চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

শাইখ সিরাজ : একজন সফল উন্নয়ন সাংবাদিক

ড. আব্দুর রাজ্জাক

৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১১:০০ অপরাহ্ণ

শাইখ সিরাজ সম্পর্কে কিছু লিখতে গিয়ে আজ অনেক কথাই মনে পড়ছে। কোনটা রেখে কোনটা দিয়ে শুরু করব, এটা এক বড় মধুর দ্বন্দ্ব। বাংলাদেশের একজন অত্যন্ত সফল উন্নয়ন সাংবাদিক, কৃষি এবং গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। এরই মাঝে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা আর সম্মানের জায়গায় আসন করে নিয়েছেন কৃষি উন্নয়ন কর্মী শাইখ সিরাজ। তার জন্মদিন উপলক্ষ করেই লেখাটা।

বিশাল এই পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ তার নিজ কাজে অম্লান হয়ে থাকে, সমাজে আলাদাভাবে জায়গা করে নেয়। যেটি অনেক মানুষের জন্য, বিশেষ করে আগামী প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকে। আমি বলবো যে শাইখ সিরাজ সাংবাদিক হিসাবে এমন অনন্য কাজ করেছেন, এমন সফলভাবে তিনি তার লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে চলেছেন যার প্রশংসা করে পারা যায়না। তার সাথে আমার পরিচয় দীর্ঘ বছরের। আমি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসি ২০০১ সালে, বিরোধী দলের এমপি তখন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি নিবার্চিত হয়েছিলাম। তখন এতো বেশি চ্যানেল ছিলো না, সে সময় চ্যানেল আইয়ের অনেক অনুষ্ঠানে যেতাম। ঐ সময়ে তার সাথে আমার অনেক মতবিনিময় করার সুযোগ হয়েছে।

তার আগেও আমি যখন সরকারি চাকরি করি, একজন বিজ্ঞানী হিসাবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে। গাজিপুরে তখন কেবল ভুট্টার চাষ জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। ভুট্টার চাষকে সারাদেশে জনপ্রিয় করার জন্য শাইখ সিরাজ অনেক কাজ করেছেন। তখনই তার সাথে আমি প্রথম কথা বলি, একজন বিজ্ঞানী হিসাবে। বিটিভিতে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে আমার বক্তব্য প্রচার হয়েছিলো। তারপরে উনার সাথে খুব বেশি যোগাযোগ ছিলো না।

২০০৮ সালে আমি খাদ্য, ত্রাণ ও দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলাম। তখন থেকেই অনেক ঘনিষ্টভাবে কাজ করেছি। তিনি একজন কঠোর পরিশ্রমী মানুষ , তার দায়িত্বে এবং কর্মে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান, সৎ এবং প্রজ্ঞাবান মানুষ। একই সাথে দুরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং তার সবচে বড় গুন, তিনি দারুন ইনোভেটিভ। সবসময় নতুন নতুন চিন্তা-চেতনা নিয়ে কাজ করে চলেছেন। সেসব আইডিয়া অনুষ্ঠানে বাস্তবায়ন করে দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। যে বিশেষ কারণে তিনি আজ সকলের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়েছেন , সবার কাছে সম্মান পাচ্ছেন তা হলো কৃষি উন্নয়নে তার অবদান।

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। আমরা জানি বাংলাদেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ কোন না কোনভাবে কৃষির সাথে জড়িত। প্রায় ৩৮ ভাগ মানুষের জীবিকা আসে কৃষি থেকে। এটি আগে আরো অনেক বেশি ছিলো । আস্তে আস্তে জডিপিতে কৃষির অবদান কমছে। কিন্তু যে ৬০-৭০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। কেউ হয়তো নিজে সরকারি চাকরি করে বা অন্য কোন ব্যবসা-বাণিজ্য করে তবে তারা সবাই কোন না কোনভাবে কৃষির সথে জড়িত। কাজেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। আর এটি চিন্তা করলে কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য শাইখ সিরাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

আমরা জানি, বাংলাদেশ আদি তথা সনাতন কৃষি পদ্ধতি থেকে সরে গিয়ে এখন আধুনিক যন্ত্র নির্ভর কৃষি ব্যবস্থাপনার দিকে ঝুঁকেছে। আজকে বিঘা প্রতি ফসলের উৎপাদন বেড়েছে, নতুন নতুন ফসল এসেছে, নতুন নতুন প্রযুক্তি এসেছে। এখন বাংলাদেশের মানুষ চিন্তাা করছে যে তারা আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবে। তারা এরই মধ্যে রোবট ব্যবহার করে ফেলেছে। তবে এটা সত্য যে জাপান, কোরিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ , আমেরিকা, কানাডার কৃষির তুলনায় যান্ত্রিকীকরণে আমরা যোজন যোজন দূরে।

বর্তমান সরকার , কৃষির উন্নয়নের জন্য, যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এই যে আধুনিক কৃষি, নতুন নতুন উন্নত জাত, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া, সবখানে কাজ করছে সরকার। এমনকি ইদানিং শ্রমিকের ঘাটতির প্রেক্ষাপটে আমরা ধানকাাটার মেশিন ব্যবহার শুরু করেছি। কৃষিতে আরো বেশি উৎপাদনশীলতা, আরো বেশি ফলন পাওয়াসহ সরকারী সব কর্মসূচীতে শাইখ সিরাজ নির্মোহভাবে মতামত দেন, আমাদের ভালো-মন্দ দিকগুলো প্রচার করেন।

আমাদের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে যেসব উদভাবন করেন তা মাঠের কৃষকদের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ ভূমিকা রাখছেন। এটার কোন তুলনা হয় না। কারণ একটি প্রযুক্তি কৃষকের কাছে যেতে অনেক সময় লাগে। তাছাড়া নতুন প্রযুক্তি কৃষক চট করে নিতেও চায়না অনেক সময়। নতুন ফসল ফলাতে ঝুঁকি মনে করে। এক্ষেত্রে শাইখ সিরাজের সাথে কৃষকের যে বোঝাপড়া তা আমাদের দারুণ কাজে দেয়। আমি মনে করি, যে সরকারই আসুক না কেন কৃষির জন্য শাইখ সিরাজকে তাদের প্রয়োজন হবে।

টেলিভিশনে অনুষ্ঠান নির্মাণের পাশাপাশি উনি পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেন। আমি যতোদূর জানি তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজেও সময় দেন। আমি দেখেছি বহু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার তারাও শাইখ সিরাজের অনুষ্ঠানগুলো দারুণ আাগ্রহ নিয়ে দেখেন, কথা বলেন দীর্ঘদিন যাবৎ। তার আরেকটি কর্মসূচি কৃষি বাজেট, কৃষকের বাজেট। কৃষক কিভাবে সার, যন্ত্র, নীতি সহায়তা পেতে পারে সেটি তিনি কৃষককে জানান, সরকারকে জানান। ক্রপ ক্যালেন্ডার ধরে ধরে কোন ফসল কখন উৎপাদন করলে রপ্তানি বাড়বে , আমদানি কমবে এগুলোও উনি জানান। কৃষকদের জন্য সরকারের কি নীতি-সহায়তা নিতে হবে সেটিও জানান এ আয়োজনের মাধ্যম দিয়ে।

একটা কথা আছে যে যার ঘাঁ, ব্যাথাও তার। কৃষি কাজ করতে গিয়ে কি কি সমস্যা, ঋণের সমস্যা, প্রযুক্তির সমস্যা, কৃষির উপকরণ নিয়ে কৃষকের কি সমস্যা সব তিনি তুলে ধরেন। আমিও অনেক প্রোগ্রামে গেছি, বলা যায় প্রায় প্রতিবছরই উনার এ কর্মসূচিতে যাই। উনি প্রকারন্তরে এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে প্রভাবিত করেন, সেটা হলো কৃষিতে ভালো কিছু করা। আমি মনে করি, শাইখ সিরাজ সারা জাতির পক্ষে, একটা রাজনৈতিক দলের মতো, রাজনৈতিক নেতার মতো কাজ করছেন। হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এবং কৃষি বাজেট, কৃষকের বাজেট এই দুটি অনুষ্ঠন আমি নিয়মিত দেখি, ভীষণভাবে উপকৃত হই। এই কর্মসুচিগুলো সবার কাছে জনপ্রিয়, সবার স্বার্থ সংরক্ষণ হয় এর মাধ্যমে।

আমি জানি কৃষি কাজ অত্যন্ত কঠিন। কাঠফাঁটা রোদ, বৃষ্টি সব উপেক্ষা করে কৃষক পরম মমতায় মাঠে সোনালী ফসল ফলান। ধান লাগানো, ধান কাটা, পাট লাগানো, আঁশ ছাড়ানো, সবই কষ্টের। কৃষি এবং কৃষকের হাসি-কান্নার সব দিকগুলো শাইখ সিরাজ তুলে ধরেন। বলা যায় তিনি এ কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। অস্থির একটা সময় পার করছি আমরা, চারিদিকে এতো এতো সমস্যা , সবের মাঝেও তিনি কৃষির উন্নতিতে কাজ করে চলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তিনি দারুণভাবে অনুপ্রানিত করেছেন বলা যায়। আর সেজন্যই শাইখ সিরাজ গণভবনের কৃষিকাজ দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষ দেখেছে কৃষির প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যার কি অসীম মমতা। “গণভবনে আঙ্গিনা কৃষি” অনুষ্ঠানটা একধরনের কাব্যময় কর্মসূচি বলতে পারি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শাইখ নিরাজ এটিকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কৃষি-বান্ধব প্রধানমন্ত্রীর মমতা সারা দেশের কৃষককে দারুণ উদ্বুদ্ধ করেছে নি:সন্দেহে। পেশা হিসেবে কৃষিকে গৌরবান্বিত করার নিরন্তর প্রয়াসে শাইখ সিরাজ তার কাজ অব্যাহত রাখবেন, সেই প্রত্যাশা।

লেখক : কৃষিমন্ত্রী

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট