চট্টগ্রাম রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

বেগম রোকেয়া ও নারীর ক্ষমতায়ন

আরেফা বেগম

৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১:৫১ অপরাহ্ণ

আল্লাহ পাকের অপূর্ব সৃষ্টি আদম-হাওয়া। তারই ধারাবাহিকতায় এই বিশ্বমন্ডলে সৃষ্টি হয়েছে হযরত বিবি ফাতেমা (রা.), বিবি আয়েশা (রা.), বিবি খাদিজা (রা.), হযরত রাবেয়া বসরি ও মা হালিমা (রা.) সহ অনেক মহিয়সী ধার্মিক নারী। উল্লেখিত মহিয়সী নারীরা যুগে যুগে পর্দার মধ্যে থেকে তারা ধর্মীয় কাজ থেকে শুরু করে নারীদের মর্যাদা রক্ষায় কাজ করে গেছেন। বিশ্বের অন্যতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তারুণ্যের নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীদের অধিকার সংরক্ষণ আলাদা মর্যাদা পেয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি উন্নয়ন ও সম্ভাবনার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে নারীরা। তাছাড়া বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার ডাকে সারা দিয়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে সচেতন নারী।

 

বাংলাদেশের রংপুরের মিটাপুকুর উপজেলায় বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান। বাঙালি নারীবাদী লেখিকা ও সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়ার স্বামী সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন, বেগম রোকেয়া মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী প্রাবন্ধিক, উপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ২০০৪ খ্রি. বাঙালি জরিপে বেগম রোকেয়া ষষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছিলেন। বেগম রোকেয়া নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও স্বাবলম্বী হতে আহ্বান জানিয়েছেন। নারী সমাজের মধ্যে বিরাজমান সকল প্রকার বিভ্রান্তি আশঙ্কা দূর করে নারীদেরকে সকল প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করার শক্তিতে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যেকে সামনে রেখে প্রতি বছর দেশব্যাপী ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন করা হয়।

 

এরই ধারাবাহিকতায় জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক আন্তর্জাতিক নারীনির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালন করেন ২৫ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বেগম রোকেয়ার কর্ম, আদর্শ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। বাংলার নারী মুক্তি আন্দোলনের ব্রিটিশবিরোধী শাসন আমল ছিল (১৮৫৭-১৯৪৭) নিষ্পেষিত পাকিস্তান শাসন আমল ১৯৭১ থেকে শুরু হয়ে এই তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। ব্রিটিশ শাসকরা এদেশের শাসনের নামে প্রায় দুইশ বছর শোষণ করেছে। এই সময় নারী পুরুষ সকলেই ছিল অধিকার বঞ্চিত। নারীর অধিকার আদায়ে কিংবা ক্ষমতায়নে তখনকার দাবি ছিল সোচ্চার। তারই ধারাবাহিকতায় আজ তৃণমূলে নারীর ক্ষমতায়নে যা দরকার- দক্ষতা, সুস্থ, সচেতনতা, সম্পদের মালিকানা প্রাপ্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিযুক্তি, জ্ঞান-দক্ষতা, নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে একান্ত আবশ্যক।

 

তৃণমূলে অর্থাৎ স্থানীয় পর্যায়ে নারীর জনপ্রিতিনিধি রাখার বিধানটি নারীদের জন্য জন্য প্রশংসনীয়। বলাবাহুল্যে ১৯৯৭ সালে স্থানীয় সরকার আইনে সাধারণ আসনে নারীর প্রার্থী হওয়ার অধিকার অক্ষুণ্ন রেখে প্রতি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিধান রাখার মধ্যদিয়ে তৃণমূলে নারী ক্ষমতায়নের সুযোগ করে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর থেকে নারী এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে মাত্র পাঁচজন নারী সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতো। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে ৫০টিতে নারী রয়েছে। বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তার জাল বিস্তারে নারীরা কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে, উপজেলা পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নারীরা প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে।

 

বেগম রোকেয়া নারীদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন পরিবারের কর্তার উপর নির্ভর না করে পরিবারকে স্বাবলম্বী হতে অগ্রণী পালন করছে নারীরা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠে বলতে হয়, ‘এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ নারীরা পুরুষের পাশাপাশি প্রশাসন, শিক্ষা, আইন, প্রকৌশল, চিকিৎসা, গণমাধ্যম, ব্যাংকিং, চাকরি, ব্যবসা ও নারী উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের সচেতন নারীরাও অংশগ্রহণ করে সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছে। আমার চোখে দেখা বোয়ালখালী উপজেলার সাবেক ইউএনও দিলসাদ বেগম, আফিয়া খাতুন ও আছিয়া খাতুন অদ্যবদি সচিব, যুগ্মসচিব ও জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করে যাচ্ছে।

 

তাছাড়া, চট্টগ্রামের বর্তমান জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ও বোয়ালখালী উপজেলার স্বনামধন্য ইউএনও হিমাদ্রী খীসা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কানিজ ফাতেমা, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সোনিয়া শফি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সালমা ইসলাম সহ দেশের জেলা ও উপজেলাগুলোতে নারীরা সাহস ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান নারীর ক্ষমতায়নে যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। এ দেশকে আরো উন্নতি ও অগ্রগতির পথে নিয়ে যেতে নারীদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। আসুন আমরা সকলের প্রচেষ্টায় দেশ মাতৃকার উন্নয়নে কাজ করি এবং বেগম রোকেয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়নে নারীর ক্ষমতায়নে ঐক্যবদ্ধ হয়।

 

লেখক : পুরস্কার প্রাপ্ত সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান, আমুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট