চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

কাঁঠাল খাই না, অবশিষ্ট জীবনেও খাব না

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

২৭ জুন, ২০২৩ | ৫:২২ অপরাহ্ণ

আমি বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল খাই না। জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলোতেও খাব না, ইনশাআল্লাহ। ‌‘জাতীয়’ অনেক কিছু গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও কাঁঠাল দেশের ‘জাতীয় ফল’ হলেও খাওয়া বা না খাওয়া সম্পূর্ণভাবে নাগরিকের ঐচ্ছিক বিষয়। আলহামদুলিল্লাহ! কাঁঠাল না খেলে জেল-জরিমানার ভয় নেই। অতএব- আমি যেমন জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পিঠে আরোহণের জন্যে উতলা হই না, কাঁঠাল ভক্ষণেও কোনোরূপ আগ্রহ বোধ করি না। কাঁঠাল অনেকের প্রিয় ফল এবং আমার কয়েক সজ্জন বন্ধু ফেসবুকে কাঁঠালের প্রতি তাদের আবেগ ও আগ্রহ এবং ভক্ষণের আনন্দ বয়ান করেছেন। আল্লাহ তাদের আজীবন কাঁঠাল ভক্ষণের তওফিক দান করুন।
আমি কেন কাঁঠাল ভক্ষণ করি না, তার শানে নজুল রয়েছে। মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর বক্তব্য দানের ধরন সম্পর্কে যাদের জানা আছে, তারা বাংলাদেশের ফল সম্পর্কে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, “পশ্চিমারাই যে কেবল পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অবিচার করিয়াছে, তাহা নয়, আল্লাহও অবিচার করিয়াছেন। আল্লাহ পশ্চিম পাকিস্তানে দিয়াছেন আঙুর, আপেল, বেদানা, নাসপাতি, আর আমাদের দিয়াছেন কাডল, কামরাঙা, জাম্বুরা।”
কাঁঠাল খেয়ে কাঁঠালের আঠায় দাড়ি জট পাকিয়ে যাওয়ার কারণে দাড়ি মুন্ডন করার গল্প কমবেশি সকল বাঙালির জানা। বেচারি তার দাড়ি হারিয়ে দাড়ি কামানো কাউকে দেখেই বলতেন; “তুমভি কাঁঠাল খায়া, হামভি কাঁঠাল খায়া।” এ কাহিনির সত্যাসত্য যাই থাকুক, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের এক পূর্ব পাকিস্তানি সদস্যের (এমএনএ) কাহিনি কম মজার নয়। জাতীয় পরিষদের উক্ত সদস্য তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন যে, তিনি পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্যে যাওয়ার সময় ঢাকা থেকে একটি বা দুটি কাঁঠাল পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যান। রাওয়ালপিন্ডির এমপি হোস্টেলে তার রুমে খাটের নিচে কাঁঠালটি রাখেন।
পরদিন সকালে এমপি হোস্টেলের পাঠান ঝাড়ুদার এমপি সাহেবের অনুপস্থিতিতে তার রুম ঝাড়ু দিতে গিয়ে ভয়ে রুম থেকে ছুটে বের হয়ে যায়। তার শোরগোলে লোকজন জড়ো হয়। তার ভয় পাওয়ার কারণ জানতে চায়। লোকটি বলে, “সাব কি কামরে মে এক জানোয়ার ঘুস আয়া।” কি বিপদের কথা। সশস্ত্র প্রহরীরা আসে। কিভাবে জানোয়ারটিকে পাকড়াও বা হত্যা করবে, তার ফন্দিফিকির আঁটে। ইতোমধ্যে ওই রুমের বাসিন্দা এমপি সাহেবের আবির্ভাব ঘটে। তিনি এমপি হোস্টেলের ক্যান্টিনে নাশতা করতে গিয়েছিলেন।
রুমের সামনে ভিড় দেখে তিনি কারণ জানতে চান। তার রুমে কোনো জংলি জানোয়ার ঢুকে পড়েছে বলে তাকে জানানো হয়। তিনি জানতে চান, জানোয়ারটি কোথায়। ঝাড়ুদার তাকে জানায়, “পালং কি নিচে ছুপা হুয়া হ্যায়।” তিনি বুঝতে পারেন ঘটনাটি কি হতে পারে। প্রহরীদের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি রুমে প্রবেশ করেন এবং খাটের নিচ থেকে কাঁঠালটি বের করে সবাইকে দেখান যে, এটি কোনো জানোয়ার নয়, পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় ফল কাঁঠাল। সবাই বিস্ময়ের সঙ্গে এই আজব ফলটি উল্টে পাল্টে দেখে এবং জানোয়ার তূল্য ফল দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে।
আমার তিন কাঁঠাল প্রেমিক বন্ধুর মধ্যে কুমিল্লার শরিফ সাইদুর দুগ্ধ সহযোগে কাঁঠাল খাওয়ার কারণে তার উদরে বিপুল গ্যাস উৎপাদিত হয়ে অনেকটা ভয়াবহ অবস্থায় পড়ার কথা বলেছেন। ঢাকার প্রকাশক ছোটো ভাই তূল্য নেসার আইয়ুব গ্রামের বাড়ি থেকে তার পিতার (মরহুম) রোপন করা ও মায়ের যত্মে বেড়ে উঠা গাছের অতুলনীয় স্বাদের কাঁঠাল খাওয়ার পরিতৃপ্তির কথা বলেছেন। নিউইয়র্কে বসবাসকারী জাতিসংঘের আমলা কবি জহিরুল ইসলাম আমেরিকান কাঁঠাল খাওয়ার অভিজ্ঞতাকে “কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া একটা যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার মত” বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কাঁঠাল খাওয়ার যুদ্ধে তিনি হেরে যাওয়ার পাত্র নন। সাত-সকালে যুদ্ধে নেমে কচকচে রোয়ার চাউলা কাঁঠালের স্বাদ গ্রহণ করেছেন।
এই তিন কাঁঠাল প্রেমিকের কাঁঠাল খাওয়ার কাহিনিতে একজনের বর্ণনায় মন্তব্যকারীদের কাঁঠালে বিতৃষ্ণ একজনকে পেয়ে আমি আনন্দিত। তিনি তার মন্তব্যে লিখেছেন:
‘এই একটি ফলে আমার আসক্তি নেই বরং রয়েছে প্রবল অনিহা! আমি হজম করতে পারি না। গন্ধটা বিটকেলে মনে হয়। তাছাড়া, পৃথিবীর আর সব ফল আমি আগ্রহভরে খেয়ে থাকি। আমি সবাইকে, এমনকি এটাও প্রায়শঃ বলে থাকি যে, শুধু মাত্র ‘ফল আর শবজী’ খেয়ে আমি বোধহয় বেঁচে থাকতে পারবো।’

লেখক : আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু, নিউইয়র্ক

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট