চট্টগ্রাম শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

ভারতের গণতন্ত্র বনাম পাকিস্তানের সামরিক শাসন

মুহাম্মদ মোরশেদ আলম

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ২:১৬ অপরাহ্ণ

(পূর্বেপ্রকাশিতের পর)
এদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে প্রায় দুই বছর ধরে দেশটি মন্দার সঙ্গে লড়ছে। বেশ লম্বা সময় ধরেই অর্থনৈতিক সঙ্কট, রাজনৈতিক বৈরিতা ও জঙ্গি সহিংসতায় জর্জরিত পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা দেখে এটাই অনুমান করা যায় যে দেশটির আর্থিক অবস্থা কতটা খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণসহ দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা দেশটির মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়েছে। বর্তমানে এই হার ৩০ শতাংশের বেশি। সাধারণ মানুষের দুর্দশাও বেড়েছে। সরকারি হিসেবে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে রয়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী হওয়ার কারণে দেশের ৭৪ শতাংশ মানুষ তাঁদের মাসিক খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
পাকিস্তানের সরকারি ঋণ দেশটির জন্য আরেকটি বিশাল বোঝা। এই বছর বৈদেশিক ঋণ ১৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা গত বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের চলতি বছরের শুরুর দিকের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১২ মাসে পাকিস্তানকে প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বড় আকারের আইএমএফের ঋণ পাওয়ায় বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ১৪.৭০ বিলিয়ন ডলার হলেও গত বছর ফেব্রæয়ারির শুরুতে রিজার্ভ কমে ২.৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের ২৮০-তে স্থিতিশীল যা একসময় ৩০০ রুপি ছাড়িয়ে গেছিল। বর্তমান জোট সরকার অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে হিমসিম খাচ্ছে। অপরদিকে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় ভারতীয় অর্থনীতি বছরের পর বছর ধরে বৃদ্ধির পথে রয়েছে, এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে স্থান পেয়েছে, শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি এবং জাপানের পরে। সা¤প্রতিক বছরগুলিতে, এটি ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (ওগঋ) ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে জাপান এবং জার্মান অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে যাবে ভারত। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিয়ে নয়, সমারিক অবস্থানে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। একসময়ে বিশ্বের উন্নত দেশগুলির অস্ত্রের জন্য মুখাপেক্ষী থাকা ভারত বর্তমানে বিশ্বের ৯০টি দেশকে অস্ত্র বিক্রি করছে। গত এক দশকে অস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানি প্রায় ৩০ গুণ বাড়িয়েছে ভারত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তথ্য জানাচ্ছে ২০২৪-২৫ সালের প্রথম এপ্রিল-জুন মাসে প্রতিরক্ষা রপ্তানি বেড়ে ৬ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা হয়েছে। ব্যাংক ইন্ডিয়ার তথ্যমতে, গত ১৭ মে’র হিসেবে দেশটির বৈদেশিক রিজার্ভ রেকর্ড ৬৪ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার। ভারতের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের (এনএসও) দেয়া তথ্য অনুসারে, মার্চে শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
উপসংহারে বলা যায়, সামরিক শাসন বা গণতন্ত্রের খোলসে স্বৈরশাসন কখনও রাষ্ট্রের উন্নয়ন ঘটাতে পারে না। যুগে যুগে এসব স্বৈরশাসকদের নির্লজ্জ সমর্থন দিয়ে গেছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকারী দুর্নীতিবাজ ও সুবিধাভোগীরা। ভোট ও অধিকারের কথা বললে গলার টুটি চেপে ধরে বলেছে, অশিক্ষিত মানুষের আবার কিসের ভোট? তারা ভোটের মর্যাদা বোঝে নাকি? ভারতীয় শক্তিমান অভিনেতা নানা পটেকর যথার্থই বলেছেন, ‘একটি রাষ্ট্র ধ্বংসের জন্য একজন স্বৈরশাসক, ঘুমন্ত প্রজা ও বিক্রিত সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীরাই যথেষ্ট।’ (সমাপ্ত)

লেখক: যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট