বর্বর ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যেভাবে গাজার বহুতল ভবনগুলো মুহূর্তেই মাটির সঙ্গে মিশে যায়, গত ২৮ মার্চ দুপুরে তেমনটিই যেন দেখা গেল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে। তবে এটি কারও কোনো হামলা নয়, নয় কোনো বিস্ফোরণের ঘটনাও। এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে মাটির সঙ্গে মিশে গেল ব্যাংককের ৩০ তলা একটি ভবন। সেদিন মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছিল প্রতিবেশী থাইল্যান্ডেও। ভূমিকম্পের কাঁপুনি বাংলাদেশ, ভারত, কম্বোডিয়া ও চীন পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আট দেশে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মিয়ানমার ছাড়াও প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে মারা গেছেন অন্তত ৫০ জন। দেশ দুটিতে হতাহত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, বিশেষত মিয়ানমার থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার জানা যায়নি। কেননা মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে ও সেখান থেকে তথ্য পাওয়া কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, ২৮ মার্চ স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারের দ্বিতীয় বড় শহর মান্দালয় থেকে প্রায় ১৭.২ কিলোমিটার দূরে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার একটি পরাঘাত (আফটার শক) হয়। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের পর কয়েক ঘণ্টার মধে দেশটিতে কমপক্ষে ১৪টি আফটারশক আঘাত হেনেছে। যার মাত্রা ছিল ৩ থেকে ৫। সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প, যা বড় ভূমিকম্পের প্রায় ১০ মিনিট পরে আঘাত হানে। এর মধ্যে দুটি ৪ দশমিক ৯ এবং ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আফটারশক মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে ঘটেছিল, যেখানে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্যগুলো প্রধান ভূমিকম্পের উত্তর এবং দক্ষিণে আঘাত হানে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, ভূমিকম্পে বেশির ভাগ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মিয়ানমারের প্রাচীন রাজধানী মান্দালয়ে। সেখানে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে এবং অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। মান্দালয়ের অবস্থান ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল সাগাইংয়ের কাছাকাছি ছিল বলেই সেখানে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মতে, এ ভূমিকম্পে দেশটিতে প্রায় চারহাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। ধসে পড়েছে মিয়ানমারের মান্দালয় ভবন, রাজপ্রাসাদ ক্ষতিগ্রস্ত হযেছে এবং ইরাবতী নদীর ওপর প্রায় শতবর্ষের পুরোনো আভা সেতু ধসে পড়েছে। চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে হাজারো স্থাপনা। মিয়ানমারের বর্তমান রাজধানী নেপিডো এবং সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনেও ক্ষতি হয়েছে। মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ভূমিকম্পের শক্তিশালী কম্পনে সড়কগুলো ফেটে গেছে এবং ভবনগুলোর ছাদের অংশ ভেঙে পড়েছে। জাতিসংঘের ভূমিকম্প ঝুঁকি মূল্যায়ন অনুসারে, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বাগো ভয়াবহ ভূমিকম্পের শিকার হয়েছিল। ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ৫৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পর থেকে দেশটিতে বেশ কয়েকবার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। প্রায় চার বছরের গৃহযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি এখন আবার বড় ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলো। মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়। মান্দালয়ে প্রাণে বেঁচে যাওয়া একজন বলেছেন, ‘এটা যেন এখন ধ্বংসের নগরী। এটা খুবই মারাত্মক ছিল। এতটাই মারাত্মক, আমি আগে কখনো এমন ঝাঁকুনি হতে দেখিনি।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মান্দালয়ে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির কিছু ভিডিও ও ছবি দেখা যাচ্ছে। সেগুলোয় ধসেপড়া ভবন দেখা যাচ্ছে, যার মধ্যে ঐতিহাসিক রাজকীয় স্থান ও প্যাগোডা রয়েছে। সেখানে ৯০ বছরের পুরোনো একটি সেতু ধসে পড়েছে। মিয়ানমারের সর্ববৃহৎ শহর ইয়াঙ্গুনের সঙ্গে মান্দালয়ের যোগাযোগের প্রধান সড়কের বিভিন্ন জায়গা ধসে পড়েছে।
বিশ্বে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলোর একটি হচ্ছে মিয়ানমার। দেশটিতে বিভিন্ন সময় ভূমিকম্পে জনবহুল এলাকাগুলো কেঁপে উঠলেও ২৮ মার্চ শহরগুলো যেভাবে আক্রান্ত হয়েছে, তা আগে দেখা যায়নি। এমনিতে গত চারবছর ধরে দেশটি গ্রহযুদ্ধে বিধ্বস্ত, এখন মাঝারিমাত্রার ভূমিকম্পে মিয়ানমার ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশটি এখন তছনছ। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ববিদ জেস ফনিক্স দেশটির গণমাধ্য সিএনএনকে বলেছেন, মিয়ানমারের ভূমিকম্প যে পরিমাণ শক্তি নির্গত করেছে তা প্রায় ৩৩৪টি পরমাণু বোমার সমান। আগামী আরও অন্তত দুই মাস মিয়ানমার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকবে বলে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন এই ভূতত্ত্ববিদ। তিনি বলেছেন, ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেট এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের ওপর মিয়ানমারের অবস্থান। এ দু’টি প্লেটের স্থানান্তরের কারণেই ভূমিকম্প হয়েছে। এই স্থানান্তর আরও ২ মাস পর্যন্ত চলবে। এ কারণে আগামী দু’মাস ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকবে মিয়ানমার। ব্যাপক হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ইঙ্গিত দিয়ে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) রেড অ্যালার্ট বা লাল সতর্কতা জারি করেছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভূমিকম্প ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনে ঘটেছে। সেখানে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শক্তি জমা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ওখানে ৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে। উল্লেখ্য, পৃথিবীর ভূ-ভাগের বাইরের পৃষ্ঠটি অনেকগুলো টুকরো দিয়ে গঠিত। এগুলোকে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতে এই প্লেটগুলো একসঙ্গে ছিল। ক্রমে এগুলো সরতে সরতে বর্তমানে বিভিন্ন মহাদেশের আলাদা অবস্থান তৈরি করেছে। সঞ্চালনশীল এই প্লেটগুলোর সীমানা ‘সিস্টেম অব ফল্টস’ হিসেবে পরিচিত। ফল্ট হচ্ছে দুই প্রস্থ পাথরের মধ্যখানের ফাটল বা চ্যুতি। টেকটোনিক প্লেটের এই ফল্টগুলোর হঠাৎ নড়ে উঠলেই ভূমিকম্পের সৃষ্টি করতে পারে। মিয়ানমারের ভূতলে এই ধরনের দুটি ফল্ট লাইন আছে। তাই বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত দেশটি। ভূকম্পনবিদরা এই ঘটনাকে একটি ‘স্ট্রাইক স্লিপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যেখানে দুই টেকটোনিক প্লেট পরস্পরকে স্পর্শ করছে এবং হঠাৎ তারা পাশাপাশি ‘স্লাইড’ করেছে বা পিছলে গেছে। ‘স্ট্রাইক স্লিপ’ তখনই ঘটে যখন প্লেট দুটো পাশাপাশি উলম্বভাবে নয় বরং অনুভূমিকভাবে পিছলে যায়। ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হওয়ার কারণে ভূমিকম্পটি প্রাণঘাতী হয়েছে। তবে দুপুরে না হয়ে রাতে হলে ভূমিকম্পে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি আরো বেশি হতো। আবার শিরদাঁড়ায় কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া ভয়ংকর এ ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তিরও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল মিয়ানমারের ‘সাগাইং অঞ্চল’ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসাবেই পরিচিত। অদূরভবিষ্যতে এখানে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে। ভূ-বিজ্ঞানীদের দাবি অনুযায়ী, ভারতীয় প্লেট ও বার্মা মাইক্রোপ্লেটের মধ্যবর্তী অঞ্চলের মধ্যে পড়ে এই সাগাইং ফল্ট। দুই প্লেটের মধ্যবর্তী ফাটল ভূপৃষ্ঠে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। যার জেরেই বারবার কেঁপে ওঠে এখানকার মাটি। ভূতাত্ত্বিক জটিলতায় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের জেরে সৃষ্ট হয় ভূমিকম্প। এই ভূমিকম্প প্রসঙ্গে ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির (এনসিএস) পরিচালক ড. ওপি মিশ্র বলেন, সাগাইং ফল্ট মিয়ানমারের দীর্ঘতম ফল্ট। অতীতেও একই মাত্রার ভূমিকম্প বহুবার হয়েছে এই অঞ্চলে। মিয়ানমারের ভূমিকম্পের জেরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে মিশ্র বলেন, ‘দুই প্লেটের মধ্যবর্তী সাগাইং ফল্টের ফাটল অগ্রসর হয়েছে মিয়ানমার থেকে ব্যাংককের দিকে। ব্যাংককে রয়েছে ‘পলি বেল্ট’। তুলনামূলক এখানকার মাটি দুর্বল হওয়ার কারণে বড়মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারেনি এখানকার ভবনগুলো। সাগাইং ফল্টের কারণে এখানে এর আগেও বড়মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। ২০১২ খ্রিস্টাব্দেও ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ফলে এই অঞ্চল যে অত্যন্ত স্পর্শকাতর তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিজ্ঞানীদের দাবি অনুযায়ী, প্রতিবছর ১১ মিলিমিটার থেকে ১৮ মিলিমিটার পর্যন্ত স্থানান্তরিত হয় এই প্লেট দুটি। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাটির গভীরে প্রবল চাপ তৈরি হয়। যার প্রভাবে কেঁপে ওঠে সাগাইং ফল্টের অঞ্চল। অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে আরও বড় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনাও এড়িয়ে যাচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। আবার কাছাকাছি ও একই রেখায় অবস্থানের কারণে এ ধরনের ভূমিকম্পের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে, এটি ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা ভূমিকম্পের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ভূমিকম্পের প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে এমন একটি স্থানে অবস্থিত, যা পৃথিবীর এক অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশ তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে- ইন্ডিয়ান প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট এবং বার্মা প্লেট। এই প্লেটগুলোর ক্রমাগত গতির ফলে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইন্ডিয়ান প্লেট প্রতিবছর প্রায় ৪৬ মিলিমিটার হারে উত্তরের দিকে সরে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করছে এবং এই অস্থিরতার ফলে হিমালয়ান বেল্টে প্রচ- চাপ সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে ভূমিকম্প আকারে শক্তিমুক্তির মাধ্যমে ভারসাম্য রক্ষা করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশে একাধিক ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দেয়। ভূমিকম্প সংক্রান্ত নানা গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশেও টাইম বোমার মতো বড় একটি ভূমিকম্প অপেক্ষা করছে। এ মুহূর্তে বেশকিছু সক্রিয় ‘টেকটনিক প্লেট বাউন্ডারি’ ঘেঁষে আছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে আছে সুমাত্রায় ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের সেই প্রলয়ঙ্করী সুনামির লেজ, যে সুনামি কিনা দুই লাখ মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়েছে। সুনামির ওই লেজ থেকে বাংলাদেশ মাত্র ১৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণে। আবার ১৮ কোটির বেশি মানুষের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ। বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম নদী অববাহিকা এবং তা সমুদ্র উচ্চতার কাছাকাছি। এর ফলে বাংলাদেশ সুনামি হুমকিতে রয়েছে। ভূমিকম্প হলে নদীগুলোর তীর লাফিয়ে লাফিয়ে গতিপথের পরিবর্তন ঘটাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত ব্যক্ত করেছেন। অতীতের এ ধরনের ঘটনা বহু ঘটেছে। তাছাড়া যথাযথভাবে নির্মাণকোড অনুসৃত না হওয়ায় বড় বড় ব্রিজ ও বহুতলবিশিষ্ট ভবনগুলো ধসে পড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। এ অবস্থায় সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। বুয়েটের গবেষকদের ভূমিকম্পঝুঁকির মানচিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৪৩ শতাংশ এলাকা ভূমিকম্পের উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে (জোন-১), ৪১ শতাংশ এলাকা মধ্যম (জোন-২) ও ১৬ শতাংশ এলাকা নি¤œ ঝুঁকিতে (জোন-৩) রয়েছে। রাজধানী ঢাকার পাশে মধুপুরকে একটি ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মনে করা হয়। সেখানে সাত বা সাড়ে ৭ মাত্রার কোন ভূমিকম্প হলেই ঢাকার সাড়ে তিন লাখ ভবনের মধ্যে ৭০ হাজারের মতো ভবন ধসে পড়বে বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে হাইতির পোর্ট অব প্রিন্সে ভূমিকম্পের পর যে ধরনের ধ্বসের চিত্র দেখা গেছে ঢাকাতেও একই অবস্থা হবে। ঢাকার আশপাশের কোন জেলাতেই যদি ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তাহলে তা হবে শহরটির জন্য একটি বিশাল বিপর্যয়।
উল্লেখ্য, ভূমিকম্প পৃথিবীর সবচেয়ে বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর একটি, যা কোনোধরনের পূর্বাভাস ছাড়াই যে কোনো মুহূর্তে আঘাত হানতে পারে। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের আগাম আভাস দেওয়ার মতো প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি। বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা ভূমিকম্প আঘাত হানার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে পূর্বাভাস দিতে পারে। এ সামান্য সময়ে ধ্বংসযজ্ঞ এড়ানোর কোনোধরনের প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। যদিও ইঁদুরসহ অনেক প্রাণী বহুদিন আগে থেকেই ভূমিকম্পের ইঙ্গিত পেয়ে থাকে ও তাদের অস্বাভাবিক অস্থির আচরণে তার প্রকাশ ঘটে থাকে; কিন্তু দুঃখজনকভাবে তা ধর্তব্যে নেওয়া হয় না। অনেক বিজ্ঞানীর দাবি, যদি এ বিষয়ে গবেষণা চালানো হতো, তাহলে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হতো। বিষয়টি আমলে নেওয়া দরকার। (চলবে)
পূর্বকোণ/পিআর