চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত : পুরনো শত্রুতা নাকি ভূ-রাজনৈতিক চাল

আবসার মাহফুজ

২৯ জুলাই, ২০২৫ | ৩:১৭ অপরাহ্ণ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত বিরোধ শতবর্ষের পুরোনো ইতিহাস হলেও চলতি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুলাইয়ের ঘটনার পর তা নতুন এক মোড়ে নিয়েছে। ইতিহাস, ধর্ম, জাতিসত্তা এবং আধিপত্যের লড়াইয়ে বারবার উত্তাল হওয়া এই সীমান্ত আবারও রক্তাক্ত হয়েছে। প্রিয়াহ ভিহিয়ার মন্দিরকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিতর্ক এখন কেবল একটি নিছক ভূখণ্ড নিয়ে বিরোধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি ক্রমে বড়ধরনের সামরিক সংঘাতের দিকে এগুচ্ছে বলে মনে হয়। দুই দেশের সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ভারী অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে, পাল্টাপাল্টি হামলা চালাচ্ছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি ঘটছে। রাজনীতি, কূটনীতি, অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় এ সংঘাত শুধু দুই দেশের জন্য নয়, গোটা অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্যও এক উদ্বেগজনক সংকেত।

 

উল্লেখ্য, ফ্রান্স ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কম্বোডিয়া দখলে রেখেছিল। ফ্রান্সই প্রথম থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তরেখা মানচিত্রায়িত করেছিল। এতে কিছু বিরোধপূর্ণ সীমান্তরেখা সৃষ্টি হয়। ফলে থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে সময়ে সময়ে জাতীয়তাবাদী আবেগের উত্তাপে বিরোধ তীব্র হয়েছে। তবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার সীমান্তবিরোধ মূলত প্রিয়াহ ভিহিয়ার নামের এক প্রাচীন খেমার-হিন্দু মন্দিরকে ঘিরে। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো যখন এই মন্দিরকে বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করতে চায়, তখন থেকেই বিরোধ নতুন মাত্রা পায়। থাইল্যান্ড দাবি করে যে, মন্দিরটির আশপাশের জমি তাদের ভূখণ্ডে অবস্থিত, অথচ কম্বোডিয়া এই ঘোষণাকে তাদের ঐতিহাসিক অধিকার বলে দাবি করে। এতে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়, এবং ২০১১ খ্রিস্টাব্দেও যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রদত্ত আন্তর্জাতিক আদালতের রায় এই মন্দির কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডে পড়ে বলে জানায়, তবুও মন্দিরসংলগ্ন ভূমি এবং ভৌগোলিক সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাইল্যান্ড আপোষে যায়নি। তবে পরবর্তী এক দশক দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা থাকলেও তা পূর্ণমাত্রায় সংঘর্ষে রূপ নেয়নি। প্রসঙ্গত, চলতি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথম থেকেই থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সম্পর্ক ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারি মাসে কম্বোডীয় সেনাদের সীমান্তের কাছে থাইমন্দিরে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কূটনৈতিক বিরোধ তীব্র হয়। এরপর সতর্কবার্তা, সামরিক অভিযোগ, হত্যা ও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি দিনদিন ভয়াবহ হতে থাকে। মে মাসে প্রথম বড়ধরনের সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনা নিহত হন। জুনে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী থাইবিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট অবকাঠামোর ওপর নির্ভরতা কমানোর ঘোষণা দেন, বন্ধ করেন থাইপণ্য আমদানি ও সাংস্কৃতিক বিনিময়। এমনকি থাই সিনেমা সম্প্রচারও নিষিদ্ধ হয়। জুলাইয়ের শুরুতে থাই প্রধানমন্ত্রীর একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হলে থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। সেই শূন্যতায় তৈরি হওয়া রাজনৈতিক দুর্বলতা অনেকাংশে এ সংঘাতকে উস্কে দিয়েছে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা।

 

২৪ জুলাই ভোরে যে গোলাগুলির সূচনা হয়, তা কেবল একটি সংঘর্ষ নয়, বরং পরিকল্পিত এবং সমন্বিত সামরিক অভিযান বলেই চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। থাইল্যান্ডের দাবি, কম্বোডিয়া রকেট হামলা চালিয়ে তাদের সীমান্ত শহরে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। এক শিশু, এক সৈন্যসহ মোট ১২ জন নিহত হয় সেদিন। আহত হয় আরও ৩১ জন। থাইবাহিনী সঙ্গে সঙ্গে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে কম্বোডিয়ার ভেতরের দুটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় কম্বোডিয়াও আর্টিলারি হামলা অব্যাহত রাখে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ঘাঁটি গঠন, সেনা মোতায়েন এবং গোলাবারুদ সরবরাহ শুরু হয়েছে। যদিও কম্বোডিয়া উত্তেজনা বন্ধে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় রাজি, এবং ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং মালয়েশিয়া মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু থাইল্যান্ড বলেছে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থায় নয়, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতেই দ্বন্দ্বের অবসান হতে পারে। দেশটি এখনো তার অবস্থানে অনড় আছে। প্রসঙ্গত, দুই দেশের সামরিক শক্তির মধ্যে রয়েছে এক প্রকট অসমতা। থাইল্যান্ডের রয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার সক্রিয় সেনা, অত্যাধুনিক ট্যাংক ও কামান, শক্তিশালী বিমানবাহিনী এবং আধুনিক নৌঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষিত থাইবাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম অভিজ্ঞ বাহিনী হিসেবে বিবেচিত। বিপরীতে, কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী তুলনামূলকভাবে দুর্বল- সংখ্যায়, সরঞ্জামে ও প্রযুক্তিতে। কম্বোডিয়ার সেনাসদস্য মাত্র ১ লাখ ২৪ হাজার। তাদের নেই কোনো যুদ্ধবিমান, নেই আধুনিক ট্যাংক, এমনকি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও বেশ পুরোনো। একমাত্র শক্তি বলতে রয়েছে সীমিতসংখ্যক আর্টিলারি ও কিছু বহুমুখী হেলিকপ্টার, যা এই ধরনের সমরবিস্তারে কার্যত তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে না। প্রতিরক্ষা বাজেটেও ব্যাপক পার্থক্য- থাইল্যান্ডের ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের প্রতিরক্ষা ব্যয় ছিল ৫.৭ বিলিয়ন ডলার, যেখানে কম্বোডিয়ার ১.৩ বিলিয়ন ডলার মাত্র। সামগ্রিকভাবে সামরিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষমতাসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্সে থাইল্যান্ড ১০ম স্থানে রয়েছে, যেটি মধ্যমমানের শক্তি হিসেবে বিবেচিত, ইন্দোনেশিয়ার ঠিক পেছনে কিন্তু মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে। এ র‌্যাঙ্কিংয়ে কম্বোডিয়াকে বিবেচনা করা হয়েছে এশিয়ায় একটি ক্ষুদ্র শক্তি হিসেবে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং লাওসের মতো দেশগুলোর সঙ্গে একই গ্রুপে অবস্থান কম্বোডিয়ার।

 

এ অবস্থায় সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, যদি সংঘাত পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নেয়, তাহলে কে এগিয়ে থাকবে? এখানে সংখ্যাতাত্ত্বিক এবং কৌশলগত বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রসঙ্গত, থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক সামরিক মহড়ায় নিয়মিত অংশ নেয়। ‘কোবরা গোল্ড’ নামক মহড়া, যা তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আয়োজন করে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক মহড়া। এসব মহড়ার মাধ্যমে থাইল্যান্ড শুধু প্রযুক্তিগত দিক থেকেই নয়, কৌশলগত ও লজিস্টিক দিক থেকেও আন্তর্জাতিক মানে অভ্যস্ত একটি বাহিনী হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং ‘মেজর নন-ন্যাটো অ্যালাই’ হিসেবে স্বীকৃতি থাকায় আধুনিক অস্ত্র সরবরাহে থাইল্যান্ডের সুবিধা রয়েছে। অন্যদিকে, কম্বোডিয়া প্রায় একচেটিয়াভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল। যদিও তারা চীনা নৌবাহিনীকে থাইল্যান্ড উপসাগরে ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, তবুও বাস্তব পরিস্থিতিতে চীনের সরাসরি সামরিক সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে পরাশক্তিগুলো পরোক্ষে যুক্ত হয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নিতে পারে। ইতোমধ্যে উভয় দেশই একে অপরকে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে বিবৃতি দিয়েছে। থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সতর্ক করে বলেছেন, এই সংঘাত ‘যুদ্ধে রূপ নিতে পারে’। শেষপর্যন্ত যদি তাই হয়, এই যুদ্ধাবস্থা কেবল থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক সংকটে রূপ নিতে পারে। কারণ অঞ্চলটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল। দক্ষিণ চীনসাগর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মধ্যে বিতর্ক চলছে। এই অঞ্চলে আসিয়ান (অঝঊঅঘ) একটি সমন্বয়কারী সংগঠন হিসেবে কাজ করলেও এর ‘হস্তক্ষেপ না করার’ নীতির কারণে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অক্ষম। মালয়েশিয়া আসিয়ান-এর বর্তমান সভাপতি হিসেবে শান্তির আহ্বান জানালেও বাস্তবসম্মতভাবে কোনো চাপ প্রয়োগের সক্ষমতা নেই। অন্যদিকে, চীন এমন এক শক্তি, যার ভূমিকা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। চীন দুই দেশের সাথেই অর্থনৈতিকভাবে যুক্ত হলেও কম্বোডিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ। থাইল্যান্ড এই পক্ষপাতমূলক সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। তাই চীন মধ্যস্থতা করলেও থাইল্যান্ড হয়তো তা পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য মনে করবে না। যুক্তরাষ্ট্র, যদিও থাইল্যান্ডের দীর্ঘমেয়াদি সামরিক মিত্র, কিন্তু সে কী পরিমাণে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে স্পষ্টতই এই অঞ্চলে চীন-মার্কিন ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। এতে দুই দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংগতকারণে সংঘাত ও উত্তেজনার বিস্তার না ঘটিয়ে যুদ্ধ থামাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়াই শ্রেয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, কম্বোডিয়ার জন্য এ সংঘাত একটি অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে থাইল্যান্ডও বিপদে পড়বে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি অস্থির হয়ে উঠতে পারে, যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে, আন্তর্জাতিক মহলে তারা আগ্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। আর এই যুদ্ধ যদি জাতিগত উত্তেজনা বা জাতীয়তাবাদী উন্মাদনায় রূপ নেয়, তবে তা শুধু সীমান্তেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে দেবে। আবার থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত একটি ‘আঞ্চলিক সংকট’ হলেও তার বহুমাত্রিক প্রভাব একে ‘বৈশ্বিক উদ্বেগের’ পরিণত করতে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যে এখন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে- চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের শিপিং রুট ও বিনিয়োগের একটি বড় অংশ এখানকার ওপর নির্ভরশীল। এই অঞ্চলে অস্থিরতা তৈরি হলে তা সরবরাহ চেইন, বাণিজ্যপ্রবাহ, এমনকি প্রযুক্তি উৎপাদনের ওপরও প্রভাব ফেলবে। ফলে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যদি কূটনৈতিক সমঝোতার পথে না আসে, তবে একপর্যায়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিও এ যুদ্ধের বোঝা বইতে বাধ্য হবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন সংকট ও পানির উপর নির্ভরশীলতা, এই অঞ্চলের ভবিষ্যতের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। মেকং নদী দুই দেশেই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এখন পর্যন্ত এ নিয়ে বড় ধরনের জলবন্টন সংকট না হলেও, যদি যুদ্ধবিরোধ বা পারস্পরিক অবিশ্বাস আরও তীব্র হয়, তবে নদী ব্যবহার, বাঁধ নির্মাণ, পানি সরবরাহ ও কৃষিকাজ নিয়েও নতুন বিরোধ দেখা দিতে পারে। তখন শুধুমাত্র সামরিক নয়, পরিবেশগত ও খাদ্যনিরাপত্তাও এ সংঘাতের বলি হবে।

 

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সামনে এখন দুটি পথ খোলা- এক, শক্তির পরীক্ষায় নিজেদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করা; দুই, সংযম ও সংলাপের মাধ্যমে একটি টেকসই সমাধানের পথ খোঁজা। ইতিহাস বলছে, সামরিক শক্তি দিয়ে অনেক সময় বিজয় সম্ভব হয়, কিন্তু শান্তি সম্ভব হয় না। শান্তি আসে শুধু বিশ্বাস, কূটনীতি এবং পরস্পরের অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে। যদি এই দুই দেশ সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে ভবিষ্যৎ শুধু তাদের জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তায় ডুবে যাবে। সববিবেচনায় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো অতি দ্রুত একটি সমঝোতায় পৌঁছানো, যুদ্ধ বন্ধ করে মানবিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া, শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সীমান্ত নির্ধারণের প্রশ্নে নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের সহায়তায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করা। কূটনীতি, সংলাপ ও সমঝোতা- এই তিনটি শব্দকেই সামনে রেখে তাদের চলতে হবে, কারণ এই যুদ্ধ তাদের একক যুদ্ধ নয়- এটি একটি অঞ্চলের, একটি সভ্যতার, একটি মানবতার যুদ্ধ হয়ে উঠেছে। যদি আজ এই সংঘাত থামানো না যায়, তবে কাল এই আগুন দেশ দুটিকে গিলে খাবে। এমনকি ছড়িয়ে পড়বে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। তাই সংঘাত বন্ধ করে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করাই শ্রেয়।

পূর্বকোণ/ইবনুর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট