চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের জন্য দরজা বন্ধ করছে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

অনলাইন ডেস্ক

৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ১০:৩৫ অপরাহ্ণ

ভিসা অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর নিয়মের কারণে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আবেদনকারীদের প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দিচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ফিনান্সিয়াল টাইমস। 

দেশটির কমপক্ষে নয়টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘উচ্চ ঝুঁকির’ দেশগুলো থেকে ভর্তি কার্যক্রম সীমিত করেছে। তারা জানিয়েছে, তাদের ওপর প্রকৃত শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত করার চাপ বেড়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশ্রয় প্রার্থনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত এসেছে।

এর জেরে সীমান্ত নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা ঈগল সতর্ক করে বলেন, ভিসা ব্যবস্থা ‘ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের পেছনের দরজা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না’। ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন এনেছে তাদের মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার, যেটি ‘সম্প্রতি ও অপ্রত্যাশিতভাবে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার বেড়ে যাওয়ার’ কথা উল্লেখ করে ২০২৬ সালের শরৎকাল পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে ভর্তি স্থগিত করেছে।

ইউনিভার্সিটি অব উলভারহ্যাম্পটন পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে স্নাতক পর্যায়ের আবেদন গ্রহণ বন্ধ করেছে, আর ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডন পাকিস্তান থেকে ভর্তি স্থগিত করেছে।এ ছাড়া সান্ডারল্যান্ড ও কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ও পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভর্তি স্থগিত করেছে।

ইউনিভার্সিটি অব সান্ডারল্যান্ড জানিয়েছে, শিক্ষার্থী ভিসা ব্যবস্থার ‘অখণ্ডতা রক্ষার’ স্বার্থে কঠোর অবস্থান নিতে তারা ‘কোনো ধরনের ক্ষমা চাইবে না’।চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিনটি ‘বেসিক কমপ্লায়েন্স অ্যাসেসমেন্ট’ (বিসিএ) সীমা পরিবর্তন করেছে, যা শিক্ষার্থী স্পন্সর লাইসেন্স ধরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পূরণ করতে হয়। এই সংস্কার যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতির একটি বৃহত্তর পরিবর্তনের অংশ, যার উদ্দেশ্য ব্যবস্থার অপব্যবহার ঠেকানো এবং নিট অভিবাসন কমানো—যা এখন চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

 

সেপ্টেম্বরে কার্যকর হওয়া নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের ভিসা আবেদনের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ প্রত্যাখ্যাত হবে, যা আগে ছিল ১০ শতাংশ। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী ভিসা আবেদনের গড় প্রত্যাখ্যানের হার (ডিপেনডেন্ট বাদে) ছিল যথাক্রমে ১৮ শতাংশ ও ২২ শতাংশ—যা নতুন সীমার অনেক ওপরে।এই দুই দেশই ওই সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়া মোট ২৩ হাজার ৩৬টি আবেদনের অর্ধেকের জন্য দায়ী।

 

পাকিস্তান ও বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে আশ্রয়প্রার্থনার আবেদনও বেড়েছে—যাদের বেশিরভাগই কাজ বা পড়াশোনার ভিসায় যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন।আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষা পরামর্শক ভিনচেনজো রাইমো বলেন, এই ধরপাকড় কম ফি নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি ‘বাস্তব সংকট’ তৈরি করেছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক ভর্তি ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।তিনি বলেন, ‘সমস্যাযুক্ত মামলার সংখ্যা অল্প হলেও তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিসিএ সীমা মানার সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের ভর্তি নীতিতে পরিবর্তন এনেছে।

 

ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ার, যেটিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান’-এর আওতায় এনেছে যেখানে আরো কঠোর অনুবর্তিতা পরীক্ষা চালু আছে, তারা ‘দীর্ঘ ভিসা প্রক্রিয়াজাতকরণ সময়’-কে দায়ী করে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভর্তি স্থগিত করেছে।

 

ফিন্যানশিয়াল টাইমসের দেখা একটি স্মারকে, গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান ইউনিভার্সিটি—যেটিও একটি অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায়—জুলাই মাসে কর্মীদের জানায়, তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ায় ‘সাময়িক পরিবর্তন’ আনতে হবে। সেখানে সতর্ক করে বলা হয়, নতুন ‘কঠোর’ সূচকের কারণে ‘কিছু না করে বসে থাকা কোনো বিকল্প নয়’।তারা সেপ্টেম্বর সেশনের জন্য কয়েকটি কোর্সে ভর্তি স্থগিত করলেও জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া কোর্সগুলোর জন্য তা পুনরায় চালু করা হয়েছে বলে এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।

 

অক্সফোর্ড ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া স্নাতক কোর্সে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভর্তি স্থগিত করেছে, ‘ভিসা প্রক্রিয়াজাতকরণ সময়’-এর কথা উল্লেখ করে। তারা জানিয়েছে, ওই বছরের সেপ্টেম্বরের জন্য আবেদন আবার গ্রহণ করা হবে।

 

বিপিপি ইউনিভার্সিটি, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ‘ঝুঁকি কমানোর’ কৌশলের অংশ হিসেবে পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।

 

গত গ্রীষ্মে লন্ডন মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি নিশ্চিত করেছে যে তারা বাংলাদেশ থেকে ভর্তি বন্ধ করেছে, জানিয়ে যে দেশটি থেকে তাদের মোট ভিসা প্রত্যাখ্যানের ৬০ শতাংশ আসে।মে মাসে প্রকাশিত সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২২টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নতুন কঠোর বিসিএ মানদণ্ডের অন্তত একটি শর্ত পূরণে ব্যর্থ হবে।

 

ঝুঁকির মধ্যে থাকা ১৭টি প্রতিষ্ঠান তাদের অনুবর্তিতা বাড়িয়ে শিক্ষার্থী স্পনসর করার অধিকার ধরে রাখতে পারলেও, পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অন্তত এক বছরের জন্য সেই অধিকার হারাবে—যার ফলে আনুমানিক ১২ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী প্রভাবিত হবে।

 

ইউনিভার্সিটিজ ইউকে ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক জেমি অ্যারোজস্মিথ বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠানকে তাদের শিক্ষার্থী উৎস বৈচিত্র্যময় করতে হবে এবং আবেদন ও আমানত নীতিতে উন্নয়ন আনতে হবে, যাতে তারা নতুন নিয়ম মানতে পারে।

 

তিনি বলেন, কঠোর নিয়ম ‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চ্যালেঞ্জিং’ হতে পারে, তবে জনসাধারণের আস্থা বজায় রাখতে এগুলো প্রয়োজনীয়।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ‘অত্যন্ত মূল্য দেয়। সেই কারণেই আমরা নিয়মগুলো কঠোর করছি, যাতে এখানে যারা আসছে তারা প্রকৃত শিক্ষার্থী হয় এবং শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়।’

 

পূর্বকোণ/আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট