চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

আজ বিদ্রোহী কবির ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম

আজ বিদ্রোহী কবির ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী

পূর্বকোণ ডেস্ক

২৭ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

মহা-বিদ্রোহের রণতূর্য বাদক, যৌবনের পূজারী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। দানবীয় বিরাটত্ব নিয়ে বাংলা সাহিত্যের আকাশ যখন পুরোটাই দখল করে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঠিক সেই সময় কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব। সেই আবির্ভাব পর্বেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ধূমকেতু হতে আসেননি, ধ্রুবতারা হতে এসেছেন এবং ধ্রুবতারাই হয়েছেন।

 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাব ও তত্ত্বের জায়গায় প্রেম ও দ্রোহ, নিগূঢ় দর্শনের জায়গায় সাম্য-মানবতার গান গাইলেন নজরুল; পাকা করে নিলেন বাংলা সাহিত্যে নিজের স্থান। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যে যে নামটি উচ্চারিত হয়, সেটি কাজী নজরুল ইসলাম।

 

তিনি শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তার কলম ধারালো তলোয়ারের মতো কাজ করেছে। তার প্রতিটি লেখা ব্রিটিশ শাসনের ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। তিনি বারবার শাসকদের কোপানলে পড়েছেন; নিক্ষিপ্ত হয়েছেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। কিন্তু আদর্শচ্যুত হননি। মাথানত করেননি অন্যায়ের কাছে।

 

কাজী নজরুল ইসলাম শুধু বিদ্রোহী কবি ছিলেন না, ছিলেন মানবতাবাদীও। তার সাম্য ও মানবতাবাদ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দ্যোতনা সৃষ্টি করে। তার আগে বাংলা কাব্যসাহিত্যে এমন মানবতাবাদ ও সাম্যের বাণী আর কেউ শোনায়নি। তিনি যেন মানুষের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে বাংলা সাহিত্য আকাশে উদিত হয়েছিলেন।

 

নজরুল চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ‘ধ্রুব’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেন। এছাড়া তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা করেছেন; ছিলেন সুগায়কও। অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, দোলনচাঁপা, ছায়ানট ইত্যাদি তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা তার উপন্যাস। ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা ইত্যাদি তার বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ।

 

অভাব ছিল নজরুলের চিরসঙ্গী। তিনি জগতের দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে হঠাৎ করেই তার সাহিত্যসাধনা স্তব্ধ হয়ে যায়। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা-গান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অন্যতম প্রেরণা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে নিয়ে আসেন এবং তাকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির সম্মান দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

 

কবি কাজী নজরুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালের ২৫ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো প্রেম, মানবতা ও সাম্যের এ মহান কবি যুগ যুগ ধরে বাঙালির মানসপটে চিরভাস্বর হয়ে আছেন।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট