
বাংলাদেশের তরুণদের মেধা ও শ্রমকে যথাযথভাবে ব্যবহারের মধ্যদিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধের স্বপ্ন দেখেছিলেন নিহত ইনকিলাব মঞ্চের সাবেক মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে কী করতে চান, কী নিয়ে স্বপ্ন দেখন—সে সব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছিলেন।
ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচিত হলে চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন ওসমান হাদি। তিনি বলেছিলেন, ‘একটা কথা বলে রাখি ঢাকা আটের কোনো প্রান্তে চাঁদাবাজি হবে না এটা আমি বলে রাখছি।
সিন্ডিকেটটা তো অনেক বড়, সব আমি বন্ধ করতে পারব কিনা জানি না। তবে কিছু কাজ করব।’
চাঁদাবাজি প্রতিরোধে প্রথম কাজের কথা বলতে গিয়ে আপসহীন হাদি বলেছিলেন, ‘নাম্বার ওয়ান ঢাকা আটের একটা সবজিওয়ালা-ভ্যানওয়ালার কাছ থেকে যদি কেউ চাঁদা তোলে, আমি ওসমান হাদি সেটা শুনলে আমার টিম নিয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড়াব। তার কাছ থেকে চাঁদা তুললে আমার গায়ে হাত দিয়ে তারপর চাঁদা তুলতে হবে।
আর যদি অনেক রাঘববোয়াল হয়, যিনি নিজে যান না, তার লোক পাঠান, তাহলে তার নামটা তো জানব।’
দ্বিতীয়ত চাঁদাবাজদের সিন্ডিকেটের তথ্য পাবলিক করে দিতে চেয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘যেই রাঘববোয়ালরা তাদের ছানাপোনা পাঠিয়ে চাঁদাবাজি করাবেন, ঢাকা আটের মধ্যে, আমি সংসদে দাঁড়াইয়া বিসমিল্লাহ বইলা প্রত্যেকের নাম প্রকাশ করে দেব। এরপরে যা আছে কপালে আমার হবে, এইটা আমি করবই।’ তিন নম্বরে তিনি ঢাকা-৮ কেন্দ্রিক বিভিন্ন হাসপাতাল ঘিরে গড়ে ওঠা চিকিৎসা সিন্ডিকেটও ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলেন।
হাদি বলেছিলেন, ‘পুরো বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার হাব হলো শাহবাগ। শুধু ঢাকা আটের না, পিজি, বারডেম, ঢাকা মেডিকেলে এমনভাবে সিন্ডিকেট করে রাখা হয়েছে, চিকিৎসাতো চিকিৎসা, আপনি মরে গেলেও আপনার লাশটা নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স সিন্ডিকেট করা হবে। আপনার কাছে চাওয়া হবে ২০ হাজার টাকা। ওই টাকার কমে যদি কেউ ১৫ হাজারে যেতে চায়, আপনার মরদেহ অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয় না।’
নিজের পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি চিন্তা করেন কেমন দেশে আমরা আছি।
আমি ইনকিলাব মঞ্চের ভাই এবং ঢাকা আটের তরুণ বন্ধুদের নিয়ে ভলান্টিয়ারি টিম করব। চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মানুষকে ভলান্টিয়ার সার্ভিস দেবেন তারা। এর ফলে কোনো সিন্ডিকেট ব্যবসা এই হসপিটাল জোনে চলবে না। অনেক অসুস্থ মানুষ আসেন কোন ডিপার্টমেন্টে যাবেন, তারা বোঝেন না। তাদের সাপোর্ট করার মতো কেউ পুরো কান্ট্রিতে নেই। আমরা বুথ স্থাপন করব এবং তাদের একদম ওই হাসপাতালের নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়াসহ চিকিৎসার প্রতিটি ধাপে আমাদের ভলান্টিয়াররা সহায়তা করবে।’
স্বপ্নবাজ তরুণ হাদি বলেছিলেন, ‘আপনাদের অনেক বড় বড় স্বপ্নের কথা শোনাতে পারি। কিন্তু আমি ওসমান হাদি আবারও বলি, আমি যেটা বলি ইনশাআল্লাহ আমি ওইটা করার জন্য বলি বা যেটা বলি ওইটা করি। আমি এখন পর্যন্ত আমার ক্যাপাসিটিতে যেটা করতে পারব এটুকু বললাম। বাকি ইনশাআল্লাহ আরো অনেক কিছু করব।’
তরুণরা এগিয়ে এলে চলমান রাজনৈতিক ধারা চাপে পড়বে জানিয়ে এই বিপ্লবী প্রাণ বলেছিলেন, ‘আমি আপনাকে শুধু এইটুকু বলি, যদি আল্লাহ আমাকে এমপি বানায়, বাকি ২৯৯ জন এমপি তার ভোটারদের কাছে ইনশাআল্লাহ পরবর্তী নির্বাচনে চাপের মুখে পড়বেন। তারা শুনতে বাধ্য হবেন যে, এই ছেলেটা এইটা এইটা পারলে আপনারা কেন পারলেন না?’
এমন শত স্বপ্ন নিয়ে মাটির ঘরে আজ (শনিবার) চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন শরিফ ওসমান হাদি।
পূর্বকোণ/পারভেজ