
বীর ওসমান হাদি, তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসিনি এখানে। তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছ এবং চিরদিন বাংলাদেশ যত দিন আছে, তুমি সকল বাংলাদেশির বুকের মধ্যে থাকবে। এটা কেউ সরাতে পারবে না।
আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজার আগে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ কথাগুলো বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা আজকে তোমাকে প্রিয় হাদি, বিদায় দিতে আসিনি। আমরা তোমার কাছে ওয়াদা করতে এসেছি, তুমি যা বলে গেছ, সেটি যেন আমরা পূরণ করতে পারি।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, হাদি এমন এক মন্ত্র কানে দিয়ে গেছে, যা দেশের মানুষ কোনো দিন ভুলতে পারবে না। চিরদিন কানে বাজতে থাকবে। বড় মন্ত্র হিসেবে জাতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। হাদির মন্ত্র ছিল, চির উন্নত মম শির। সেই শির কখনো নত হবে না। সেই মন্ত্র সব কাজে প্রমাণ করা হবে। বাংলাদেশ দুনিয়ার কাছে মাথা উঁচু করে চলবে, কারও কাছে মাথা নত করবে না। সেই মন্ত্র পূরণ করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘প্রিয় হাদি, তুমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলে। এবং সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে নির্বাচন কীভাবে করতে হয়, তারও একটা প্রক্রিয়া জানিয়ে গেছ আমাদের।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ওসমান হাদির খুনিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। খুনি, পরিকল্পনাকারী, সহায়তাকারীসহ পুরো চক্রকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সচিবকে পদত্যাগ করতে হবে।
আজ বেলা ২টার পর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখো মানুষ অংশ নেন।
জানাজায় প্রধান উপদেষ্টার পাশে ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ও দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। ওসমান হাদির মরদেহ গতকাল শুক্রবার সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আনা হয়। রাখা হয় জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের মর্গে।
শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
পূর্বকোণ/পারভেজ