নিউজ ডেস্ক জুড়ে শোকের আবহ। দি পূর্বকোণ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও পূর্বকোণ সম্পাদক স্থপতি তসলিউদ্দিন চৌধুরীর শোকসভা চলছে। কয়েকদিন আগে, অর্থাৎ ১৫ নভেম্বর দীর্ঘ ২৪ বছর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার পর অবশেষে হার মেনেছেন তিনি। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। শোকসভায় উপস্থিত আছেন পূর্বকোণের তৎকালীন প্রকাশক ও পরিচালনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও নির্বাহী সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরীসহ পূর্বকোণের সাংবাদিক-কর্মচারীরা। স্বাগত বক্তব্যে ইউনিট প্রধান ও সিনিয়র সহ-সম্পাদক মিহরাজ উদ্দিন রায়হান বলতে লাগলেন, সামনে পূর্বকোণে আমার ২০ বছর হতে চলেছে। আশা ছিল, সম্পাদক মহোদয়ের হাতে ২০টি গোলাপ দিয়ে দুই দশক উদযাপন করব। কিন্তু তা আর হলো কই…। তার কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ হয়ে এলো, অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তখন আমাদের সবার চোখে জল। আমাদের প্রিয় সম্পাদক যে আর নেই! সেদিন কেউই আমরা অশ্রু সংবরণ করতে পারিনি।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ক্ষণজন্মা ব্যক্তি তসলিউদ্দিন চৌধুরী একাধারে স্থপতি, সম্পাদক ও সমাজসেবক ছিলেন। চিন্তা-চেতনায় আধুনিকমনস্ক তসলিম ভাই ছিলেন সংস্কারমুক্ত, দায়িত্বশীল ও অসম্প্রদায়িক এক আলোকিত মানুষ। গভীর রাত অবধি অফিস করতেন। কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেন। মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে ভাবতাম, মরণব্যাধি ক্যান্সার নিয়ে তিনি কীভাবে রাত দুটা পর্যন্ত অফিসে থাকেন! সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব পালন ছাড়াও চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে পূর্বকোণের সিস্টার্স প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর নেয়া ও ফাইলগুলো দেখা, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট (বাস্থই) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ আরও কতো কাজ। অবশ্য এসব দায়িত্ব পালনে তারঁ দুই সহোদর তাঁকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করে আসছিলেন। আসলে তসলিম ভাইয়ের মধ্যে থাকা অফুরান প্রাণশক্তিই তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।
ফ্লাশব্যাক : পূর্বকোণে যোগদানের সপ্তাখানেক পর তৎকালীন চিফ রিপোর্টার (বর্তমানে সিটি এডিটর) নওশের ভাই বললেন, সম্পাদক সাহেব অফিসে আছেন। চলো তোমাকে তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। নওশের ভাইয়ের পেছনে পেছনে চেম্বারে প্রবেশ করে সালাম দেওয়ার পর তসলিম ভাই বসতে বললেন। আমি তাঁকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম একি স্বাস্থ্যের হাল তাঁর! ক্যান্সারে একেবারে কাবু করে ফেলেছে। বড় বড় গোঁফসহ কি সুঠাম দেহের অধিকারীই না তিনি ছিলেন! তাঁকে মাঝেমধ্যে দেখলে আমার কেমন জানি ভয়ই লাগতো। সেই ভয় এখনও কাজ করছিল। চাকুরী তখনও পাকাপোক্ত হয়নি, কিনা কী জিজ্ঞেস করে। ভেতরে ভেতরে ঘামছিলামও। নওশের ভাই অবশ্য বলে রেখেছিলেন, চমৎকার মানুষ, দেখবে তোমার ভালো লাগবে। তাঁর রাশভারী কণ্ঠে ভাবনায় ছেদ পড়লো।
শুরুতে জিজ্ঞেস করলেন, মেয়র সাহেব (মরহুম মহিউদ্দিন চৌধুরী) নয়াবাংলা থেকে ব্যাক করলেন কেন? আমি বললাম, বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে (২০০১), তাই হয়তো কন্টিনিউ করতে চাননি। এরমধ্যে পিওন এসে টেবিলে চা-বিস্কুট দিয়ে গেল। তসলিম ভাই বললেন, অনেস্টলি ও সিনসিয়ারলি কাজ করবেন। এটা (পূর্বকোণ) আমাদের ও আপনাদের প্ল্যাটফর্ম। এটা থাকলে সবাই আছি, ডুবলে সবাই ডুবে যাব।
ব্যস এতটুকুই পরিচয়পর্ব। চা-বিস্কুট খেয়ে নিউজ ডেস্কে ফিরে এলাম। এরপর যতবারই দেখেছি তাঁর সৃজনশীল কাজের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়েছে, মুগ্ধ হয়েছি। প্রতি সপ্তাহে রিপোটার্স মিটিংয়ে সম্পাদক মহোদয় নতুন নতুন আইডিয়া উপস্থাপন করতেন এবং সেগুলো পত্রিকার মাধ্যমে কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তার পরামর্শ দিতেন, পরামর্শ নিতেনও।
একদিন মিটিংয়ে তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ভবনের প্রসঙ্গ তুলে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, এটা কোনো ভবন হলো, দেখতে মনে হয় সরকারি কোয়ার্টার। অথচ ভবনটি কত নান্দনিক হতে পারতো। একজন স্থপতি হওয়ায় চট্টগ্রাম নগরীর অনেককিছুই তাঁর চোখে দৃষ্টিকটু লাগছিল, যা কোনোদিন আমাদের মাথায়ও আসেনি। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ফ্লাইওভার নিয়ে তাঁর ক্ষোভের অন্ত ছিল না। খানাখন্দভরা সড়কে যানজট, অপর্যাপ্ত যানবাহন, অল্প বৃষ্টিতেই নগরী তলিয়ে যাওয়া, ফুটপাত ও সরকারি জমি দখলের মহোৎসব, নির্বিচার পাহাড় কাটা, যত্রতত্র বিলবোর্ড স্থাপন প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর পরামর্শে পূর্বকোণে কত রিপোর্টিং। তিনি বলতেন, স্বাধীনতার এত বছর পরও যে নগরীতে একটি উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নেই, গাড়ি চলছে হাতের ইশারায়, যেখানে একটি স্যুয়ারেজ সিস্টেম পর্যন্ত নেই, সেখানে আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা কীভাবে বলেন, কয়েকবছরের মধ্যে চট্টগ্রাম হবে সিঙ্গাপুর!
তসলিম ভাই আরো বলতেন, চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেলে আমি গণপরিবহনে যাতায়াত করি। সেখানে পর্যাপ্ত যানবাহন আছে, সড়কে শৃঙ্খলা আছে। আমারতো প্রয়োজন নেই উবার ব্যবহার করে অতিরিক্ত টাকা-পয়সা নষ্ট করার। এদেশেও ওই ব্যবস্থা চালু হলে অধিকাংশ মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা ট্যাক্সির পরিবর্তে গণপরিবহন ব্যবহার করবে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও কমবে, সড়কে যানবাহনের চাপও কমবে। তিনি প্রশ্ন রাখতেন, নগরীর অতি প্রয়োজনীয় সমস্যাগুলোর সমাধান না করে শত শত কোটি টাকায় অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার করার কোনো মানে আছে কি? আর এসব ক্ষোভ নিয়েই চলে গেছেন তসলিম ভাই। তিনি তাঁর পিতা পূর্বকোণের স্বপ্নদ্রষ্টা চট্টলদরদী মরহুম মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর মত চট্টগ্রামের উন্নয়ন আন্দোলনে আমৃত্যু নিজকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন।
টুকরো টুকরে স্মৃতি : চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে (১১ জুন, ২০০৭) ১২৭ জন নিহত হওয়ার পরদিন সম্পাদক মহোদয় অফিসে এসে চেম্বারে না গিয়ে সরাসরি দোতলার নিউজডেস্কে আসলেন। ঢুকেই তৎকালীন নিউজ এডিটর তাহের ভাই ও চিফ রিপোর্টার নওশের ভাইকে চার্জ করে ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন, তোমরা পত্রিকাটিকে কি করেছ? চট্টগ্রামের ঘটনা অথচ ঢাকার পত্রিকাগুলোতে লিড নিউজের সাথে কত মানবিক স্টোরি? আমাদের পত্রিকায় নেই কেন- বলেই তাঁর গলার স্বর সপ্তমে চড়ল। আমরা সবাই চুপচাপ। কিছুক্ষণ পর তিনি চলে গেলেন। আরেকদিন রাত এগারটার দিকে ডেস্কে এসে রিপোর্টার রতনকান্তি দেবাশীষ কোথায় জানতে চাইলেন। কেউ একজন বললেন, তিনি হোটেল পেনিনসুলায় এসাইনমেন্টে গেছেন, এখনও আসেননি। লক্ষ্য করলাম, ডিপ নেভি ব্লু স্যুটের সাথে সাদা শার্ট আর ব্লু টাই পরেছেন তসলিম ভাই। ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। আধঘণ্টার পর রতনদা এসে প্রবেশ করলেন।
সম্পাদক মহোদয় বললেন, প্রধান অতিথি বক্তৃতা দি চলি আইস্সে। রিপোর্টার সাব অনের এত দেরিকা, নিশ্চয়ই ডিনার সারি আইস্সুন। এই বলে তিনি তাকে রিপোর্ট তৈরির জন্য আধঘণ্টা বেঁধে দিলেন। রতনদা কুড়ি মিনিটেই ‘পরীক্ষার খাতা’ জমা দিয়ে দিলেন। রিপোর্ট দেখার পর এডিটর সাহেবকে সন্তুষ্টই মনে হলো। পরদিন দেখলাম, অন্য পত্রিকার চেয়ে আমাদের নিউজ ভালো হয়েছে। যারা রতনদার সাথে কাজ করেছেন তারা জানেন তিনি নির্ভুলভাবে দ্রুত নিউজ করতে পারেন। একবার পূর্বকোণে একটি ক্রাইম রিপোর্ট দেখার পর উইকলি মিটিংয়ে রসিকতা করে সম্পাদক সাহেব বলেছিলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের হাতে যে এতটা একে-৪৭ রাইফেলসহ মোট এতটি অস্ত্র আছে- এ ডাটা রতন কোথায থেকে পায়? বলাবাহুল্য, এধরনের একটি রিপোর্ট সপ্তাখানেক পর ইত্তেফাকে লিড হয়েছিল। সুবক্তা ছিলেন তসলিম ভাই। বিষয়ভিত্তিক বক্তব্যে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য সবার নজর কাড়ত।
জামালখানের এরিস্টোক্রেট রেস্তোরাঁয় মেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্সের একটি ড্রিংকসের লঞ্চিং অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-এমপি, স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকবৃন্দ, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাসহ বহু সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বক্তারা গতানুগতিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তসলিম ভাই ডায়াসে এসে বললেন, আপনারা কেউ কি জানেন ভারত থেকে আমদানিকৃত ম্যাগী নুডলসে টেস্টিং সল্ট থাকে? অনেকে হয়তো জানতে পারেন। তবে এটি জানেন না, ভারতে যে ম্যাগী নুডলস মার্কেটিং হয় তাতে টেস্টিং সল্ট থাকে না। এরপর তিনি খাদ্যে টেস্টিং সল্টের ব্যবহারে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর দিকগুলো উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে হোটেল-রেস্তোরাঁ, প্যাকেটজাত স্যুপ, নুডলস, চিপস, বিস্কিট, বিভিন্ন প্রকার ফাস্টফুড, বিয়েসাদীসহ যাবতীয় অনুষ্ঠান, এমনকি চটপটি-ফুসকায়ও দেদারসে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে।
এজন্য সম্পাদক মহোদয় বিএসটিআইসহ খাদ্যপ্রশাসনকে দায়ী করেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, টেস্টিং সল্টকে বৈধতা দিতে বিশ্বের নামীদামী ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলো কোটি কোটি ডলার ঢালছে। রেস্তোরাঁভর্তি অতিথিরা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন তাঁর তথ্যবহুল বক্তব্য। বাংলা-ইংরেজির মিশেল শব্দচয়নে দারুণ মুন্সিয়ানা ও কথা বলার স্টাইল অতিথির মাঝে তাঁকে আলাদা করে তুলেছিল। বক্তব্যের ধারাবাহিকতাতো ছিলই, কোথাও ছন্দপতন হয়নি। সবশেষে ড্রিংকসটির উৎপাদনে ব্যবসার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের কথাটি বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্যের ইতি টানেন। দৈনিক নয়াবাংলায় থাকাকালে চট্টগ্রাম চেম্বারের একটা অনুষ্ঠানে তাঁর স্মার্ট বক্তব্য শুনে অভিভূত হয়েছিলাম। পূর্বকোণের সাপ্তাহিক মিটিংগুলোতে জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো প্রাধান্য দিতেন তসলিম ভাই। খাদ্যে ভেজালসহ খাদ্য নিরাপত্তা (Food Security) নিয়ে উদ্বেগের শেষ ছিল না তার।
রিপোর্টারদের বলতেন, পত্রিকায় কুমিরের ছানার মত বারবার একই রিপোর্ট কেন? ফুড ইন্সপেক্টরদের খুঁজে খুঁজে বের কর, তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করো। বিএসটিআই করছেটা কি? বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সম্পাদক সাহেব প্রচুর স্টাডি করতেন। এরমধ্যে অন্যতম কম্পিউটার ফটোগ্রাফি ও রন্ধনশিল্প। একবার তাঁর চেম্বারে গেলে তিনি বললেন, মোরশেদ কখনও ‘লাজিজ পোলাও’ খেয়েছ? আমি বললাম, পোলাওতো অনেক খেয়েছি, কিন্ত এই নামতো কখনো শুনিনি। তিনি বললেন, এটি পাকিস্তানের একটি বাসমতি চালের জনপ্রিয় পোলাও যার উৎপত্তি পেশোয়ারে। তিনি ডেস্কের জন্য ডাউস সাইজের একটি ইংরেজি বই দিয়ে বলেছিলেন, এটির মধ্যে ছবিসহ পৃথিবীর প্রায় সব শাকসবজি, ফলমূল ও মসলার উপকারিতা দেয়া আছে। প্রতিদিন একটি করে অনুবাদ করে যেন শনিবার ব্যাক পৃষ্ঠায় ছাপা হয়। পুষ্টি নামে সেটি এখনও পূর্বকোণে প্রকাশিত হচ্ছে।
মাঝেমধ্যে রাতে তিনি কম্পিউটার বিভাগে ঢুকে বলতেন, আজকের লিড ছবির কালার কম্বিনেশন ভালো হয়নি। ফটো অপারেটরকে বলতেন, ছবিটা বের কর। তারপর তিনি সেটি কালার সেটিং (আনুপাতিক হারে) করে দেওয়ার পর অনেক ঝকঝকে হয়ে উঠত। নিউজ এডিটর না থাকলে নাইট শিফটে আমি দায়িত্ব পালন করতাম। একদিন আমি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের আহাজারির ছবি ৬ কলামে লিড করে দিয়ে বাসায় এসে ঘুমোতে পারছিলাম না। পূর্বকোণ তখন ৮ কলামে বের হতো। পরদিন সাপ্তাহিক মিটিং। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো ওভার ট্রিটমেন্ট হয়েছে কিনা। অফিসে ঢুকতেই বারান্দায় সম্পাদক সাহেবের মুখোমুখি। তিনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, আজকের পত্রিকা ভালো হয়েছে। আমি চুপসে গেলাম। বললাম, আপনিইতো একদিন বলেছিলেন, যারা ভালো কাজ করে তাদের প্রশংসা করেন না। শুনেই হেসে দিলেন। বললেন, আজকের পত্রিকা আসলে সুন্দর হয়েছে। মাঝে মাঝে এধরণের ব্লোআপ ছবি দেবে। দেখ না, ডেইলি স্টার দেয়।
উপসংহার : শোকসভা দিয়ে শুরু করেছিলাম, তা দিয়েই শেষ করতে চাই। ওই সভায় বর্তমান সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, He was not only my brother, He was also my baby। একজন সন্তান অসুস্থ হলে পিতা-মাতা যেভাবে সেবাশুশ্রুষা করে ঠিক তেমনিভাবে গত ২৪ বছর ধরে তসলিম ভাইকে সেবা করেছি। ডাক্তার হওয়ার সুবাদে খাওয়া-দাওয়া ও ঔষধের চার্ট মেইন্টেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানো, বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করানো, ঔষধ শেষ হয়ে গেলে বিদেশ থেকে আনার ব্যবস্থা করা, বিদেশি ডাক্তারদের সাথে টেলি-কনফারেন্স করা, অবস্থার অবনতি হলে ক্লিনিকে ভর্তি করানোসহ যাবতীয় কাজ তাঁকে করতে হয়েছে। ব্যাচমেট ও বন্ধু হওয়ার কারণে চট্টগ্রামে রমিজ ভাইয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি সার্কেল রয়েছে। তাদের খবর দিলেই তসলিম ভাইকে দেখতে বাসায় কিংবা ক্লিনিকে চলে আসতেন। পরিবারে একজন ডাক্তার থাকলে এটি বাড়তি সুবিধা।
পূর্বকোণ সম্পাদকের মৃত্যুর খবর শুনে সিঙ্গাপুরে দীর্ঘদিন যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত¡াবধানে ছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ক্যান্সার নিয়ে ২৪ বছর বেঁচে থাকা মিরাক্যাল (Miracle)। গত ১৫ নভেম্বর ছিল তসলিম ভাইয়ের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি আজ আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। রেখে গেছেন তাঁর অনুকরণীয় আদর্শ ও কর্ম, যা যুগে যুগে নতুন প্রজন্মকে প্রেরণা যোগাবে। মহান রব্বুল আলামিন তসলিম ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক।
পূর্বকোণ/ইব