের মতো অবহেলায় ক্লজেটে পড়ে না থাকে!
এতো বছরের সংসার জীবনে কত কি বদলেছে দু’জনের। কেবল হাতে ধরা হাতটা একই রয়ে গেছে। এখন সে হাতে আরও অনেক বেশি নির্ভরতা, বিশ্বাস।
ওদের দেখলেই টের পাই আমি আদতে একজন hopeless romantic… আর ভালোবাসা ভারী সুন্দর দেখতে!
লেখক: কানাডা প্রবাসী লেখক এবং শিক্ষক
পূর্বকোণ/এএইচ