চট্টগ্রাম রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

মন্তব্য প্রতিবেদন

শুল্ক সঙ্কটের প্রান্তে আশার আলো

ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী, সম্পাদক

২৮ জুলাই, ২০২৫ | ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। ১ আগস্ট থেকে ৩৫% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণায় দেশের তৈরি পোশাক ও চামড়াজাত রপ্তানিখাত যখন গভীর অনিশ্চয়তায়, তখন আসন্ন বৈঠক ঘিরে আশার আলো দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে আলোচনায় যে সম্ভাবনা উঠে এসেছে, ৩৫% না বাড়িয়ে ১৮-২০% এ নামিয়ে আনার, তা বাস্তব হলে অর্থনৈতিক দিক থেকে এটি হবে এক বড় অর্জন। পাশাপাশি বাংলাদেশ যে কঠোর ক‚টনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে।

তবে এই আলোচনার তাৎপর্য শুধু শুল্ক কমানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দায়বদ্ধতা মূল্যায়িত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী, মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনের বিষয়টি এখনও উদ্বেগজনক। তারা ১৩টি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর ও আইনের বাস্তব প্রয়োগ চায়। বাংলাদেশ যদিও ঞজওচঝ, প্যারিস কনভেনশন ও ডওচঙ’র অন্তর্ভুক্ত, বাস্তবায়নে ঘাটতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর হতে পারে।

তবে এতসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও কিছু আশাব্যঞ্জক দিক সামনে এসেছে-

কংগ্রেস ও ব্যবসায়িক মহলের সহানুভূতি:
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু আইনপ্রণেতা ও খুচরা ব্যবসায়ী মনে করেন, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে সেটি মার্কিন বাজার ও ভোক্তার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারা একটি ‘উইন-উইন’ সমাধান চান, যেখানে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

জিএসপি পুনর্বহালের আভাস:
বাংলাদেশের শ্রমনীতি ও সুরক্ষা ব্যবস্থায় সাম্প্রতিক সংস্কার যুক্তরাষ্ট্রে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। এই অবস্থান থেকে ভবিষ্যতে এঝচ সুবিধা আংশিক হলেও পুনরায় চালুর আলোচনা শুরু হতে পারে।

ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গুরুত্ব:
ভারত-প্রশান্ত অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ একটি নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল অংশীদার। এ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে বড় কৌশলগত ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রও চায় না।

সরকারের বাণিজ্য ভারসাম্য উদ্যোগ:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, সয়াবিন, তুলা ও ২৫টি বোয়িং বিমান আমদানির সিদ্ধান্ত বাণিজ্য ভারসাম্য তৈরিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মিরসরাই ইপিজেডে তুলা প্রক্রিয়াকরণের জন্য জমি বরাদ্দ ও বিমান কেনা- এসব উদ্যোগকে আর্থিক ক‚টনীতির নিখুঁত বাস্তবায়ন হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এই মুহূর্তে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ঐক্য, দৃঢ়তা ও বাস্তবতানির্ভর কূটনীতি। সময় খুবই সীমিত, কিন্তু এখনও সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। আসন্ন বৈঠক কেবল শুল্ক নয়, বরং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক দিকনির্দেশক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রকে বাস্তব চিত্রটি যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারে এবং যদি সম্পর্কের কৌশলগত গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্র সঠিকভাবে উপলব্ধি করে, তবে আশার আলো শুধু ক্ষীণ নয়, বরং শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট