আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রধান র্ধমীয় উৎসব। বৈশাখ মাসের এই পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংগঠিত হয়েছিলো বলেই দিনটি ‘বুদ্ধ পূূর্ণিমা হিসেবে নামে খ্যাত। এই তিনটি প্রধান ঘটনা হলো, খৃষ্টপূর্ব ৬২৪ অব্দে নেপালের লুুম্বিনীতে গৌতম বুদ্ধের জন্মগ্রহণ, খৃষ্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে নৈরঞ্জনা নদীর তীরে অশ^ত্থবৃক্ষের নীচে বোধিজ্ঞান লাভ করে বুদ্ধ হন এবং খৃষ্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে ৮০ বছর বয়সে কুশীনগরে মহাপরিনির্বাণ লাভ। যে কোন মহাপুরুষের জীবনে এ রকমের ঘটনা বিরল। এই পূর্ণিমা বৌদ্ধদের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব। বৌদ্ধরা সারাবছর এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে।
দিনের শুরুতে নগরীতে বর্ণাঢ্য শান্তি শোভাযাত্রা করে বৌদ্ধ র্ধমাবলম্বীরা। আবালবৃদ্ধবনিতা সকালে ¯œান শেষে নতুন বস্ত্র পরিধান বা পরিচ্ছন্ন পোশাকে বৌদ্ধ বিহারে যায়। বুদ্ধপূজার সামগ্রী, বিভিন্ন দানীয় বস্তু ও ভিক্ষুদের জন্য খাবার অর্পণ করেন। মন্দিরে প্রদীপ প্রজ্জ্ব¡লন, পূজা ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। অহিংসা, সা¤প্রদায়কিতা, অন্ধকার দূর করে সকল মানুষের কল্যাণে সমবেত প্রার্থনা করেন। অর্চনার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ করেন। দুপুরে থাকে ধর্মীয় সভা। সন্ধ্যায়ও বৌদ্ধরা মন্দিরে প্রদীপ প্রজ্জ্ব¡লন ও প্রার্থনা করেন।
ভালো কাজ সবসময় কর। বারবার কর। মনকে ভালো কাজে নিমগ্ন রাখো। নিজকে নিয়ন্ত্রণ কর। আড়াই হাজার বছর আগে এমন বাণী শুনিয়েছিলেন মহামতি বুদ্ধ। হিংসাকে বিসর্জন দিয়ে শান্তির জন্য কাজ করার আহবান জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর মূলমন্ত্র- জগতের সকল প্রাণি সুখী হোক।
বুদ্ধ বলছেনে, জগতে কর্মই সব। মানুষ তার কর্ম অনুসারে ফল ভোগ করবে। ভাল কাজ করলে ভাল ফল এবং খারাপ কাজের জন্য খারাপ ফল পাবে। কর্মানুসারে মানুষ অল্প আয়ু, দীর্ঘায়ু, জটিল ব্যাধিগ্রস্ত, নিরোগ, বিশ্রী-সুশ্রী, সুখী-দুঃখী, উঁচু-নিচু, জ্ঞান-মুর্খতা ইত্যাদি প্রাপ্ত হয়। মানুষ কর্মের অধীন। এদিনে সংবাদপত্রে বুদ্ধের জীবন ও বাণী সম্বলিত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, বেতার টেলিভিশনে থাকে বিশেষ অনুষ্ঠান। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদান করেন এবং তাদের সরকারি বাসভবনে বৌদ্ধদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। আজ সরকারি ছুটি। আজ সা¤্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশের ত্রিশলক্ষ বৌদ্ধ নরনারী দেশের আড়াই হাজার বৌদ্ধ বিহারে এই উৎসব পালন করছে। এদেশের বৌদ্ধধর্ম সুপ্রাচীন, গৌতমবুদ্ধের জীবদ্দশায় বাংলাদেশে এই ধর্ম প্রচারিত হয়। স্বয়ং বুদ্ধ বাংলাদেশের পুন্ড্রবর্ধনে (বগুড়া) এসেছিলেন এবং শিষ্যসমেত তিনমাস অবস্থান করেছিলেন। গৌতমবুদ্ধ ভারতের বিভিন্ন স্থানে ৪৫ বছর ধর্মপ্রচার করেছিলেন। তার বাণী ও উপদেশগুলো ত্রিপিটকে লিপিবদ্ধ আছে। তার বাণীর প্রধান দিক হলো মৈত্রী। তিনি বলেছেন, সকল মানুষ সমান, মানুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নাই। তিনি মানুষের কল্যাণ কামনা করেছেন। কেবল মানুষ নয় সকল জীবের সুখ ও মঙ্গল চেয়েছেন।