চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ্ব কাঁপানো সেই ৭ মার্চ

মিতা পোদ্দার

৭ মার্চ, ২০২৪ | ১১:৪৮ অপরাহ্ণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ইতিহাস বদলে দেওয়ার ভাষণ। এটি দুনিয়া কাঁপানো এক মহাকাব্য। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে একটি দেশের জন্ম হয়েছে- সেই ভাষণের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। রাজনীতির কবির কণ্ঠে সেই অমর কবিতা ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে প্রমাণ করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ এটি। বঙ্গবন্ধুর কালোত্তীর্ণ উদ্দীপ্ত ভাষণ ছিল মূলত স্বাধীনতার মূলমন্ত্র। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ লুকায়িত ছিল। আন্তর্জাতিক তাৎপর্য রয়েছে এমন বিষয়গুলোকে বিশ্ব আন্তর্জাতিক রেজিস্টারের মেমোরিতে তালিকাভুক্ত করা হয়- সেই হিসেবে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব আন্তর্জাতিক রেজিস্টারের মেমোরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রক্তঝরা অগ্নিঝরা রোদনভরা বসন্তের উত্তপ্ত ফাল্গুনের অপরূপ অপরাহ্ণে ঢাকার রমনার রেসকোর্স ময়দানের জনমহাসমুদ্রে ৭ মার্চ বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা পৃথিবী কাঁপানো ভাষণের টগবগে রক্তে আগুন জ্বলা বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। মাত্র ১৯ মিনিটের এই পৃথিবী কাঁপানো বজ্রকণ্ঠের ঐতিহাসিক জ্বালাময়ী ভাষণ ছিল বাঙালির হাজার বছরের আবেগ, হাজার বছরের স্বপ্নের বাণী, হাজার বছরের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন- যা ছিল বাঙালিকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। দীপ্ত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করলেন, ‌রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ্। এই ঐতিহাসিক ভাষণই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে-নির্দেশে মুক্তিপাগল বাঙালি জাতিকে হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং এই ভাষণের মধ্য দিয়েই বাঙালির ভবিষ্যত ভাগ্য স্পষ্ট নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।

স্মৃতির মণিকোঠায় ৭ মার্চ
লক্ষ কণ্ঠের শ্লোগানে শ্লোগানে মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী প্রকম্পিত হচ্ছে।শ্লোগানের সুর ছিলো – ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ ‘জয়বাংলা, জয়বাংলা’। বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি আর কালো মুজিব কোট পরিহিত বঙ্গবন্ধু যখন মঞ্চে ওঠে এলেন- তখন বাংলার উপস্থিত ১০ লক্ষাধিক বীর জনতা বজ্র নির্ঘোষে করতালি ও গগণবিদারী শ্লোগানের মধ্যে তাদের প্রিয় নেতাকে অভিনন্দন জানান- ‘বাঁশের লাঠি তৈরি কর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ- বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘পিন্ডি না ঢাকা- ঢাকা ঢাকা’, ‘জয়বাংলা- জয়বাংলা’, ‘জাগো জাগো, বাঙালি জাগো’। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ও ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করলেন, আজ বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়। …প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়বাংলা।
এই ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে যা নির্দেশ প্রদান করেছিলেন আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে ঘরে ফিরি। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট