চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

রমজানে সুস্থ থাকার খাদ্যাভ্যাস

সুমাইয়া শিলা

৬ মার্চ, ২০২৪ | ৪:০০ অপরাহ্ণ

আসছে রোজা। মুসলমানদের জন্য সব থেকে বেশি ইবাদত এবং বন্দেগীর মাস। তবে এছাড়াও আরেকটি প্লাস পয়েন্ট আছে- যারা ওজন কমাবেন বা খাদ্যাভ্যাস বদলাবেন বলে অনেক দিন ধরেই ভাবছেন, কিন্তু কিছুতেই হয়ে উঠছে না- তাদের জন্য রমজান একটা মোক্ষম সুযোগ। খাবারে কিছু ছোট ছোট পরিবর্তন আপনাকে আমূল পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম। তাহলে কি করবেন রোজায় বা কি করা উচিত সেটা নিয়েই আজকের আলোচনা।
১) ইফতারিতে চিনি দিয়ে তৈরি সকল প্রকার জুস/শরবত খাওয়া পরিহার করুন। মিষ্টির জন্য স্টেভিয়ার গুঁড়া ব্যবহার করুন।
২) ইফতারে জিলাপি, বেগুনি, আলুর চপ খাওয়ার চিন্তা আগে থেকেই বাদ দিয়ে সকল ধরনের ভাজা পোড়া এড়িয়ে চলুন। ভাজাপোড়া খাওয়া ঠিক না আমরা সবাই-ই জানি। কিন্তু লোভ সামলাতে পারি না। তাই বাসায় ভাজাপোড়া কেনা বা বানানো বন্ধ করুন ।
৩) খেজুর খান। খেজুর আপনাকে প্রচুর শক্তি জোগাবে। এছাড়াও ছোলাভাজা তো আছেই সেটাও শক্তি প্রদান করবে।
৪) ফ্রেশ ফল খাওয়া শুরু করুন এবং ফলের জুস না করে আস্ত চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। ফল খেতে বলেছি- তার মানে এই না একগাদা ফল খাবেন, খুব বেশি করে ইফতারে ফল খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। (তবে ডায়াবেটিস এবং পিসিওএস পেশেন্ট দের ফল না খাওয়াই ভালো)
৫) শরবতে চিয়া সিডস এবং ইসবগুল খুব ভালো অপশন। এটা বেশি সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়াও আছে ডাবের পানি, দই চিড়ার শরবত।
৬) সল্ট লাচ্ছি অর্থাৎ হালকা পিংক সল্ট দিয়ে তৈরি টক দই এর শরবত হতে পারে আপনার শরবতের হেলদি অল্টারনেটিভ। এতে আপনার পেট ঠিক থাকবে এবং শরীর ডিহাইড্রেটেড হবে না।
৭) রাতে ভাত কমিয়ে প্রোটিন ও ভেজিটেবল ইন্টেক বাড়াতে পারেন এবং সম্ভব হলে সাদা চালের ভাত পরিহার করুন। সব থেকে ভালো হয় রাতের খাবার বাদ দিয়ে ইফতারের পরে সরাসরি সেহরি খেলে। তবে হ্যা প্রোটিন ইনটেক বাড়ালে পানি খাওয়ার পরিমান অবশ্যই বাড়াতে হবে।
৭) সাহরিতে আমাদের অনেকেরই বেশি ভাত খাওয়ার প্রবণতা থাকে। এইটা ভয়ানক। কারণ আমাদের বডি খুব তাড়াতাড়ি গ্লুকোজ বার্ন করে এবং বেশি ভাত খাওয়ার জন্য আমাদের তাড়াতাড়ি ক্ষুধা লাগতে শুরু করে। তাই সাদা চালের ভাতের বদলে এমন কিছু খাবেন যেটা উপকারে আসবে এবং পেটও ভরিয়ে রাখবে। যবের ছাতু, বার্লি, ডিম, মাংস, মাছ, সবজি, বাদাম এক্ষেত্রে ভালো অপশন।
৮) সয়াবিন তেল খাওয়া একেবারেই বাদ দিবেন। রমজানে গ্যাস সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সবার আগে এটা বাদ দিন ও সরিষার তেল ব্যবহার করুন।
৯) ইফতারের পর কালোজিরা খেতে পারেন। ইফতারের শুরুতেই একগাদা খাবার না খেয়ে একটু বিরতি নিয়ে খাবার খাবেন। ইফতারে টক দই রাখতে পারেন তবে সাহরিতে টক দই পরিহার করবেন।
১০) রোজায় শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। তাই ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী যতটুকু পানি পান করার করে ফেলবেন। শুধু পানি না খেতে ইচ্ছা করলে ২/১ চিমটি পিংক সল্ট মিশিয়ে খেতে পারেন। এমনিতেই রোজায় শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়, তাই যতটা সম্ভব পারবেন ক্যাফেইন (চা, কফি) এভয়েড করবেন।
১১) ইফতারের পর ভালো ঘুমের জন্য ক্যামোমেইলটি খেতে পারেন। এতে শরীর চাঙ্গা থাকবে এবং ঘুম ভালো হবে
এই পরামর্শগুলো সবার জন্য। যারা চাচ্ছেন রোজার অসুস্থ না হয়ে কিভাবে সুন্দর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা যায়।
পরবর্তী পোস্টে রমজানে কিভাবে ওজন কমাবেন এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবেন সেটা নিয়ে আলোচনা করবো- ইনশাআল্লাহ।

লেখক: চাইল্ড এন্ড রিপ্রোডাক্টিভ নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট
বিএস, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট