নরপশুদের লালসার একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় টানা ২০৪ ঘণ্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শেষপর্যন্ত দেশবাসীকে লজ্জায় ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলো মাগুরার নিষ্পাপ শিশু আছিয়া। পুরো দেশের মানুষের প্রার্থনা আর ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টাকে ব্যর্থ করে ছোট্ট আছিয়া হার মানলো মৃত্যুর কাছে। জীবন ও জগৎকে দেখার আগেই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটিকে যে অবর্ণনীয় নির্মমতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেটা এককথায় নারী ও শিশুর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দিতে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র যে চূড়ান্ত রকম ব্যর্থ, তারই রূঢ় প্রতিচ্ছবি। চরম অভিমান নিয়েই শিশুটি এই পৃথিবীকে বিদায় জানালো। কিন্তু আমাদের সামনে ছুড়ে দিয়ে গেল কিছু প্রশ্ন।
প্রথমত, আমরা কী সত্যিই সভ্য হতে পেরেছি? যদি সভ্য হয়ে থাকি, তাহলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি কীভাবে দিন দিন প্রসারিত হতে পেরেছে? আছিয়ার আগেও তো অসংখ্য কন্যাশিশু কিছু মানুষরূপী পাষণ্ডের দ্বারা পাশবিক কায়দায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে, অনেককে ধর্ষণের পর পৈশাচিক কায়দায় হত্যাও করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কেনো অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলো না? কেন আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র নারী ও শিশুর নিরাপত্তা দিতে চ‚ড়ান্তভাবে ব্যর্থ? ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ ধর্ষণসহ সবধরনের নিগ্রহের বিরুদ্ধে হওয়ার পরও কেনো এ সমাজ ও রাষ্ট্র তা রুখতে ব্যর্থ হয়েছে বারবার? জানি এসব প্রশ্নের সদোত্তর দিতে পারবে না আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র। কারণ আইন ও মূল্যবোধ নারী ও শিশুর নিরাপত্তার পক্ষে থাকলেও আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র সবসময় তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কখনো আইনের কঠোর ও নিরপেক্ষ প্রয়োগ হয়নি, অপরাধীদের ধরে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অপরাধীর দুষ্টান্তমূলক শাস্তি তো দূরের কথা, উল্টো সালিশের নামে পাশবিকতার শিকার নারী ও শিশুকেই দোষী সাব্যস্থ করে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়ার দৃষ্টান্ত বেশুমার। এতে একদিকে অপরাধীকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে অনেকে এতে আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছে।
দিনকয়েক আগেও লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় সালিসে ডেকে ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীকে উল্টো অপবাদ দেওয়ার পর ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছে। সারাদেশেই এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। সালিশের নামে অপরাধীদের দায়মুক্তি ঘটছে। আর ধর্ষণের শিকার হওয়া নিরীহ নারী ও শিশুরা ন্যায়বিচার না পেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। এটি কোনো সভ্য সমাজের বৈশিষ্ট্য নয়। আর এমন অসভ্য সংস্কৃতির কারণেই দেশে নারী ও শিশুধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মাত্রা জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতির লাগাম টানতে ব্যর্থ হলে আমাদের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত হয়ে যাবে, সন্দেহ নেই।
আশার কথা হচ্ছে, ধর্ষণ-মহামারীর বিরুদ্ধে জনজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের শুভচিন্তার মানুষজন ধর্ষকদের দ্রুত ক্যাপিটাল পানিসমেন্টের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মাগুরায় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার আছিয়ার ওপর ঘটে যাওয়া নির্মম পাশবিক ঘটনার প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে শহর থেকে গ্রামে। রাজপথ উত্তপ্ত হয়েছে মিছিল আর স্লোগানে। একই সঙ্গে তার ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা ছিল প্রতিটি মানুষের। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সিএমএইচ থেকে আসা দুঃসংবাদে স্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা দেশ। শোক আর ক্ষোভে একাকার মানুষ ধিক্কার জানায় মানুষরূপী কুলাঙ্গারদের। এখন দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। আছিয়ার ওপর চালানো পাশবিকতার ঘটনার দ্রুত বিচার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্র-জনতা। আছিয়ার শোকে বিহ্বল মা দাবি করেছেন, কন্যা হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের ফাঁসি। আছিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।
আছিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে পরিবারের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে সেনাবাহিনী। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার সাতদিনের মধ্যে শুরু করার কথা বলেছেন। শিশুটির মামলার তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইজিপি বাহারুল আলম। বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও ঘটনার দ্রুত বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। এদিকে এই মৃত্যুর ঘটনায় গতকালও প্রতিবাদমুখর ছিল দেশ। রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই নারী ও শিশুর প্রতি নিপীড়নের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। এসব ইতিবাচক। ধর্ষণসহ সব অপরাধপ্রবণতার বিরুদ্ধে এভাবে দেশবাসী সোচ্চার থাকলে, এ ব্যাপারে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হলে এবং রাষ্ট্র আইনের কঠোর প্রয়োগ, দ্রুতসময়ের মধ্যে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করাসহ বহুমাত্রিক উদ্যোগ নিলে ধর্ষণ-সংস্কৃতির চিরতরে নির্মূল করা কঠিন হবে না।
আমাদের দেশে ধর্ষখ-পাষণ্ডরা এতোবেশি বেপরোয়া হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে- বিচারহীনতার সংস্কৃতি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণেই এমন পৈশাচিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। প্রসঙ্গত, গত কয়েকবছরে শুধু চট্টগ্রামেই বেশকয়েকজন শিশু পাশবিক কায়দায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে, অনেককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে লাশও গুম করে ফেলা হয়েছে। এসব ঘটনার মামলাও হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখনো কোনো মামলার রায় হয়নি। উল্টো ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে, বা অন্যভাবে ম্যানেজ করে মামলা তুলে নেওয়ার পায়তারার অভিযোগও আছে। দেশের অন্যত্রও একই চিত্র। নারী ও শিশুধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ-কর্মের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধও নেই। ফলে অপরাধীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা এবং সালিশের নামে কিংবা অন্য প্রক্রিয়ায় ভিকটিমের পরিবারকে ম্যানেজ করার প্রবণতার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আর এর নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে অশুভচক্রের কাছে। তারা উৎসাহিত হচ্ছে, বেপরোয়া হচ্ছে, বিভিন্ন পৈশাচিক ঘটনার জন্ম দিতে। এতে নারী ও শিশুসহ সমাজবাসীর নিরাপত্তা ও শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে। বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ম হচ্ছে। অমসৃণ হয়ে উঠছে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পথ। সংগতকারণে এ ধরণের পরিস্থিতির অবসানে বিচারহীনতার সংস্কৃতির চিরকবর রচনা করতে হবে।
উল্লেখ্য, ধর্ষণ হচ্ছে, চলমান সামাজিক ও রাজনৈতিক মনস্তত্ত্বের প্রতিফলন, যা দীর্ঘদিন ধরেই এ দেশে অহরহ ঘটছে। আইনের প্রতি কোনো ধরনের ভয় না থাকার কারণেই এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। সুজান ব্রাউনমিলার তার সাড়া জাগানো বই Against Our Will : Men, Women and Rape-এ ধর্ষণকে ব্যাখ্যা করেছেন পুরুষাধিপত্য প্রতিষ্ঠার কেন্দ্রীয় উপাদান হিসেবে। তার মতে, ধর্ষণ শুধু কিছু মনোব্যাধিগ্রস্ত মানুষের কাজ নয়, এটি পুরুষতন্ত্রের ফসল। লৈঙ্গিক রাজনীতিতে ধর্ষণ একটি বড় হাতিয়ার, নারীকে অধীনে রাখার পুরুষের চরম উপায়। তবে ধর্ষণ-সংস্কৃতির বিকাশে আরো কিছু কারণ আছে। এর পেছনে রাজনীতিসহ অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। একটি সভ্যসমাজে কখন, কেন ধর্ষণ হয়? মনস্তাত্ত্বিকভাবে এর বিশ্লেষণ জটিল এবং দীর্ঘ। তবে একটি সভ্যসমাজে যখন এ ধরনের ঘটনা নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে যায়, তখন ভাবতে হবে আমরা অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি। এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে, কেবল যৌনচাহিদা পূরণের জন্যই এমনটি হচ্ছে। এর পেছনে দেশীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র যেমন থাকে, তেমনি মূল্যবোধের অবক্ষয়, রাজনীতি, সামাজিক অপশক্তির বেপরোয়া উত্থান, বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা ও বিচারহীনতাসহ আরো বহুবিধ কারণ থাকে।
আর ধর্ষণ-মহামারীর বিস্তার একদিনে ঘটে না; বহুদিন ধরে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং নানা অপশক্তির ষড়যন্ত্র ও সামাজিক-রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার কারণগুলো পুঞ্জিভুত হলেই কেবল এমন অসভ্যতার বহির্প্রকাশ ঘটে। বাংলাদেশে বহুদিন ধরেই এ কারণগুওলোর বিস্তার ঘটে চলেছে। নারী ও শিশুধর্ষণের মহামারীও শুরু হয়েছে অনেক আগেই। পরিসংখ্যান বলছে, এ সময়ে আমরা ধর্ষণের যে চিত্র দেখছি, এর আগের বছরগুলোতে তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। তখন মানুষের বাক ও সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা শেকলবন্দি ছিল বলেই সাধারণ মানুষ কোনোধরনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-সমাবেশ করতে পারেনি, এখন যা নির্বিঘ্নে করতে পারছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গত পাঁচবছরে দেশে অন্তত ছয় হাজার ৩০৫ জন নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৪৭১ জন ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু রয়েছে। চলতি বছরের গত দুই মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০৭ জন। যাদের মধ্যে ৬৬ জন ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু রয়েছে। এ সময় ২২৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
এইচআরএসএসের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে এক হাজার ৮৯ জন নারী ও শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২০৭ জনকে। এর মধ্যে শিশু ১১৮ জন। ৫০ জন ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশু আত্মহত্যা করেছে। দুই হাজার ৬২৪ জন নারী ও শিশু যৌননিপীড়নের শিকার হয়েছে। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৯০ জন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৫৫ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ২৬ জন নারী। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন এক হাজার ২৬২ জন, আহত হয়েছেন ৩৮৬ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৪১৬ জন নারী। এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছে ৯৪ জন নারী ও কন্যাশিশু, যার মধ্যে মারা গেছে ৯ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে ৪০১ জন নারী ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পুলিশ সদরদপ্তরের ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে নারী ও শিশুনির্যাতনের ঘটনায় ১৭ হাজার ৫৭১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ২৪১টি। কিন্তু এসব মামলার বিচারনিষ্পত্তির হার খুবই বেদনাদায়ক।
পুলিশের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, সারাদেশে যে ফৌজদারি অপরাধের ঘটনায় মামলা হয়, তার ১০ শতাংশ নারী ও শিশুনির্যাতনের মামলা। যৌননির্যাতন, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুনের শিকার হওয়ার অভিযোগে এসব মামলা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে না। ২০২০ খ্রিস্টাব্দের গবেষণা বলছে, নারী ও শিশুনির্যাতনের অভিযোগে হওয়া মামলায় বিচারের হার শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। এর পেছনে একটি বড় কারণ হলো রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতা। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সংগতকারণে বলতেই হয়, বিচারহীনতার এ ধারার অবসান না হলে ধর্ষণ, নির্যাতন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। মনে রাখতে হবে, যখন মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছে, সমাজ থেকে নৈতিকতা নির্বাসনে যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাষ্ট্রের দুর্বলতা বড় হয়ে দেখা দেয়; তখনই নারীনির্যাতন, ধর্ষণ-নিপীড়ন বেড়ে যায়। এ ধরনের সামাজিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে মামলানিষ্পত্তি এবং কঠোরশাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। মাগুরার নিষ্পাপ শিশুটি আমাদের পুরুষতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিচারবিভাগকে জেগে ওঠার সতর্কঘণ্টা শুনিয়েছে। আমরা কি সেটা শুনতে পাচ্ছি? যদি শুনতে পাই, তাহলে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে। এ ধরনের সামাজিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এতদিন ধরে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে বিচারহীনতার যে নজির সমাজে রয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে এর অবসান ঘটিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে একটি শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলনও দরকার। এ জন্যে পরিবার থেকে স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান- সর্বত্র সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের চিরায়ত সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধকে সুসংহত করতে হবে। ধর্মীয় আচার-আচরণ, বিধিনিষেধ, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধকে আকড়ে ধরতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এজন্য সমাজ ও পরিবারের অভিভাবক এবং মসজিদ-মন্দিরের ইমাম ও পুরোহিতদেরও ভূমিকা পালন করতে হবে।
পূর্বকোণ/ইব